দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আগেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁকুড়া থেকে শুধু ফেরার অপেক্ষা রয়েছে। তার পর সরকারে বড় কিছু ঘটনাক্রম শুরু হয়ে যেতে পারে।
জানা গিয়েছে, বুধবার বাঁকুড়ার সভা শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় ফিরতেই হুগলি রিভারব্রিজ কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সেচ ও পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার সেই পদে বসানো হল হুগলির সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
হ্যাঁ সেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কয়েকদিন আগে যিনি কারও নাম করে বলেছিলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে মিউনিসিপ্যালিটির বাইরে আলু বেচতিস রে… আলু বেচতিস।’ অনেকেই ধরে নিয়েছিল কল্যাণ শুভেন্দুর কথাই বোঝাতে চাইছেন।
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে শুভেন্দুবাবুকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া পেলে প্রতিবেদনে আপডেট করা হবে।
একই প্রশ্ন করা হয়েছিল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জবাবে তিনি বলেন, “আমাকে এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আমি যতদূর জানি শুভেন্দু অধিকারী নিজেই পদত্যাগ করেছেন। তবে সেটা আমি শুনেছি।”
সরকারের মধ্যে এই পরিবর্তন জানাজানি হতেই শাসক দল তথা রাজ্য রাজনীতিতে হইচই পড়ে গিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, শুভেন্দু অধিকারী তাঁর প্রথম বড় পদক্ষেপ করেই ফেললেন। বর্তমানে তিনি পরিবহণ ও সেচ মন্ত্রী। সেই সঙ্গে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তিনি। তাঁদের মতে, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এর পর ধাপে ধাপে বা এক ধাক্কায় হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ ও মন্ত্রিসভা থেকেও ইস্তফা দিতে পারেননি তিনি।
শুভেন্দুর অনুগামীদের একাংশের দাবি, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘পদ ছেড়ে কথা বলুক’। দাদা বুঝিয়ে দিলেন তাঁর পদের লোভ নেই। তিনি সংগঠন বা সরকার কোনও পদের জন্য লালায়িত নয়। কোভিডের আগে এবং কোভিডের সময়েও তিনি সরকার ও সংগঠন দুয়ের জন্য প্রাণপাত করে কাজ করেছেন। মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গেই তিনি রাজনীতিতে থাকবেন।
তবে রাজ্য রাজনীতিতে এখন মূল কৌতূহলের বিষয় হল শুভেন্দুর রাজনৈতিক পদক্ষেপ কী হবে? তিনি কি তৃণমূলেই থেকে যাবেন, নাকি নিজে পৃথক দল বা মঞ্চ গড়বেন, নাকি বিজেপি বা কংগ্রেসে যোগ দেবেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, শুভেন্দুর তৃণমূল ছাড়া এখন সময়ের অপেক্ষা। কারণ কী? তাঁদের মতে, কারণ পরিষ্কার। যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সে দিন ও সব কথা বলেছিলেন, তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেলিকপ্টারে নিয়ে বাঁকুড়ায় গিয়েছিলেন। তাতেই ইঙ্গিত পরিষ্কার ছিল।
এ বার এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান পদে কল্যাণকে বসানোর পর পরিষ্কার হয়ে গেল, দল হুগলির ওই সাংসদের সঙ্গেই রয়েছে। এর পর তৃণমূলে থাকা শুভেন্দুর পক্ষে মর্যাদার হবে কি! বরং ধরে নেওয়া যেতে পারে এর পর তৃণমূলে থেকে যাওয়া শুভেন্দুর পক্ষেও আনটেনেবল হয়ে গেল।
পরিবহন সূত্রে খবর, শুভেন্দু অধিকারী পদত্যাগপত্র পরিবহন দপ্তর পাঠিয়েছিলেন। এইচআরবিসি পরিবহন দপ্তরের অন্তর্গত। প্রশাসন সূত্রে খবর, তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। শুভেন্দুবাবু ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কারণ চেয়ারম্যান পদ থেকে সরাতে গেলে আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তা করা হয়নি। সরাসরি কল্য়াণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছে এদিন পরিবহন দপ্তর থেকে এ ব্য়াপারে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
যদিও দিন কয়েক আগে শুভেন্দু এক সভায় বলেছিলেন, “আমি এখনও দলের সদস্য। আমি এখনও রাজ্যের মন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে তাড়িয়ে দেননি, আমিও ছেড়ে যাইনি।”
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেও হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি)-এর চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তাঁর পরে ওই পদে বসেছিলেন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। এবং দীনেশবাবুর পর এসেছিলেন শুভেন্দুবাবু।
বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ সিরাজ খান যোগ দেন বিজেপিতে। তিনি শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। নতুন দলে যোগ দিয়ে তিনি জানান, শুভেন্দু অধিকারীর আশীর্বাদ পেয়েছেন তিনি। এই মন্তব্যে নতুন সম্ভাবনা উসকে দিয়েছে। সিরাজ খান বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী আমার ঘনিষ্ঠ ঠিক তা না। কাজ করার সময় উনি আমার নেতৃত্ব। ওঁকে মানতে হবে। আমি শিশিরবাবু-কেও মানি । একটা কাজের জায়গা খুজছিলাম । আমি একজন মৎসজীবী। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে সেখান থেকে কেন আমি হঠাৎ করে বিজেপি দলে এলাম? কাজ করবো বলে। রাজ্য জুড়ে অকৃষি জমিতে মাছ চাষ হবে । উর্বর কৃষিজমি নষ্ট করছে রাজ্য সরকার। সংখ্যালঘু ভাইদের টুপি পরাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী আমাদের নেতৃত্ব ছিলেন, ফোনে এসএমএস করেছি, আশীর্বাদ দেবেন। নিরাপত্তা কর্মী তুলে নিলে নেবে। ভাল ভাবে কাজ করলে মানুষ নিরাপত্তা দেবে। আমার দফতরে কাজ খারাপ হচ্ছিল। ছদ্মবেশে ধরিয়ে দিয়েছি। তারপরেও কোনও কাজ হয়নি৷