দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার ছিল ষোড়শ বিধানসভার শেষ দিন। প্রথামতো এমন দিনে বিধানসভার সব নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে ফটোসেশন হয়। কারণ, সপ্তদশ বিধানসভার গঠন হবে নির্বাচনের পর। বর্তমান বিধানসভার যাঁরা সদস্য তাঁদের ক’জন ভোটে নির্বাচিত হয়ে পুনরায় সদস্য হবেন, সেই নিশ্চয়তা নেই। তাই স্মৃতিটুকু থাক। বিধানসভার রেকর্ডে থেকে যায় এই ছবি।
‘দুর্ভাগ্যক্রমে’ ষোড়শ বিধানসভায় অপূর্ণ থেকে গেল সেই ছবি। ফটোসেশনে স্পিকারের পাশে থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ শাসক দলের বিধায়করা। ছিলেন বিজেপি বিধায়করাও । কিন্তু ফটোসেশন বয়কট করলেন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। বাম-কংগ্রেসের বিধায়করা নিজেদের দূরে রাখলেন লেন্স থেকে। সিপিএম ও কংগ্রেস থেকে যাঁরা আবার তৃণমূলে গিয়েছেন, তাঁরা অনেকে রইলেন ফ্রেমে।
সংসদীয় গণতন্ত্রে এই ছবি বিরল ঠিকই। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইনসভার সব সদস্যের মর্যাদা সমান। রাজনৈতিক অবস্থান ও মতাদর্শের ফারাক তো থাকবেই। ট্রেজারি ও বিরোধী বেঞ্চের মধ্যে, তর্ক হবে, বিতর্ক হবে, বিতণ্ডা হবে—তাও স্বাভাবিক। কিন্তু বৈরীতা তৈরি না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
কেন ফটোসেশন থেকে দূরে থাকলে বিরোধীরা?
আবদুল মান্নান-সুজন চক্রবর্তীদের মতে, গত পাঁচ বছর এই সফেদ ভবনে যা হয়েছে তা সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জার। বিধানসভার ইতিহাসে এত কম অধিবেশন কখনও হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও প্রশ্ন করা যায়নি। কথায় বলে, আইনসভার কক্ষ হল আসলে বিরোধীদের। সরকারের নীতি, পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন করার মৌলিক অধিকার রয়েছে তাঁদের। কিন্তু এই বিধানসভা ছিল ট্রেজারির তথা শাসকের।
মান্নান সাহেবদের কথায়, ষোড়শ বিধানসভায় অন্তত ২০ জন কংগ্রেসকে ভাঙিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। বামেদেরও বিধায়ক ভাঙিয়েছে। কিন্তু সেই সব বিধায়ক তৃণমূলের সংগঠনে পদ পেলেও বিধানসভায় তাঁদের সদস্যপদ খারিজ হয়নি।
স্পিকারের কাছে পিটিশন দিয়েও লাভ হয়নি। এও সংসদীয় গণতন্ত্রে এক প্রকার অনাচার। তাই ফটোসেশনেও সেই শূন্যতা থাকুক। যা কালো দাগের মতো রেকর্ডে থেকে যাবে।
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে অবশ্য বলেছেন, “এটা কী ধরনের অসৌজন্য? বিধানসভার স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রী মিলে একটা ফটো তোলা হয়। সংসদীয় রাজনীতিতে যাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞ বলে মনে করেন, তাঁরা রুচিসম্মত কাজ করলেন বলে মনে করছি না”।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ দুই বিজেপি নেতার, তৃণমূলে ঘর ওয়াপসির জল্পনা:
বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এবং নোয়াপাড়ার বিধায়ক সুনীল সিং। দুজনেই কয়েক মাস আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। সুনীল সিং সম্পর্কে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের শ্যালক। ভোটের আগে আজই ছিল রাজ্য বিধানসভার শেষ দিন। সব সদস্যই ছিলেন কমবেশি হালকা মেজাজে। এরমধ্যে হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢোকেন বিজেপিতে যোগ দেওয়া দলত্যাগী দুই বিধায়ক। বনগাঁ উত্তরের বিশ্বজিৎ দাস এবং নোয়াপাড়ার সুনীল সিং। সুনীল মুখ্যমন্ত্রীর ঘর থেকে আগে বেরিয়ে গেলেও বিশ্বজিৎ ছিলেন প্রায় আধ ঘণ্টা। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ঘর থেকে বেরিয়ে দুজনেই দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এলাকার উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মুখে তাঁরা উন্নয়নের কথা বললেও থেমে থাকছে না রাজনৈতিক জল্পনা। আর কয়েক দিনের মধ্যেই নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতিতে বিধায়ক কোটার কাজ অথবা কোনও অর্থ বরাদ্দ হলে সে বিষয়ে টেন্ডার ডাকার মত সময়ও আর হাতে নেই। তাহলে সব জেনেশুনে ভোটের দোরগোড়ায় উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে কেন গেলেন তাঁরা?
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি গেরুয়া শিবিরে প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে তৃণমূলের টিকিটে জেতা এই দুই বিধায়কের? তাঁরা কি আবার ফিরতে চাইছেন ঘাসফুলে? দু’দিন আগেই মুকুল রায়ের শ্যালক তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে যান। এবার কি তবে অর্জুনের শ্যালকের ঘরে ফেরার পালা? বিশ্বজিৎ এবং সুনীল দুজনকে নিয়েই চলছে জোর জল্পনা।