সম্পাদকীয়ঃ দেশের মৈ্ত্রী অটুট থাকুক

0
393

গোটা দেশ জুড়ে এক চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন দেশের মানুষের মধ্যে বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এক বিপন্নতার বোধ তৈরি করেছে।মানুষে মানুষে ব্যবধান ও সন্দেহ তৈরি হলে সুস্থ নাগরিক জীবন বিপন্ন হয়।দেশের সামদ্রীক উন্নয়ন ও প্রগতির পথে বাঁধার সৃষ্টি হয়।বর্তমান ভারতে আর্থিক পরিস্থিতি যে দ্রুততায় নিম্নগামী হচ্ছে তাতে বোঝা যায় দেশ এক সংকটকালীন পরিস্থিতির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

বড়় কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না,বেকারির হার দিনের পর দিন বাড়ছে,তার উপর রয়েছে কর্মসংস্থান থেকে ছাঁটাই হতে থাকা মানুষের ভিড়।আর এই সমস্ত বিপদকে এড়িয়ে উঠে আসছে দেশ জুড়ে বিভাজনের উত্তেজনা।নাগরিকত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে ধর্ম পরিচয়ের যে মাপকাঠি তৈরি করতে চাইছে বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসক দল তাতে গোটা দেশ দুড়ে এক অস্থির,উত্তেজনাকর পরিস্থির উদ্ভব হঙয়াটা বোধহয় স্বাভাবিকই ছিল।

কেউ কেউ ইতিমধ্যেই অভিযোগ করতে শুরু করে দিয়েছেন যে বর্তমান ভারতে চারকি বাসস্থান শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দু-মুসলমানের এই বিভেদকে নতুন করে উসকে দিতে চাইছে।কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ একেবারে এককথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেই আমরা মনে করি।

কেননা মাত্রাতিরিক্ত জনসমর্থন নিয়ে সরকার গড়ার সুযোগ পেলেও বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার দেশের গরীব মানুষের উপকার,দলিত অবহেলিত মানুষজনদের জীবনের মান উন্নয়ন নিয়ে কোন সদর্থক উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করে নি।প্রথম থেকেই এই শাসক চেয়েছে হিন্দু ও মুসলমানের ব্যবধান চিহ্নিত করে গোটা দেশে সংখ্যা গরিষ্ট ভোটারদের ভোট নিজেদের পক্ষে নিশ্চিত করতে।

মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা,তাদের বেঁচে থাকার লড়াই,তাদের জীবন সংগ্রামকে একটু সহজ স্বাভাবিক করার তারনা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আমরা সে ভাবে দেখিনি।বর্তমান বিজেপি সরকার বার বার এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছে যাতে মনে হতে পারে অযোধ্যায় রাম মন্দির করা,আর গোটা দেশ জুড়ে হিন্দুত্বের জয়গান করলেই দেশ জুড়ে সুশাসন দেওয়া সম্ভব।তারা ভুলে গেছে মানুষের ভগবান ভক্তি ও ধর্ম ভক্তি তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতির বিষয়,সেটাকে সামাজিক স্তরে এনে রাজনীতি করা দেশের সরকারের কাজ হতে পারে না।

সেটাকেই বার বার সামাজিক বিষয় হিসেবে টেনে এনে বিজেপি মানুষের অনুভূতি নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়ে এখন গোটা দেশ জুড়ে এক উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছে।দেশভক্তি বা জাতীয়তাবাদ আর হিন্দুত্ব যে এক জিনিস নয়,সংকীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে বিজেপির নেতারা সেটাও ভুলিয়ে দিতে চেয়ে এক বিপদকে গোটা দেশ জুড়ে ডেকে নিয়ে এসেছে।

সরকারের দায়িত্ব নাগরিকের খাওয়া পড়া,বাসস্থান,শিক্ষা,স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবা,ধর্মনিরপেক্ষ সরকার কেন নাগরিকের ধর্ম ভাবনার ঠিকা নেবে? এ প্রশ্নের একটাই উত্তর নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহরা সরকার চালালোর মত যথেষ্ট প্রাজ্ঞ ও সচেতন এখনও হয়ে উঠতে পারেন নি।তাই এদের শাসনে গোটা দেশ জুড়ে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যাতে মনে হচ্ছে দেশের মৈত্রীর বন্ধন যেন ক্রমেই আলগা হয়ে যাচ্ছে।

তবু আশার কথা দেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ এক সঙ্গে হাতে হাত রেখে মৈত্রীর বন্ধন অটুট রাখতে পথে নেমেছেন।নাগরিকা বিচারে ধর্ম নয়,মনুষ্যত্বই হোক মাপকাঠি এই দাবি করছেন দেশের অগণিত ছাত্র ও নাগরিক সমাজ।দেশের কোণে কোেণে প্রতিবাদ ধ্বণিত হচ্ছে,হাতে হাত রেখে মানব বন্ধন তৈরি করছেন মানুষ।

আমরাও দেশের সরকারকে অনুরোধ করবো মানুষের প্রতিবাদকে বিরোধী চক্রান্ত না ভেবে তাদের বিরুদ্ধ স্বরকে মান্যতা দিতে শিখুন।আর সমস্ত প্রতিবাদীদের জন্য আমাদের বক্তব্য প্রতিবাদ করুন কোন হিংসা আর হানাহানির রাস্তায় না গিয়ে শান্তি ও অহিংসার যে পথ আমাদের গান্ধীজি দেখিয়েছেন সেই পথেই এদেশের মৈত্রীকে অটুট রাখার শপথ নিন।এ দেশের দিকে দিকে আন্দোলিত হোক আমাদের জাতীয় পতাকা।

Previous articleপ্রশান্ত কিশোর কি তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন?
Next articleepaper deshersamay.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here