দেশেরসময় : গোবরডাঙা,— কালীমায়ের পুজো করলে সন্তান লাভ হবে। স্বপ্নে সেই আদেশ পাবার পর জমিদারের হাত ধরে প্রসন্নময়ী কালী মায়ের পুজোর প্রচলন শুরু হয় গোবরডাঙার জমিদার বাড়িতে।
এলাকার মানুষের কাছে এটি জাগ্রত কালীমন্দির হিসাবেই পরিচিত। দক্ষিনেশ্বর মন্দির স্থাপনের ৩৫ বছর আগে গোবরডাঙার জমিদার বাড়ির কালীমন্দির প্রতিষ্ঠিত বলে দাবি এই পরিবারের।
জানা গেছে, জমিদার ফেলারাম মুখোপাধ্যায় নিঃসন্তান ছিলেন। সেই সময় তিনি একদিন স্বপ্নাদেশ পান যে মায়ের পুজো করলেই তাঁর সন্তান লাভ হবে। স্বপ্নাদেশের পরেই জমিদার বাড়ির সামনে যমুনা নদীতে জমিদার ফেলারাম একটি কোষ্ঠীপাথর পান। এর পর বেনারস থেকে ২ জন কারিগর আনিয়ে বাড়িতেই কালীমায়ের মূর্তি তৈরি করে পুজো শুরু করেন। আর তারপরই ১৭৯৪ সালে তাঁর স্ত্রী পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। কালী মা প্রসন্ন হওয়ায় সন্তানের নাম রাখা হয় কালীপ্রসন্ন। ১৮২২ সাল (বাংলার ১২২৯) থেকে কালিপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় প্রসন্নময়ী কালীমন্দির স্থাপন করে সেখানেই পুজোর সূচনা করেন।
কালীমায়ের সারা গা সোনা–রুপোর গয়নায় ভরা থাকে। আছে রুপোর সিংহাসন। একসময় এই বাড়ির নিয়মে পাঠা বলি হলেও ১৯৯৭ সাল থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। তার বদলে সোয়া এক কিলো চিনি এবং আড়াইশ গ্রাম মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মাকে উৎসর্গ করা হয়। পুজোর দিন রাতে অন্নভোগ দেওয়া হয়। পুজোর শেষে সেই ভোগ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ১৯৭ ধরে একই ভাবে জমিদার বাড়ির নিয়ম মেনে পুজার্চনা হয়ে আসছে।
প্রসন্নময়ী মন্দিরের নামকরনেই বংশের প্রত্যেক পুরুষের নামের সঙ্গে ‘প্রসন্ন’ শব্দটি ব্যবহারের প্রথা চালু হয়।
দুরদুরান্ত থেকে এই মন্দিরে সারা বছর ভক্ত সমাগম হয়। কালীপুজোর দিন আরও বেশি ভক্ত সমাগম হয়। সারারাত মন্দিরে ভক্তদের ভিড় থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই মন্দিরের কালী মা খুব জাগ্রত। মায়ের কাছে মানত করলে তা পূরণ হয়।
বনগাঁয় হিন্দু মহাসভার কালী প্রতিমার প্রস্তুতি চলছে – ছবি- পার্থ সারথি নন্দী।