দেশের সময় শীতলকুচির ঘটনায় মুখ খুললেন বিজেপি-তে যোগ দেওয়া সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী। রবিবার এই ঘটনায় দু:খপ্রকাশ করে মিঠুন বলেন, ‘কেন এমনটা হবে? খুবই দু:খিত। চারজন মায়ের কোল খালি হয়ে গেল। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলায় আর দাঙ্গা, সন্ত্রাস, হিংসা হবে না। এটা গ্যারান্টি।’ এই প্রসঙ্গে মিঠুন আরও বলেন,’উস্কানিতে কেন সবাই পা বাড়াচ্ছেন? এইসব জিনিসে পা দেবেন না। এই ফাঁদে পা দেবেন না। কিন্তু, যদি কেউ এমন রাজনীতি করেন, তাহলে কী করতে পারি? আমাদের কোনও নেতা কি উস্কানি দিচ্ছেন? নীতির লড়াই করুন।’
এদিন দত্তপুকুর এবং হাবরায় রোড শো করেন মিঠুন।
হাবরা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহার প্রচারে রবিবার বিকেলে হাবরা শহরে রোড শো করলেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। মহাগুরুকে দেখতে এদিন হাবরায় উপচে পড়েছিল ভিড়। যদিও নির্ধারিত পথ অতিক্রম করার আগেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মিঠুন। তাতে অবশ্য কিছুটা ক্ষুব্ধ হন তাঁর ভক্তরা।
এদিন হাবরা চৈতন্য কলেজের পাশের মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন মিঠুন। সেখান থেকে গাড়িতে করে হাবড়ার চোংদার মোড়ে যান।
এই চোংদার মোড় থেকেই বিকেল চারটে নাগাদ শুরু হয় রোড শো। হুডখোলা গাড়িতে মিঠুনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন হাবরার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহা। এদিন মিঠুন চক্রবর্তীকে দেখতে রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য ভক্ত মিঠুনকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়েন। পাল্টা ভক্তদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান মিঠুন চক্রবর্তীও। রোড শোয়ে পা মেলান এলাকার বিজেপি কর্মী সমর্থকরা।
এই রোড শো এর কারণে এদিন অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে হাবরা শহর। জান নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। চন্দ্রা মোড় থেকে শুরু হওয়া এই রোড শো দু কিলোমিটার এর ব্যবধানের বাণীপুর চৌমাথায় এসে শেষ হবার কথা থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং সময়ের অভাবে মাঝপথে হাবরার জয়গাছি এলাকায় রোড শো থেকে অব্যাহতি নেন মিঠুন চক্রবর্তী। এর ফলে বাকি রাস্তার দু’পাশে অপেক্ষারত মিঠুন চক্রবর্তীর ফ্যানেরা মিঠুন কে না দেখতে পেয়ে হতাশ হয়ে পরেন। বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীর অন্যত্র কর্মসূচি থাকায় তিনি সম্পূর্ণ রোড শোয়ে হাজির থাকতে পারলেন না।
এই ঘটনা ঘিরে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। শীতলকুচিতে গুলিকাণ্ডের ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টার্গেট করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে চারজনের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় এদিন শাহ বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উস্কানি না দিলে এই ঘটনা ঘটত না। বাহিনীকে ঘেরাও করার উস্কানি দেন মমতা। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছেন তিনি। এই চারজনের মৃত্যুর জন্য কি ওঁর দায় নেই? মৃত্যু নিয়ে দু:খপ্রকাশ করেননি মমতা। শোকপ্রকাশেও বিভেদ, তোষণের রাজনীতি করছেন। ‘
এই ঘটনায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘বাংলায় আর দুষ্টু ছেলে থাকবে না। যারা ভেবেছিল কেন্দ্রীয়বাহিনীর বন্দুকটা শুধু দেখানোর জন্যই, কাল তারা বুঝে গেছে ওর ভিতরে থাকা গুলির কী জোর!’ তিনি আরও বলেন, ‘সকালে ভোট দিতে যাবেন। কেউ যদি বাধা দেয় শুনবেন না। মাথায় রাখবেন কেউ বাড়বাড়ি করলে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।’
উল্লেখ্য, শনিবার ভোট শুরু হতেই শীতলকুচির পাঠানটুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ১৮ বছরের এক যুবকের। বেলা গড়াতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। এরপর উত্তেজনা ছড়ায় জোরপাটকি এলাকায়। ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে এলোপাথারি গুলি চলার অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আরও চারজনের।
নির্বাচন কমিশন জানায় সিএপিএফ জওয়ানদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। গোটা ঘটনায় রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কোচবিহারে শীতলকুচিতে গুলিকাণ্ডের পর কড়া পদক্ষেপ করল নির্বাচন কমিশন। আগামী ৭২ ঘণ্টার জন্য কোচবিহার জেলায় কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা প্রবেশ করতে পারবেন না। এমন নিষেধাজ্ঞাই জারি করল কমিশন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজ্য বা দেশের কোনও রাজনৈতিক নেতা ওই জেলায় আগামী তিনদিন ঢুকতে পারবেন না।