দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সারদা মামলায় শর্ত সাপেক্ষে কলকাতা হাইকোর্টে জামিন পেলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। এদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের বেঞ্চ দেবযানীর জামিন মঞ্জুর করেছে। তবে এখনই সুদীপ্ত সেন ঘনিষ্ঠ দেবযানীর জামিন হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।যদিও এখনই জেল মুক্তি ঘটছে না তাঁর৷ কারণ এখনও ওড়িশা এবং অসমে দায়ের হওয়া দু’টি মামলায় এখনও জামিন পাননি সারদার সর্বময় কর্ত্রী দেবযানী৷
প্রসঙ্গত দেবযানী ছিলেন সারদার সদর দফতর মিডল্যান্ড পার্কের রিসেপসনিস্ট। তারপর সারদা মালিক সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কারণে সোজাসুজি কোম্পানির ডিরেক্টর হয়ে যান দেবযানী।
সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের পর সংস্থায় সবথেকে ক্ষমতাবান ছিলেন দেবযানী৷ সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল সুদীপ্ত সেনের সঙ্গেই কাশ্মীর থেকে ধরা পড়েন দেবযানী৷ ২০১৪ সালে সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়৷ গ্রেফতারির পর থেকেই জেলে রয়েছেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়৷ গোটা রাজ্যে দেবযানীর বিরুদ্ধে একশোর বেশি মামলা দায়ের হয়েছিল৷
২০১৩ সালে প্রকাশ্যে এসেছিল সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির ঘটনা৷ বাজার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা তোলার অভিযোগ ওঠে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে৷ গ্রেফতারি এড়াতে দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে গাড়িতে করে কলকাতা থেকে পালিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ শেষ পর্যন্ত রাজ্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার করা হয় সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়দের৷ পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্ত ভার হাতে নেয় সিবিআই এবং ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা৷
এদিন কলকাতা হাইকোর্ট দেবযানীকে শুধু রাজ্যের মামলাগুলিতেই জামিন দিয়েছে। অসম, ভুবনেশ্বরের মামলার সঙ্গে এই রায়ের কোনও সম্পর্ক নেই। আইনজ্ঞদের মতে, সিবিআই যদি মনে করে ভিন রাজ্যের মামলাগুলির তদন্তের জন্য দেবযানীকে জেলবন্দি রাখবে তাহলে তা করতেই পারে। সেক্ষেত্রে দেবযানীকে আবার গুয়াহাটি এবং ভুবনেশ্বর হাইকোর্টে নতুন করে জামিনের আবেদন করতে হবে।
গত ১৫ জুন সারদা কাণ্ডে জেলবন্দি দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানায় কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সিবিআই। কিন্তু তদন্ত সংস্থার আর্জিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করল হাইকোর্ট। সিবিআই আবেদন জানায়, এই শুনানি যেন পিছিয়ে দেওয়া হয়। বিরক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনাদের সব সময় শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার মনোভাব দেখা যায় কেন? একটা মামলা নয়। পরপর বেশ কয়েকটা ক্ষেত্রেই আপনাদের এই প্রবণতা লক্ষ্য করছি।”
দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, ২০১৩ সালে দেবযানীকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আট বছর কেটে গেলেও এখনও ট্রায়াল শুরু হয়নি। তা ছাড়া দেবযানীর আইনজীবীদের আরও যুক্তি ছিল, এই মামলায় এর আগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্ত জামিন পেয়েছেন। তাহলে দেবযানী কেন জামিন পাবেন না?
সারদা তদন্তে এর আগেই জানা গিয়েছিল, দেবযানী টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয় দেখতেন। তা ছাড়া তিনিও কোম্পানির থেকে হিসেব বহির্ভূত টাকা পয়সা নিয়েছিলেন। তাঁর জীবনযাপনও ছিল আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন। তবে এদিন বাংলার মামলাগুলিতে জামিন পেলেন দেবযানী।
উল্লেখ্য,২০১৩ সালে সারদা চিট ফান্ড কাণ্ডে গ্রেফতার হন ওই সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। একই সঙ্গে গ্রেফতার হন সারদার জুনিয়র এগ্জিকিউটিভ দেবযানী মুখোপাধ্যায়। তার পর থেকে দু’জনেই জেলে রয়েছেন।