দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ২০১০ সালের ২৮ মে, পশ্চিম মেদিনীপুরে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। সেই মৃতের তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণ এবং সরকারি চাকরি দুই-ই ভোগ করার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের নাম অমৃতাভ চৌধুরী। শনিবার কলকাতার জোড়াবাগান এলাকা থেকে ভুয়ো নথি, ডিএনএ রিপোর্ট ও ডেথ সার্টিফিকেটের সূত্র ধরে সিবিআই তাকে আটক করে।
রেল জানত জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কলকাতার জোড়াবাগানের বাসিন্দা অমৃতাভ চৌধুরীর৷ এমন কি, ডিএনএ-এর নমুনা মিলিয়ে অমৃতাভর দেহও পরিবারকে তুলে দেওয়া হয়েছিল রেলের তরফে৷ ক্ষতিপূরণ বাবদ অমৃতাভর পরিবার ৪ লক্ষ টাকা পায়৷ ‘মৃত’ অমৃতাভর বোন চাকরিও পেয়েছিলেন রেলে৷ কিন্তু জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনার ১১ বছর পর জানা গেল অমৃতাভ আসলে জীবিত৷ রেলকে ভুয়ো তথ্য দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা এবং চাকরি নেওয়ার অভিযোগে অমৃতাভ এবং তাঁর বাবাকে শুক্রবার রাতে আটক করেছে সিবিআই৷
যদিও জেরায় অমৃতাভর দাবি, সে অমৃতাভ নয়৷ তবে সিবিআই সূত্রে খবর, নিজের ছেলের পরিচয় স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্তের বাবা৷ অমৃতাভর বোন মহুয়া পাঠককে সাসপেন্ড করেছে রেল৷
কিন্তু কীভাবে ঘটল এত বড় প্রতারণার ঘটনা? ২০১০ সালের ২৮ মে পশ্চিম মেদিনীপুরের সরডিহার কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস৷ মুম্বাইগামী ট্রেনটি গভীর রাতে লাইনচ্যুত হওয়ার পর সেটিতে ধাক্কা মারে উল্টোদিক থেকে আসা একটি মালগাড়ি৷ ঘটনায় প্রায় ১৫০ যাত্রীর মৃত্যু হয়৷ অনেক যাত্রীর দেহ এতটাই ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় যে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের শনাক্ত করতে হয়৷
সিবিআই সূত্রে খবর, ওই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন অমৃতাভ৷ ঘটনার পর তিনি মৃত বলে দাবি করে তাঁর পরিবার৷ রেলের তরফে সিবিআই-কে দায়ের করা অভিযোগ অনুযায়ী, সরকারি কর্মী এবং বিমা এজেন্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ভুয়ো ডিএনএ রিপোর্টের মাধ্যমে অমৃতাভকে রেলের কাছে মৃত বলে প্রমাণ করা হয়৷ ডিএনএ ম্যাচিং-এর পর অমৃতাভ বলে যে দেহটি শনাক্ত করা হয়, সেটি অমৃতাভর পরিবারকে তুলে দেওয়া হয়৷ এর পর নিয়ম অনুযায়ী রেলের কাছে ক্ষতিপূরণের টাকা দাবি করেন অমৃতাভর বাবা মিহির চৌধুরী এবং মা অর্চনা চৌধুরী৷ অমৃতাভর বিবাহিত বোন মহুয়া রেলে চাকরি পান৷ বর্তমানে তিনি শিয়ালদহে সিগন্যাল বিভাগে কর্মরত রয়েছেন৷
সিবিআই সূত্রে খবর, অমৃতাভর ঘটনায় সন্দেহ হওয়ায় গত বছর থেকে বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে রেলের ভিজিল্যান্স ডিপার্টমেন্ট৷ রেলের তদন্তেই পরিষ্কার হয়, জ্ঞানেশ্বরীর দুর্ঘটনায় অমৃতাভর মৃত্যু হয়নি৷ তিনি বেঁচে আছেন৷ রেল এবং সরকারকে ঠকিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা এবং চাকরি অমৃতাভর পরিবার হাতিয়ে নিয়েছে৷ তবে এত বছর কীভাবে এই প্রতারণা রেল ধরতে পারল না, বা কীসের ভিত্তিতে এতদিন পর সন্দেহের উদ্রেক হল, তা এখনও জানা যায়নি৷
গত ১৫ জুন গোটা বিষয়টি উল্লেখ করে সিবিআই-এ অভিযোগ দায়ের করেন হয় দক্ষিণ পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্স বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার৷ শুক্রবার রাতেই জোড়াবাগান থানা এলাকার গঙ্গানারায়ণ দত্ত লেনে অমৃতাভর বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই৷ অমৃতাভর সঙ্গে তাঁর বাবাকেও আটক করা হয়৷
দু’ জনকেই নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতরে নিয়ে গিয়ে জেরা শুরু হয়৷ সিবিআই সূত্রে দাবি, ধরা পড়েও অমৃতাভ নিজের পরিচয় স্বীকার করছেন না৷ যদিও মিহির চৌধুরী তাঁর ছেলের পরিচয় স্বীকার করে নিয়েছেন বলেই খবর৷ অমৃতাভর পরিচয় সম্পর্কে নিঃসংশয় হওয়ার চেষ্টা করছে সিবিআই৷ তার পরই তাঁদের গ্রেফতার করা হবে৷ অভিযুক্তের তালিকায় অমৃতাভর মা, বোন ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় সরকারি কর্মীদের নাম রয়েছে৷ অমৃতাভর বোনকে সাসপেন্ড করেছে পুলিশ৷