দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবার স্বাস্থ্য ভবনের বুলেটিন জানিয়েছিল ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে ৩৭১ জন আক্রান্ত হয়েছেন নভেল করোনাভাইরাসে। একদিনে আক্রান্তের নিরিখে গতকালই সর্বাধিক বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে রাজ্যে। ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫০১। এই বিষয়ে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তাঁর প্রশ্ন, রাজ্যে কোভিড ১৯ টেস্টের কত রিপোর্ট বাকি রয়েছে। এই রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়া যথেষ্ট চিন্তার কারণ বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
সোমবার সকালে দুটি টুইট করেন ধনকড়। প্রথম টুইটে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোশ্যাল মিডিয়া মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের কাছে আমি জানতে চাই রাজ্যে কত টেস্ট রিপোর্ট আসা এখনও বাকি। আমি মুখ্যসচিবকে জানিয়েছিলাম সংখ্যাটা ৪০ হাজারের বেশি। এটা খুবই চিন্তার বিষয়। এভাবে রিপোর্ট আসতে দেরি হলে টেস্ট করার আসল উদ্দেশ্যই মাটি হবে।”
দ্বিতীয় টুইটে রাজ্যপাল ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের দেওয়া তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র গতকাল ৩৭১ জন কোভিড আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে, যা রাজ্যে একদিনে সর্বাধিক। এগুলি সবই সেকেন্ডারি তথ্য, যা দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। এতে কারও ভাল হবে না। বিপদের মুহূর্তে এইসব প্রতারণা কাজ করে না। আনলকডাউন পিরিয়ড শুরু হওয়ার পরে মানুষের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। তবেই মানুষ আরও সাবধান হবেন।”
রাজ্যপালের এই প্রশ্ন থেকে পরিষ্কার, তিনি রাজ্যের দেওয়া তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সেইসঙ্গে কোভিড ১৯ টেস্টের রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাই সরকারের কাছে সঠিক তথ্য জানানোর আবেদন করেছেন ধনকড়।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার ৯৩৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। রবিবারের বুলেটিন আরও বলা হয়েছে, রাজ্যে মোট টেস্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৩ হাজার ৭৫১। প্রতি ১০ লক্ষ মানুষে টেস্ট হয়েছে ২২৬৪ জনের। মোট ৪০টি ল্যাবরেটরিতে টেস্ট হচ্ছে করোনার। রাজ্যের তরফে কোনও খামতি নেই। তবে অনেকের মতে, কতগুলো টেস্ট হয়েছে সেই সংখ্যাটা জানালে সবটা জানা যায় না। জানাতে হবে, নতুন কত জনের টেস্ট করা হল। যেমন, রবিবার যে ৯৩৫৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই সংখ্যা থেকে বোঝা যাচ্ছে না যে তার মধ্যে পুরনো রোগীদের দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার টেস্টের সংখ্যা কত, আর নতুন কত জনের টেস্ট হয়েছে।
কোভিড ১৯ তথ্য নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের সংঘাত অবশ্য আগেও হয়েছে। প্রথমের দিকে কেন্দ্রের তরফে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দেওয়া হলেও রাজ্যের তরফে শুধুমাত্র অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা জানানো হত। কেন্দ্রের সঙ্গে তথ্যেও ফারাক ধরা পড়েছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে তথ্য পাঠাতে দেরি করা হচ্ছে। তারপরেই কেন্দ্রের তরফে আন্তঃমন্ত্রক দল পাঠানো হয় রাজ্যে। তাঁরা বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেন। তারপর থেকে রাজ্যের বুলেটিনে বদল হয়। বিস্তারিত বুলেটিন দেওয়া শুরু হয়। যদিও মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানিয়েছিলেন, তার আগে বিভিন্ন জেলা থেকে ঠিকমতো তথ্য না আসাতেই তাঁদের বিস্তারিত তথ্য দিতে সমস্যা হচ্ছিল। সেই সমস্যা মিটে যাওয়ার পরেই তাঁরা বিস্তারিত বুলেটিন দেওয়া শুরু করেন।
আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রের শ্রমিক ট্রেন চালানোকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজ্যকে না জানিয়েই শ্রমিকদের নিয়ে ট্রেন রাজ্যে পাঠিয়ে দিচ্ছে রেলমন্ত্রক। শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন আদতে ‘করোনা স্পেশ্যালে’ পরিণত হয়েছে। এই শ্রমিকরা রাজ্যে আসাতেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, বাংলার শ্রমিকরা যে যে রাজ্যে ছিলেন সেখানে তাঁদের ঠিকমতো দেখভাল করা হয়নি। টেস্ট হয়নি। ফলে সংক্রমণ বেশি ছড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে সরকার দেখবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।