দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোভিডের জন্য বড় জনসভা না করার সিদ্ধান্ত সবার আগে ঘোষণা করেছিলেন বামেরাই। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার তাগিদ থেকেই তাঁরা তা করেছিলেন। কিন্তু সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “ওরা পাচ্ছে না, তাই খাচ্ছে না। ওদের সভায় এমনিতেই লোক হচ্ছে না।”
সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার নিজে কোভিডের কথা মাথায় রেখে কলকাতার প্রচারে কাটছাঁট করলেন। তৃণমূল মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন জানিয়েছেন, কলকাতায় আর কোনও কর্মসূচি করবেন না দিদি। শুধু বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন ২৬ এপ্রিল তিনি একটি ‘সিম্বলিক মিটিং’ করবেন। তা হবে বিডন স্ট্রিটে।
ডেরেক আরও জানিয়েছেন, অন্যত্র তৃণমূল নেত্রী যে কটা সভা করবেন তা হবে ছোট। আধঘণ্টার কম সময়ে বক্তৃতা শেষ করবেন দিদি। এখনও তিন দফার ভোট বাকি।
তাতে রয়েছে কলকাতার দু’দফা ভোটও। দক্ষিণ কলকাতার ভোট ২৬ এপ্রিল। আর উত্তর কলকাতায় ভোট ২৯ এপ্রিল। এ ছাড়াও বাকি আছে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পশ্চিম বর্ধমান, দুই দিনাজপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার আংশিক ভোট।
তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত শোনার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বামেরা। কলকাতা জেলা কমিটির নেতারা বলছেন, এবার নিশ্চয়ই তৃণমূলও পাচ্ছে না, তাই খাচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে গিয়েছেন, মানুষ তৃণমূলকে আর নিতে চাইছে না। তাই সভা কমাচ্ছেন। কোভিডের কারণে সভা ছোট করতে হলে উনি অনেক আগেই তা করতেন। সিপিএম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, কোভিডের সময়ে মিষ্টির দোকান, ফুলের বাজার খোলা রাখা, কোভিডের তথ্য গোপন করা থেকে শুরু করে এই জমানায় কম অনাচার হয়নি। এখনও ভেক ধরে লাভ হবে না।
কলকাতা এমনিতে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। বন্দর, চৌরঙ্গী, বেলেঘাটার মতো আসনে সংখ্যালঘু ভোটে তৃণমূলের জনভিত্তি পোক্ত। এই সব আসনে তৃণমূল জেতার ব্যাপারে ষোল আনা আত্মবিশ্বাসী। গেরুয়া শিবিরের মতে, বিজেপি নেতারা যাতে কলকাতায় বেশি প্রচার করতে না পারেন, সে জন্যই মমতার এই কৌশল।
বিজেপি এখানে প্রচার করলে তৃণমূল বলবে কোভিড ছড়াচ্ছে। অথচ কলকাতার মতোই উত্তর চব্বিশ পরগনাতেও কোভিডের সংক্রমণ অতিশয় হারে ছড়িয়েছে। সেখানে মমতা কিন্তু সভা কমাননি। তা ছাড়া মমতা প্রচার না করলেও তৃণমূলের বাকি নেতারা কলকাতায় প্রচার বন্ধ রাখবেন ব্যাপারটা এমনও নয়।
ষষ্ঠ দফার ভোট প্রচারের শেষ দিন সোমবার। সন্ধ্যা সাতটায় ষষ্ঠ দফার ভোটের প্রচার শেষ হবে। এই দিনটিতে রাজনীতির প্রায় সব কুশীলব রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রচার চালাবেন। এই তালিকায় যেমন থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সাংসদ ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তেমনই বিজেপির তালিকায় নাম রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার। পিছিয়ে নেই সংযুক্ত মোর্চার নেতারাও। তবে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বড় জমায়েত বা রোড শো না করার কথা ঘোষণা করার পর সংযুক্ত মোর্চার নেতারা প্রচার করবেন নেটমাধ্যমে এবং ছোট ছোট সভা ও বৈঠকের মাধ্যমে।
নেট মাধ্যমে উত্তর ২৪পরগনার গাইঘাটার নির্দল প্রার্থী সজল বিশ্বাস প্রচারে ঝড় তুলছেন৷গাইঘাটা বিধানসভা কেন্দ্রের ভারতীয় জনসংঘ সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ডাক্তার সজল বিশ্বাস এর প্রচার এখন তুঙ্গে। গাইঘাটা থানার মানিকহীরা এলাকার বাসিন্দা ডাক্তার বিশ্বাস এখন দিন রাত এক করে এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন।
এই বিধানসভা এলাকার গোটাটাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশই কৃষিজীবী মানুষ। এই বিধানসভা এলাকার মধ্যেই ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ি যেটি মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের অন্যতম তীর্থস্থান। ডাক্তার সজল বিশ্বাস একসময় বিজেপির সক্রীয় কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত থাকার কারণে তিনি এবারের নির্বাচনে গাইঘাটা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হবেন বলে দাবি জানিয়েছিল এলাকার মানুষ। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত ঠাকুরবাড়ির সদস্য তথা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের বড় ছেলে সুব্রত ঠাকুরকে প্রার্থী করেছে।
