হাইলাইটস্
বাম-কংগ্রেসের যৌথ ব্রিগেড
থাকছে আইএসএফ সহ অন্যান্য দল
শারীরিক অসুস্থতার কারণে থাকছেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
দলে দলে যোগ কর্মী সমর্থকেরা

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা ইউনাইটেড ইন্ডিয়া সমাবেশ মনে পড়ে? ব্রিগেডে দিদির ডাকে সেই মিটিংয়ে বলতে এসেছিলেন আরজেডি নেতা তথা লালুপ্রসাদ যাদবের ছোট ছেলে তেজস্বী যাদব।
রবিবার সেই তেজস্বীই ব্রিগেডে আসছেন। তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী বাম-কংগ্রেসের সমাবেশে। শনিবার রাত পর্যন্ত সিপিএম সূত্রে জানা গেছে ব্রিগেডে তেজস্বী ছাড়াও ১০ জন বক্তৃতা করবেন। তাঁদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।

জানা গিয়েছে, সভার সভাপতি হিসেবে প্রথম বক্তৃতা করবেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তারপর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের আব্বাস সিদ্দিকি, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র, পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, ফরওয়ার্ড ব্লক সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস, আরএসপির মনোজ ভট্টাচার্য, কংগ্রেস শাসিত ছত্তীশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বক্তৃতা করবেন।

অনেকের মতে তেজস্বী আসায় ধর্মনিরপেক্ষ জোটের বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে। বাম-কংগ্রেস মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবে, এই জোটে আব্বাস সিদ্দিকী থেকে তেজস্বী সবাই রয়েছেন। যে তেজস্বী মাটি কামড়ে লড়াই করে বিহারে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল।
তবে সিপিএমের এক নেতা বলেন, সময় পাওয়া গেলে আদিবাসী ও মহিলা মুখ হিসেবে দেবলীনা হেমব্রমও বলতে পারেন। ২০১৯ সালের বাম ব্রিগেডে দেবলীনার দেহাতি বক্তব্য মাঠের সমস্ত হাততালি কুড়িয়েছিল। অনেকের মতে, মমতা তৃণমূল যখন বাংলার মেয়েকে উর্দ্ধে তুলে ধরতে চাইছে, বিজেপি যখন লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পলদের সামনে আনছে তখন বাম ব্রিগেডে কোনও মহিলা মুখ না থাকলে তা নিয়ে সমালোচনা হবেই।

যদিও তৃণমূলের এক মুখপাত্র শনিবার রাতে বলেন, তেজস্বী কলকাতায় আসছেন বটে। সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নয় তো?

লালঝান্ডার নয়, ২১-এর ব্রিগেড ত্রিমুখী। নির্বাচনের আগে বাম-কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের জন্য রবিবাসরীয় ব্রিগেড সমাবেশ অনেকটা লিটমাস টেস্টের মতো। বুদ্ধবার্তা সঙ্গে নিয়েই ময়দানে নামছে বামফ্রন্ট। অন্যদিকে, যৌথ ব্রিগেডে এই প্রথম বক্তব্য রাখবেন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। চোখ রয়েছে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির দিকেও। একদিকে, টুম্পা, ফ্ল্যাশ মবের মতো অভিনব প্রচার আর অন্যদিকে, শিক্ষা-কর্মসংস্থানের দাবি এদিনের ব্রিগেডকে অন্য মাত্রা দেবে বলেই আশাবাদী নেতৃত্ব।

সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে ইতিমধ্যেই কর্মী-সমর্থকদের জন্য বার্তা দিয়েছেন প্রাক্তন মখ্যমন্ত্রী। অতীতে অসুস্থ জ্যোতি বসু ব্রিগেডে হাজির হতে না পারলেও তাঁর রেকর্ড করা ভাষণ শোনানো হয়েছিল। ভগ্নস্বাস্থ্য বুদ্ধদেবের পক্ষে ভার্চুয়াল ভাষণও এখন প্রায় অসম্ভব। এদিকে, বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এই প্রথম যৌথ ব্রিগেডে থাকছে বাম-কংগ্রেস। রবিবারের সমাবেশে বক্তার সংখ্যা ১০। জানা গিয়েছে, এদিন বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখবেন সিপিআইএম-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। শরিক দলগুলির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন দেবব্রত বিশ্বাস, নরেন চট্টোপাধ্যায়রা। তারুণ্যের উপর ভরসা রাখলেও কোনও ছাত্র-যুব নেতার নাম অবশ্য বক্তার তালিকায় নেই। এদিকে, প্রদেশ ভবনের পক্ষ থেকে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জন্য ঝাঁপানো হলেও হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে। বক্তব্য রাখবেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এদিনের ব্রিগেডে স্টার বক্তা হিসেবে অবশ্যই এগিয়ে রয়েছেন আব্বাস সিদ্দিকি। কংগ্রেসের সঙ্গে এখনও সমস্যা মেটেনি আইএসএফ-এর। এরই মধ্যে ব্রিগেড থেকে তিনি কী বার্তা দেন, সেদিকে নজর থাকবে বিশ্লেষকদের। অন্যদিকে, কথা দিলেও ব্রিগেডে উপস্থিতির সম্ভাবনা কম তেজস্বী যাদবের। কলকাতায় এলেও কর্মী সম্মেলন নিয়েও ব্যস্ত থাকার কথা লালুপুত্রের।

