দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সংগঠনে ঝাঁকুনি দিতে এবং যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে দিতে জেলায় জেলার সভাপতি পরিবর্তন করে দিল এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল।বিধানসভা নির্বাচনের পরই তৃণমূলে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে শাসক দলে। সেইসঙ্গে বিধানসভা ভোটে জয়ের পরেই তৃণমূলে বড়সড় রদবদল হতে পারে বলেও সম্ভাবনা ছিল। অবশেষে সোমবার তা হল। এক নেতা এক পদ নীতিতেই হাঁটল তৃণমূল। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক,সৌমেন মহাপাত্র,মলয় ঘটক, স্বপন দেবনাথ, পুলক রায় এবং অরূপ রায়–এই ছয় মন্ত্রীকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরানো হল ৷
এমনকি, সংগঠনে ঝাঁকুনি দিতে এবং যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে দিতে বহু জেলার সভাপতিও পরিবর্তনের পাশাপাশি উওর.২৪ পরগনার বনগাঁ শহর তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে ফিরে এলেন বর্ষিয়ান রাজনৈতিক নেতা দিলীপ দাস।
এতোদিন এই পদের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন বনগাঁ প্রাক্তন পুরশাসক শঙ্কর আঢ্য। সোমবার বিকেলে রাজ্য জুড়ে দলের সাংগঠনিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বনগাঁ শহর এবং ব্লকের সাংগঠনিক পরিবর্তনের বিষয়টিও প্রকাশ্যে আসে।
দিলীপ বাবু কথায় কথায় দেশের সময় ‘কে জানালেন, অতীতের বনগাঁর কংগ্রেস বিধায়ক ভূপেন শেঠের হাত ধরেই তাঁর রাজনীতিতে পা-রাখা । এরপর ধীরেধীরে নিজেকে তৈরী করে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল গঠিত হওয়া থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল অর্থাৎ ১০ বছর পর্যন্ত তৃণমূলের বনগাঁ শহর সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন শক্ত হাতে । সেই সময় পুরসভার কাউন্সিলরও হন।
একদিকে রাজনীতি সামলাচ্ছেন অন্যদিকে ট্রাক মালিক সমিতির দায়িত্ব সামলেচ্ছেন বর্তমানে তিনি বনগাঁ মোটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক এবং অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেসের সহ সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এক হাতে৷ এবার রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁকে এই নতুন দায়িত্ব দিল ।তাঁর কথায় তৃণমূল দলটাকে আমি সন্তানের মতো যত্নে রেখেছিলাম আজও রাখব,নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমার অবিভাবক মেনে চলেছি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁকে অনুসরণ করে চলবো।
সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন যুব সমাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর মতো দক্ষ নেতাকে আমি কুর্নিশ করি৷
নতুন দায়িত্ব পেয়ে এদিন তিনি বলেন ,সামনেই পুর নির্বাচন ‘মান অভিমান ভুলে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দলের হয়ে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। ।সকলেই জানেন বনগাঁ শহর অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে গত নির্বাচনগুলিতে সেই হারানো জমি পুণ:রুদ্ধারই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের।’
উত্তর ২৪ পরগনা রাজ্যের সবচেয়ে বড় জেলা। সেই জেলাকে সাংগঠনিক ভাবে ঢেলে সেজেছে তৃণমূল। চারটি সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনাকে। ব্যারাকপুর-দমদম সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে পার্থ ভৌমিককে। তিনি নৈহাটির বিধায়ক। বারাসত জেলা সাংগঠনিক কমিটির সভানেত্রী করা হয়েছে আশানি মুখোপাধ্যায়কে। বসিরহাট জেলার সভাপতি হয়েছেন সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়। বনগাঁর জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আলোরানি সরকারকে।
বনগাঁ শহরের পাশাপাশি বদল হয়েছে ব্লক স্তরেও। নীলদর্পণ ব্লকের নতুন সভাপতি হয়েছেন কালীপদ মন্ডল। গাইঘাটা পূর্ব, গাইঘাটা উত্তর, গাইঘাটা দক্ষীন, গাইঘাটা ২, গোপালনগর ১ ও ২ এবং বাগদা পূর্বের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন যথাক্রমে শ্যামল সরকার, বিপ্লব দাস, তাপস ঘোষ, শ্যামল বিশ্বাস, সৌমেন দত্ত ও নিশিথ বালা এবং পরিতোষ সাহা। সর্বপরি নতুন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি এবং চেয়ারম্যানের দায়িত্ব এখন থেকে সামলাবেন যথাক্রমে আলোরাণী সরকার এবং শঙ্কর দত্ত।
তবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুকে সংগঠন থেকে সরিয়ে দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলেই মত অনেকের। আবার অনেকে বলছেন, এটাই স্বাভাবিক ছিল। কেননা নতুন নেতৃত্ব এলে তবেই সংগঠনে সজীবতা ফেরে। সেটাই করেছে তৃণমূল।
জেলাগুলিকে সাংগঠনিক ভাবে ভেঙেও নেতৃত্ব স্তরে সংখ্যা বাড়িয়েছে তৃণমূল। খানিকটা বিজেপির ধাঁচেই জেলা সাংগঠনিক কমিটিগুলি করেছে বাংলার শাসকদল।