দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কারও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে তিনি যেন কোনও ভাবেই চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। আজ, সোমবার সকালে রাণাঘাটের জনসভা থেকে এ বিষয়ে বার্তা দেন তিনি। জানান, ২ কোটি মানুষ সরকারের নতুন প্রকল্প ‘দুয়ারে সরকার’-এ গেছে। নদিয়া থেকে ৯ লক্ষ মানুষ দুয়ারে সরকার শিবিরে এসেছেন। ৯০ শতাংশ মানুষ পরিষেবা পেয়ে গেছেন।
পাশাপাশি তিনি বলেন, “অনেক বড় বড় হাসপাতাল আছে, যারা বলছে এখানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড চলবে না, তাদের বলছি চালাতে হবে।” রীতিমতো নির্দেশের সুরেই এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি উল্লেখ করেন, “জেলার ছোট ছোট নার্সিং হোমগুলো আছে, তাদের বলছি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের পরিষেবা দিতে।”
এখানেই শেষ নয়।
এই নির্দেশ যে কেবল মৌখিক নয়, তাও স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে যে কড়া শাস্তি মিলবে সরকারি নির্দেশ অমান্য করলে, তাও জানিয়ে দেন। তাঁর কথায়, “মনে রাখবেন লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষমতা সরকারের আছে।” এর পাশাপাশি তিনি সাধারণ মানুষকেও বার্তা দেন, কোনও হাসপাতাল যদি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের নিয়ম-মোতাবেক পরিষেবা দিতে না চায় বা এ নিয়ে কোনও রকম টালবাহানা করে, তবে সেই হাসপাতালের বিরুদ্ধে যেন রোগীর পরিবার এফআইআর করে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আপনাদের বলছি, কেউ যদি (কোনও নার্সিংহোম) আপনাদের হেনস্থা করে, তা হলে একটা এফআইআর করবেন। বাকিটা সরকার দেখে নেবে।”
এমনিতেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পকে এখন পাখির চোখ করেছে রাজ্য সরকার। দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পগুলিতেও দেখা গিয়েছে, সবচেয়ে বেশি মানুষ আসছেন স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা নিতেই। ফলে এই পরিস্থিতিতে পরিষেবায় যাতে কোনও খামতি না হয় সে ব্যাপারে তৎপর নবান্ন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে লাইনে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়েছেন গত ৫ জানুয়ারি। নিজেকে ‘সাধারণ মানুষ’ হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। তার পরে এই কার্ডকে যে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের কড়া বার্তা সে কথাকেই স্পষ্টতর করল।
দু’দিন আগেই সমস্ত জেলার জেলাশাসক, সিএমওএইচ, ডেপুটি সিএমওএইচ, হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেখানে তিনিও বলেছিলেন, সরকারের কাছে যেন এমন অভিযোগ না আসে যে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে অথচ নার্সিংহোমে পরিষেবা পাচ্ছেন না। তেমন হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুখ্যসচিব বৈঠকে আরও বলেছিলেন, “যদি কোনও সমস্যা থাকে তাহলে তা মেটাতে হবে। কিন্তু রোগীর পরিষেবা তাতে যেন ব্যাহত না হয়।”
জানা গেছে, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও জেলাশাসকদেরও নবান্নের তরফে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় যাতে আরও বেশি সংখ্যক নার্সিংহোমকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। জেলায় জেলায় স্বাস্থ্যসাথী সংক্রান্ত হেল্প ডেস্ক কী ভাবে বাড়ানো যায় সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ বৈঠকে দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
যদিও স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের শেষ নেই। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী রোজই প্রায় বলছেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হচ্ছে আসলে প্রতারণা। তাঁর কথায়, “ওই কার্ডে রেট চার্টটা দেখেছেন? দাঁত তুলতে ২৫০ টাকা, কিডনি সারাতে ২৪০০ টাকা। কোথাও এই টাকায় চিকিৎসা হয়?”
পরিস্থিতি যখন এমনই তখন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকে সতর্ক করে দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।