দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কথা ছিল জেলায় জেলায় যখন টিকাকরণ শুরু হবে তখন জেলা শাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলবেন তিনি। শেষমেশ ভিডিও কনফারেন্সে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন থেকে সেই কনফারেন্স চলাকালীন সংক্ষিপ্ত কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

নবান্নের একটি সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী জেলা শাসকদের বলেছেন, কেন্দ্র খুব কম সংখ্যায় টিকা পাঠিয়েছে। রাজ্যে যে জনসংখ্যা রয়েছে, তার তুলনায় তা নিতান্তই কম। সব মানুষ যাতে টিকা পান তার ব্যবস্থা রাজ্য সরকার আগামী দিনে করবে। তবে দেখতে হবে, টিকাকরণ নিয়ে যেন কোনও গুজব না ছড়ায়।


গুজব যাতে না ছড়ায় সে কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও দেশবাসীর উদ্দেশে এদিন সকালে বলেছেন। এমনিতে টিকা নেওয়া নিয়ে অনেক মানুষের এখনও অন্ধবিশ্বাস রয়েছে। পোলিওর টিকাকরণ করতে গিয়ে কয়েক দশক ধরে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হয়েছিল। তবে কোভিডের টিকা নিয়ে যাতে মানুষের মধ্যে কোনও বিভ্রান্তি না হয় তা নিশ্চিত করতে শনিবার টিকা নিয়েছেন এইমসের প্রধান রণদীপ গুলেরিয়া। সেরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার আদর পুনাওয়ালাও ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, বাংলায় স্বাস্থ্য কর্মী, চিকিৎসক, প্রশাসনিক কর্মী অফিসার, পুলিশ সহ ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কাররা কোভিড মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে কাজ করেছেন তার যত প্রশংসা করা যায় কম মনে হবে। সরকারও তাদের সুরক্ষার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাজ্যে ৮ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করেন। তাদের শরীর, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তাঁর সরকার নিরন্তর কাজ করে যাবে।

রাজ্যে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে টিকাকরণ অভিযান। সাহস জোগাতে টিকাকরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‌টিকা নিন, কোনও ভয় নেই। আমিও নিয়েছি।’‌ কোভিশিল্ডের দু’‌টি ডোজ আগেই নিয়েছিলেন কলকাতার মহানাগরিক। কিন্তু কর্মসূচির শুরুতেই একাধিক টিকাকরণ কেন্দ্র থেকে অভিযোগ এল, কাজ করছে না কেন্দ্রের তৈরি কো–উইন অ্যাপ!‌ 

কেন্দ্র জানিয়েছে, টিকাকরণ অভিযান সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য র‌য়েছে কো–উইন অ্যাপে। নির্দেশ, যাঁদের টিকা দেওয়া হবে, তাঁদের নাম–ঠিকানা সহ অন্যান্য তথ্য ওই অ্যাপে নথিভুক্ত করতে হবে। তা কাজ না করায় রীতিমতো উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাতে–কলমেই তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, অ্যাপ ঠিক হওয়ার পর সেখানে নথিভুক্ত করা হবে। 

রাজ্যে আজ প্রায় ২১২টি কেন্দ্রে টিকাকরণ চলছে। মোট ৬ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। তার মধ্যে আজ ৩২-৩৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী টিকার ডোজ পাবেন। প্রতি কেন্দ্রে ১০০ জন করে স্বাস্থ্যকর্মীর নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে।  রাজ্যে টিকা দেওয়ার মোট ৪০৮৯টি কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজ্যের ২১২টি কেন্দ্রে প্রথম দফার টিকাকরণ শুরু হয়েছে। তার মধ্যে কলকাতায় রয়েছে ১৯টি। প্রত্যেক কেন্দ্রে দিনে ১০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি, কলকাতা পুরসভার ৫টি বরোতেও আজ ভ্যাকসিনেশন হবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের ছাড়পত্র মিললে এরপর প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে টিকাকরণ চালু করবে পুরসভা।টিকাকরণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালেও চলছে টিকাকরণ। বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালের কর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে প্রথম ভ্যাকসিন নেন চিকিত্সক বিপাশা শেঠ।

টিকা নিয়েছেন হুগলির চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় কুমার রায়, চন্দননগর মহকুমার উপ-স্বাস্থ্য আধিকারিক মহুয়া মোহান্তি। জলপাইগুড়িতে প্রথম ভ্যাকসিন নেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মবন্ধু ভরত ডোম। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ, খড়িবাড়ির পাশাপাশি দার্জিলিং ও কার্শিয়াংয়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ৬টি সেন্টারে দেওয়ার হচ্ছে কোভিড টিকা।দক্ষিণ দিনাজপুর ও বীরভূম জেলাতেও শুরু হয়ে গিয়েছে টিকাকরণ। 

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর, বেলেঘাটা আইডি, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন, বিসি রায় শিশু হাসপাতাল এবং ৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে শহরের প্রতিষেধক কেন্দ্র হিসেবে বাছা হয়েছে। প্রয়োজনে টিকাকরণ শিবিরের সংখ্যা বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। তাছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল যেমন, রবীন্দ্রনাথ টেগোর, অ্যাপোলো, ঢাকুরিয়া আমরি ও  টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে টিকাকরণ হবে এদিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here