সময়ের চাকা নিশ্চয় ঘুরবে, অপেক্ষা আগামী শারদীয়ার

0
1347

পার্থ সারথি নন্দী: আকাশে তখন সূর্য উঠছে। কাঁসর-ঘণ্টা সহযোগে ঠাকুরদালানে উঠল একচালার প্রতিমা। নাটমন্দিরের সিঁড়ির সামনে বসল ব্যারিকেড। সেই দিকে তাকিয়ে প্রবীণ গৌরশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘‘পঞ্চমীর সন্ধ্যায় বেদিতে ঠাকুর ওঠা বনগাঁর রাখালদাস বন্দ্যোপাধায় বাড়ির দুর্গাপুজোর পরম্পরা। তবে সিঁড়ি বেয়ে দর্শনার্থীদের উঠতে না পারা এ বার প্রথম।’’ প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় কলকাতা থেকে দেশে আসেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। এ বার তাঁদের ভরসা ছিল ভিডিয়ো-কল। এ বছর ফুল ছাড়াই হয়েছে অঞ্জলি।

মণ্ডপে প্রবেশ নিষেধ। তাই প্রতিবেশীদের অনেকেই পুজো দেখতে এসেছিলেন তাঁদের বাড়িতে। আর তাই বাড়িতে ঢোকার মুখেই স্যানিটাইজ়েশন টানেল বসিয়েছিল বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি। সেই পরিবারের এক সদস্য জানালেন, ‘‘পুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই বাড়ি লোকে ভরে যেত। এ বার আত্মীয়েরা তেমন ভাবে আসতে পারেননি। তবে পড়শিদের নিয়েই পুজোটা কাটিয়ে দিলাম।’’ এমন কি করোনা সতর্ককার জেরে কোনও ফোটোগ্রাফারকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি এ বছর৷ প্রায় সময় বন্ধ রাখা হয়েছিল মূলপ্রবেশ দ্বার৷ এবছর পাত পেড়ে খাওয়ার বদলে অষ্টমীর ভোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছেবাড়ি বাড়ি। ‘দূরত্ব-বিধি তো মানতেই হবে। গ্রামের মানুষের কথা ভেবে এবছর বিসর্জনে তাই বাড়ির মহিলা ও শিশুরা থাকবেন না’৷

পুজো শেষ।‌ আজ বিজয়া দশমী। কোভিড পরিস্থিতিতে গৃহ বন্দি থাকতে হচ্ছে প্রায় সকলকেই,তাই বলে কী চিত্র শিল্পীদেরকে আটকানো যায় কখনও! তাঁদের তুলির টানে ফুটে উঠেছে এবারও মৃন্ময়ী দেবীদুর্গার রুপ।কলকাতার যাদবপুরে নিজের ঘরকে স্টুডিও বানিয়ে সেখানেই পুজোর দিনগুলিতে ছবি আঁকলেন মোহিনী বিশ্বাস৷ সেই ছবি পাঠিয়েছেন “দেশের সময়”এর দফপ্তরে। মোহিনীর কথায় ‘মা’কে তুলিতে স্পর্শ করতে পারি, তাই তুলির টানেই মাকে এবারও কাছে পেয়েছি।

রীতি মেনে প্রতিমা নিরঞ্জন আজই। সেজন্য ইতিমধ্যেই গঙ্গা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার নদী ঘাট গুলোতে মোতায়েন কড়া নিরাপত্তা। এই ‘‌নিউ নরমাল’‌ সময়ে সামাজিক দূরত্ববিধি পালনের জন্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কলকাতার গঙ্গার ২৪টি ঘাটে আজ প্রতিমা নিরঞ্জন হবে। জানা গেছে, ১৮০০ প্রতিমা আজ নিরঞ্জন হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন তিন হাজার পুলিশকর্মী। গঙ্গার ঘাট এবং ঘাটে যাওয়ার রাস্তায় ডিসি পদমর্যাদার পুলিশ মোতায়েন থাকছেন। এছাড়াও থাকবেন এসিপি পদমর্যাদার পুলিশ। গঙ্গাবক্ষে স্পিডবোটে চলবে নজরদারি। রিভার ট্রাফিক গার্ড, বিপর্যয় মোকাবিল বাহিনীও থাকবে।

ডিজে বা মাইক এবার নিষিদ্ধ। প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য গাড়ি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ঘাটে যাওয়ার অনুমতিও সকলের নেই। কয়েক জন মাত্র পাবেন অনুমতি। ঘাটে যাতায়াতের জন্য তিনটি লেন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। দু’‌টি যাওয়ার এবং একটি ফেরার। সেখানে দূরত্ববিধি বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট গোল দাগ কাটা রয়েছে। প্রতিমা নিরঞ্জনে আসা প্রত্যেকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ব্যবহার করতে হবে স্যানিটাইজারও। একই নিয়মে উওর ২৪পরগনার টাকি এবং বনগাঁর ইছামতী নদী ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনে কড়া নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করেছে পুলিশ প্রশাসন৷

বনগাঁর ইছামতী নদীর উপর রাখালদাস সেতুতে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মলয় গোস্বামী দূরে থানার ঘাটে একটি নৌকায় এক বনেদি বাড়ীর প্রতিমাকে প্রণাম করে বললেন, ‘‘সময়ের চাকা নিশ্চয় ঘুরবে, আগামী বছর হয়তো আবার হবে!’’ অপেক্ষা আগামী শারদীয়ার৷

Previous articleগভীর সঙ্কটে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,ভেন্টিলেশনে রাখার চিন্তাভাবনা
Next articleআগামী বছর দুর্গাপুজো কবে? দেখে নিন দিনক্ষণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here