দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনও রোগী মারা গেলে তাঁর মৃত্যু করোনার কারণেই হয়েছে, নাকি অন্য কোনও কারণে, তা খতিয়ে দেখতে ৩ এপ্রিল বিশেষ কমিটি গড়েছিল রাজ্য সরকার। সেই কমিটিতে এখনও পর্যন্ত ৫৭টি করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা পাঠানো হয়েছে বলে আজ, শুক্রবার বিকেলে নবান্নের প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা।
তিনি জানান, ওই কমিটি জানিয়েছে, ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত করোনার কারণে। বাকি ৩৯ জনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ‘কোভিড পজিটিভটা ইন্সিডেন্টাল ছিল’ বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব। এই ১৮ জনের মৃত্যুর মধ্যে তিনটি জনের মৃত্যু ঘটেছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
অনেকেই মনে করছেন, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আন্তঃমন্ত্রক টিমের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতায় পাঠানোর পরে তাঁরা যে ক্ষণ-ক্ষণে রাজ্য সরকারকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছে, তাতেই এই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার তথা নবান্ন। এত দিন ধরে কখনওই রাজ্যে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জানানো হয়নি নবান্নের তরফে। সবসময়েই বলা হয়েছে অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা, অর্থাৎ এই মুহূর্তে কত জন রোগীর শরীরে করোনার জীবাণু সক্রিয় রয়েছে।
একই ভাবে, মৃত্যুকালে শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকলেও, নবান্ন গঠিত এক্সপার্ট কমিটি যাঁদের মৃত্যুর পেছনে অন্য কারণকে দায়ী ঠাহর করেছেন, সেই সংখ্যাও কখনওই স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে জানানো হয়নি। এবং সেই কারণেই বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে চিকিৎসকের একাংশ বারবার তথ্য গোপনের অভিযোগ করেছে নবান্নের বিরুদ্ধে।
এক্সপার্ট কমিটি জানিয়েছে, করোনা থাকলেও মৃত্য়ুর এই অন্যান্যগুলি হল কিডনির অসুখ, মাল্টিঅর্গান ফেলিওর, লিউকোমিয়া, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ইত্যাদি। এই সবটাই এবং মোট ৫৭ জনের মৃত্যুর ঘটনা কমিটিতে পাঠানোর বিষয়টি আজ, শুক্রবার প্রথম সামনে এল। অনেকেরই মত, কেন্দ্রীয় টিমের উপর্যুপরি চোখা প্রশ্ন ও চিঠির ধাক্কাতেই রাজ্য তা সামনে এনেছে।
মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা অবশ্য বলেন, “না, তা নয়। কেন্দ্রীয় টিমের কলকাতায় আসার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। এক্সপার্ট কমিটির কাছে আমরা একটা কমপাইলড রিপোর্ট অনেক দিন ধরেই চাইছিলাম, আজ ঘটনাচক্রে সেই রিপোর্ট এসেছে আমার হাতে।”
এদিন মুখ্যসচিব আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৫১ জনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই হাওড়ার বাসিন্দা। এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনা অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা ৩৮৫। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১০৩ জন। এ পর্যন্ত সরকারি কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন মোট ১১ হাজার ৫৭৬ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে এখনও আছেন ২৬ হাজার ৭১৬ জন। স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই দেওয়া হয়েছে মোট সাড়ে চার লক্ষ। রাজ্যে মোট স্যাম্পেল টেস্ট হয়েছে ৮ হাজার ৯৩৩টি। তার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় টেস্ট হয়েছে ৯৪৩টি।
রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রথম থেকেই যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তা অস্বীকার করে এসেছে সরকার। বারবারই বলেছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাদের পরিসংখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বারবার বলেছেন, করোনা নিয়ে কোনও তথ্যই কখনও লুকোনো হয়নি। আজ সেই একই সুর শোনা গেল মুখ্যসচিবের গলাতেও। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজ্যের হিসেব ‘খোলা খাতার মতো’। সেখানে কোনও কারচুপি নেই।