দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে সংসদ ভবনে আয়োজিত যুব উৎসবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বর্তমান রাজনীতির প্রসঙ্গও টেনে আনলেন। তিনি বলেন, ‘একটা সময় সকলেই ভাবত, কেউ রাজনীতিতে গেলে ছেলেটা বিগড়ে গিয়েছে। কারণ রাজনীতি মানেই ছিল ঝগড়াঝাটি, লুঠপাট ও দুর্নীতি। ধারনা হয়ে গিয়েছিল, বাকি সব বদলে গেলেও ক্ষমতার হাতবদল হয় না। কিন্তু আজ আপনারা দেখুন, সৎ মানুষরাও আজ রাজনীতিতে জায়গা করে নিচ্ছেন। সততাই আজ রাজনীতির প্রথম শর্ত। এতদিন যারা দুর্নীতিতে ডুবে ছিল, তাঁরা সেই কালি আজও মুছতে পারছেন না।’

এখানেই শেষ নয়, প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘স্বামীজির জীবনে প্রভাবিত হয়ে অনেকেই সংগঠন করেছেন, আর সেই সব সংগঠন থেকে বহু মানুষ বেরিয়ে এসেছেন, যাঁরা অন্যান্যদের পথ দেখিয়েছেন। স্বামীজি বলেছিলেন, নির্ভীক, সাহসী ও উচ্চাকাঙ্খী যুব সমাজই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ তৈরি করে। তরুণ প্রজন্মের ওপর তাঁর এতটাই বিশ্বাস ছিল। তাই তাঁর চিন্তাধারা চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশের যুব সম্প্রদায় সেই কাজ করতে সমর্থ হবে। এমন সময় এসেছে, যখন জন প্রতিনিধিকেও রাজনীতিতে দাঁড়াতে গেলে ‘সিভি স্ট্রং’ হতে হবে। সে কী কী কাজ করেছে, তা দেখবে সাধারণ মানুষ।’

ফের যুব সমাজকে নিজের বার্তা দিয়ে মোদী বলেন, ‘ভারতের যুব শক্তি চাইলে যে সবকিছু করতে পারে, তা আমরা বারবার প্রমাণ পেয়েছি। কারণ তাঁরা স্বামীজির আদর্শে শিক্ষা পেয়েছেন। স্বামীজির দর্শন আজও প্রাসঙ্গিক। করোনা মহামারীর মোকাবিলা করতে গিয়ে তা বারবার বোঝা গিয়েছে।’

যদিও এদিন বিবেকানন্দর প্রসঙ্গ এনে কংগ্রেসকেও তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি দেশ গঠনের পথে একটা বড় একটা বাধা। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশেই একটা সময় লোকে ভোটে লড়তে গিয়ে নিজের পদবি ব্যবহার করতেন, সেই দিন গিয়েছে। কিন্তু এখনও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির এই রোগকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা যায়নি। কিন্তু স্বামীজির আদর্শ মেনেই তা আমাদের করতে হবে।’ একইসঙ্গে নিজের আধ্যাত্মিকতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘স্বামীজি বলেছিলেন, নাস্তিক সেই, যে নিজের প্রতি ভরসা রাখে না।’

মোদী বলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দ আধ্যাত্মিকতা, দেশ গঠন ও জনসেবার যে কথা বলেছেন, তা আজও দেশের মানুষের মনে সদা জাগ্রত থাকে। তিনি আরও একটি অসাধারণ উপহার দিয়েছেন সমাজকে। কী ভাবে একজন আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হয়, কী ভাবে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান চলতে পারে, সব কিছুর উদাহরণ তৈরি করেছেন তিনি।’’

ভোটের মুখে নানা ভাবে বাংলাকে স্মরণ করেছেন মোদী। রাজনৈতিক কারণেই হয়ত বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজের আত্মীয়তা প্রমাণ করার প্রাণপন চেষ্টা করেছেন মোদী ও বিজেপির শীর্ষ নেতারা। স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনেও তাই মোদীর কথার সিংহভাগ জুড়ে রইল স্বামীজি প্রসঙ্গ। মোদী বললেন, ‘‘সময় চলে গিয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু এত বছর পরেও স্বামীজির প্রভাব একইরকম রয়েছে সমাজের বুকে।’’

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের আগে বারবারই মোদী বাঙালি মনীষীদের উদ্ধৃত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে শুরু করে উনিশ শতকের নানা মানুষের কথা উঠে এসেছে তাঁর ভাষণে। সেই পথ দিয়েই এলেন স্বামী বিবেকানন্দও।

১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি নরেন্দ্রনাথ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতেই জাতীয় যুব সংসদের বার্ষিক অনুষ্ঠান হয় এই দিনটিতে। গত বছর থেকেই এই অনুষ্ঠানের সূত্রপাত হয়েছে। মূলত ছাত্র, যুব সমাজের উদ্দেশ্যে মোদী বক্তৃতা করেন এই বিশেষ দিনে। সেই কারণেই মোদীর কথায় এসে পড়ে নতুন শিক্ষা নীতির কথা। তিনি বলেন, এই শিক্ষানীতি দেশ গঠনের কাজে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার লক্ষণ। মোদীর মন্তব্য, ‘‘সমান দিয়ে নতুন সিলেবাসে বিষয়বস্তু নির্বাচন করা হয়েছে। এতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম উপকৃত হবে। আমরা চাই এমন এক দেশ তৈরি করতে যেখানে সাধারণ যুবকদের পড়াশোনার জন্য আর বাইরের দেশে যেতে হবে না৷

জাতীয় যুব সংসদের কথা প্রথম মোদীই বলেন ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালে তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে। ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রয়ারি প্রথমবার এই অনুষ্ঠান হয়। গতবছর, ২০২০ সালে ভার্চুয়ালি এই অনু্ষ্ঠান শুরু হয়। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২.৩৪ লক্ষ প্রতিযোগী এতে অংশ নিয়েছেন৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here