এ রাজ্যে নির্বাচন পর্ব শুরু হতেই আর একটা জোরদার বিতর্ক সামনে চলে এল তা হল নির্বাচন কমিশন কী নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করছে?এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ নির্বাচন কমিশন যে ভাবে ভোটের মুখে রাজ্যের একের পর এক উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিচ্ছে তাতে কমিশন যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো,বিশেষ করে বিজেপির কথা মত কাজ করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই কমিশনের দিল্লি অফিসে কড়া চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে কমিশন যে ভাবে একতরফা পুলিশ আধিকারিকদের বদলির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাতে রাজ্য সরাকার মোটেও খুশি নয়,এটা যে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খায় না তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
তবে কমিশনও তাদের পাল্টা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে কমিশন যদি মনে করে যে নিরপেক্ষ ভোট করাতে কোন পুলিশ আধিকারিকের বদলের দরকার আছে তবে তাঁরা তা করতেই পারেন। এ বিষয়ে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ আছে বলেও কমিশন রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে।আসল বিষয়টা মোটেও কমিশন ও সরকারের পারস্পরিক চাপানউতোরের বিষয় নয়,বিষয়টা হল নির্বাচন কমিশন এদেশের একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক সংস্থা,কোনভাবেই যেন সেই সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট না হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অবশ্যই এই সংস্থায় যে বা যারা দায়িত্বে থাকবেন তাদেরকেই নিতে হবে।
নিরপেক্ষতা বজায় রাখাটা কমিশনের একটা গুরু দায়িত্ব সেটা নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না ওঠে তা দেখতে হবে কমিশনের কর্তা-ব্যক্তিদের।কমিশন যে ভাবে ভোট পরিচালনা করবে তার উপর নির্ভর করে আমাদের গণতন্ত্রের ভিত,তাকে কোন ভাবে আলগা হতে না দেওয়া কমিশনের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।নির্বাচনের আগে যে ভাবে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হল তা কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়।আমাদের আশঙ্কা এর ফলে কমিশনের মত একটা সাংবিধানিক সংস্থার দিকেও না কাদা ছুঁড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কোন রাজনৈতিক দল।
রাজনৈতিক দলগুলোরও মনে রাখা উচিত কমিশনের কোন সিদ্ধান্ত যদি কারোর পছন্দ না হয় তাহলেই কমিশনকে পক্ষপাত দুষ্ট বলে অভিযোগের কাঠগড়ায় তুলে দেওয়াটাও দায়িত্ব সম্পন্ন কোন দলের কাজ হতে পারে না।রাজনৈতিক দল তার রীতি মেনে কাজ করবে কমিশন তার রীতি মেনে কাজ করুক এটাই হওয়া উচিত।রাজনৈতিক দল গুলোর উচিত নয় নিজেদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে কমিশনের গায়ে পক্ষপাতিত্বের লেবেল লাগিয়ে দেওয়া।কমিশনকে সম্মান না করতে পারাটা সংবিধানকে সম্মান না করার সামিল এটা সবার মাথায় রাখা উচিত।
এ রাজ্যের আমলা ও প্রশাসন যে অনেক সময়তেই দল ও সরকারের ফারাক ভুলে যায় তা কিন্তু মানুষ একাধিকবার প্রত্যক্ষ করেছে,তাই মুখ্যমন্ত্রী যতোই বলুন পুলিশদের বদলি করে কমিশন বিজেপিকে খুশি করেছে তা কিন্তু সাদা চোখে মানা যায় না,আর তা ছাড়া এ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের সময় প্রশাসন যে ভূমিকা পালন করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এ রাজ্য নিয়ে নির্বাচন কমিশন যদি কিছু কড়া পদক্ষেপ নেয়ও তাতে সেটাকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিতে চাইবে সাধারণ মানুষ।
একবার কেউ ভুল করলে মানুষ মনে করে সে আবার ভুল করবে সেটাই স্বাভাবিক।কমিশন তাই প্রথম থেকেই এ রাজ্য নিয়ে কড়া অবস্থান নিতে চাইছে,সরকারের এটাকে মেনে নিয়ে কমিশনের সঙ্গে সহয়োগিতাই করা উচিত।তাহলে রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে,মানুষ মনে করবে এখানকার সরকার নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় ভোটে জিততে পারে,তা না করে কমিশনের সঙ্গে যুদ্ধ করার কথা ঘোষণা করলে মানুষের সন্দেহ হবে,তারা ভাববে তা হলে হয়তো জোর করে ভোট আদায় করাই শাসক দলের কাজ।
কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করুক,আর রাজনৈতিক দল গুলোও কমিশনের সব নির্দেশ মেনে চলুক,এটাই এদেশের গণতান্ত্রীক রীতির সঙ্গে সাযুয্যপূর্ণ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চয়ই মানবেন কমিশন যেমন তাঁর অফিসারদের বদলি করে দিয়েছে,তেমনি আবার ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর বায়োবিক সিনেমা প্রদর্শনের উপরও বিধিনিষেধ জারি করেছে।
শুধু এ রাজ্যের শাসক দলের অনুগত পুলিশকে বদলি করে প্রধানমন্ত্রীর প্রচার সর্বস্ব সিনেমাকে ছাড় দিলে না হয় বলা যেত কমিশন পক্ষপাতিত্ব করছে,তা কিন্তু কমিশন করে নি,তাই একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গায়ে কালি দেবার চেষ্টা না করাটাই শোভন বোধহয়।