এই কারণে এলাকার একাংশের বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষের দাবি মেনেই ভারতীয় জনসংঘ এর সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েন সজল বিশ্বাস। পেশায় চিকিৎসক এই নির্দল প্রার্থীর প্রতীক চিহ্ন স্টেথোস্কোপ। তাঁর সমর্থনে এলাকায় ঘুরছে প্রচুর ট্যাবলো।
হাত জোড় কড়া ছবি দিয়ে সাজানো সেই ট্যাবলো গ্রামের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে ছুটছেন ডাক্তারবাবুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের দোড়ে দোড়ে গিয়ে বোঝাচ্ছেন কেন তারা তাঁকে ভোট দেবেন। সজল বিশ্বাস এর কথায়, ‘আমি পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষের প্রতিনিধি।
উন্নয়নে তাদের পাশে থাকার স্বার্থে আমি সরকারি চাকরি ছেড়ে রাজনৈতিক ময়দানে নেমেছি। এলাকায় ঘুরে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আমি অবশ্যই এই লড়াইয়ে জয়ী হব।’
কোভিড আবহে নির্বাচন কমিশন ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। তাই সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় প্রচারে যবনিকা পড়বে। পঞ্চম দফার প্রচারের ক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচার করতে পেরেছিল দলগুলি। কিন্তু ষষ্ঠ দফার ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে না। এই দফায় মোট ৪৩টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, বর্ধমান জেলা গ্রামীণের যে সমস্ত আসনে ভোট বাকি রয়েছে তা হবে ২২ এপ্রিল।
আজ সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোট চারটি জনসভা করবেন। পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডবেশ্বরে বিজেপি প্রার্থী জিতেন্দ্র তিওয়ারির হয়ে প্রথম জনসভা করবেন অমিত। সভাটি করেই দুর্গাপুরের অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে বিশেষ বিমানে যাবেন উত্তর দিনাজপুরে। সেখানে চাকুলিয়া বিধানসভায় তাঁর জনসভার রয়েছে। এর পর কালিয়াগঞ্জ আরও একটি জনসভা করবেন তিনি। উত্তর দিনাজপুরের জোড়া জনসভা সেরে যাবেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে। সেখানে একটি বড় জনসভা করার কথা তাঁর। আবার উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে প্রার্থীর সমর্থনে একটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি। সেখান থেকে বিশেষ বিমানে তিনি আসবেন বীরভূমে। পর পর তিনটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন সেখানে। সাঁইথিয়ার বিজেপি প্রার্থীর হয়ে একটি রোড শো-তে অংশ নেবেন তিনি। সেখান থেকে রওনা হবেন সিউড়ির উদ্দেশে। সিউড়ির বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে একটি জনসভা করবেন নড্ডা। সন্ধ্যায় বোলপুর টাউন হলে সেখানকার বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে বক্তৃতা করবেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সোমবার তিনটি জনসভা করবেন উত্তর দিনাজপুর জেলায়। সকাল ১১টায় প্রথম জনসভা করবেন চাকুলিয়াতে। এর পর সভা হবে যথাক্রমে হেমতাবাদ ও কালিয়াগঞ্জে। ঘটনাচক্রে সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও উত্তর দিনাজপুর জেলার চাকুলিয়াতে একটি জনসভায় অংশ নেবেন। ফলে উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক আবহাওয়া যে দিনভর বেশ কিছুটা উত্তপ্ত থাকবে সে বিষয়ে নিশ্চিত রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা হবে পূর্ব বর্ধমান জেলার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে। প্রথম জনসভাটি হবে কেতুগ্রামে। পরের তিনটি সভা যথাক্রমে হবে মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম ও ভাতারে।
করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাকি সব দফায় ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তা ছাড়া প্রচারের সময় নিয়েও কড়া পদক্ষেপ করেছে কমিশন। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সন্ধে ৭ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত কোনও প্রচার কর্মসূচি করা যাবে না।