https://fb.watch/3WS2Iv9tBD/

https://fb.watch/3WS4Dmzx02/

জোটের ব্রিগেডে ঐতিহাসিক ভিড়ের আশায় আলিমুদ্দিন। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কথায়, ‘বুলগানিন-ক্রশ্চেভের ব্রিগেডের থেকেও বেশি ভিড় হবে।’ ১০ লাখি ব্রিগেডের প্রত্যাশায় বাড়তি আয়োজন করেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। থাকছে ৬২০টি মাইক। ব্রিগেড ছাড়িয়ে রেড রোড, ডাফরিন রোড, মেয়ো রোড পর্যন্ত মাইক দেওয়া হয়েছে। মঞ্চের আয়তন বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে মঞ্চে চিরাচিরত লাল ব্যাক-ড্রপের জায়গায় সাদা রঙের উপর মাঝখানের একাংশে লালের-শেড এবং এক পাশে ত্রিবর্ণ শেড দেওয়া হয়েছে। চেন ফ্ল্যাগে মুড়ে ফেলা হয়েছে ময়দান। শনিবার রাত থেকেই কয়েক হাজার বাম কর্মী-সমর্থক ব্রিগেড রয়েছেন বলে দাবি। ভাঙড়, ক্যানিং-সহ উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া থেকে আব্বাসের অনুগামীরা ব্রিগেডের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সিপিআইএম-এর প্রতি সমর্থন জানাতে সুদূর গুজরাট থেকে রবিবারের ব্রিগেড যোগ দিতে এসেছেন এক পরিযায়ী শ্রমিক। লকডাউনের সময় পরিবারকে দেখেছে একমাত্র লালঝান্ডাই, তাই ছুটে এসেছেন বলে দাবি তাঁর।

পাহাড় থেকে সাগর, সব জেলার সব বুথ থেকে লোক আনতে মরিয়া বামেরা। শক্তি দেখাতে কংগ্রেসও চাইছে সব জেলা থেকে কর্মীদের হাজির করতে। কংগ্রেসর তরফে হাওড়া, মধ্য কলকাতার বেশ কিছু ধর্মশালা, হোটেল বুক করা হয়েছে। বুক করা হয়েছে বহু কমিউনিটি সেন্টার। দূরদূরান্ত থেকে আসা এই সমর্থকদের জন্য তিনবেলার খাদ্যের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। খাবার হিসেবে থাকবে রুটি সবজির প্যাকেট। সমর্থকদের ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে এই রুটি। বিভিন্ন জেলায় জেলায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে শুকনো খাবার সংগ্রহও করছেন কর্মীর। ব্রিগেডে আসবে মানুষের পাঠানো মুড়ি, চানাচুরও, লাড্ডুও। নেতাদের শুনতে এসে কেউ যেন অভুক্ত না থাকে সে দিকেই নজর দিতে চান বামেরা।

অন্যদিকে, সোশ্য়াল মিডিয়াতেও চলছে জোর কদমে প্রচার। ব্রিগেডের স্মৃতি থেকে শুরু করে ছাত্র যুবদের দাবি দাওয়া তুলে ধরা হচ্ছে ভিডিও ক্লিপিংয়ের মাধ্যমে। ব্রিগেড মঞ্চ থেকে গান গাইতে শোনা যাবে শিল্পী ড. সৌমিক দাসকে। ব্রিগেডে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়েছেন অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, বাদশা মৈত্র, সব্যসাচী চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র, সৌরভ পালোধী। থাকবেন পরিচালক অনীক দত্ত, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়রাও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here