দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দুর্যোগ সামলানোর অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে তীব্র সমালোচনা করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। এ ব্যাপারে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্যকেই প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
আমপানের ধাক্কায় শহরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গাছ উপড়ে পড়ে গিয়েছে। ভেঙে পড়েছে কয়েকশো বিদ্যুতের খুঁটি এবং লাইট পোস্ট। রবিবার সন্ধে পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় গাছের গুড়ি পড়ে রয়েছে বলে খবর। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়ে সেনা নামাতে হয়েছে।
মাননীয়া @MamataOfficial কোটি কোটি টাকার খয়রাতি করেন সারা বছর অথচ কলকাতা কর্পোরেশনের কাছে গাছ কাটার ইলেকট্রিক করাত নেই•কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বাংলার মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জির সেটা স্বীকার করছেন, বলছেন
— Babul Supriyo (@SuPriyoBabul) May 24, 2020
"আমাদের কাছে যন্ত্রপাতি নেই-কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটা হয়"! কি বলবেন এই সরকারকে😡 pic.twitter.com/QSttQcGS8M
পরিস্থিতিতে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রতবাবু বলেছেন, “আমি বিদেশে দেখেছি মোটা মোটা গাছের গুড়ি ব্লেডের মতো যন্ত্র দিয়ে কেটে দিচ্ছে। এখানে সেসব নেই।” শুধু তাই নয়। সুব্রতবাবু আরও বলেন, “আমার বাড়ির সামনে তো দেখলাম কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটা হচ্ছে!” তাতে স্বাভাবিক ভাবেই যে সময় লাগবে সেই ইঙ্গিতই করেছেন প্রাক্তন মেয়র।
সুব্রতবাবুর ওই বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে আসানসোলের সাংসদ বলেছেন, “কোটি কোটি টাকার খয়রাতি করেন সারা বছর অথচ কলকাতা কর্পোরেশনের হাতে গাছ কাটার ইলেকট্রিক করাত নেই!”
প্রসঙ্গত, কলকাতার আরএক প্রাক্তন মেয়র তথা খাতায় কলমে বিজেপিতে থাকা শোভন চট্টোপাধ্যায়ও পুরসভার কাজের তীব্র সমালোচনা করেছেন। শনিবার দুপুরে তিনি বলেছিলেন, কলকাতা কর্পোরেশনের কাজ যাঁরা পরিচালনা করেন তাঁদের মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। যার ফলে এই ভোগান্তি!
শনিবার বিকেলে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, “হাত জোড় করছি! এখন কদিন সমালোচনা বন্ধ রাখুন। কাজটা করতে দিন! ভোটের সময়ে না হয় আমায় হারিয়ে দেবেন। পছন্দ না হলে গুলি করে দেবেন! কিন্তু এখন প্লিজ কাজটা করতে দিন।” তবে পুরসভার কাছে যে গোড়ায় সন্তোষজনক ছিল না তাও স্বীকার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। তিনি বলেছেন, সব রকম ভাবে আমি চেষ্টা করছি। পুরসভার কমিশনার পদ থেকে খলিল আহমেদকেও সরানো হয়েছে। নতুন কমিশনার এসেছেন। তাঁর বাড়িতে স্বজন বিয়োগ হয়েছে সম্প্রতি। তাও তিনি দিন রাত কাজ করছেন।
কিন্তু বিরোধীরা সেই যুক্তি শুনতে চাইছেন না। উল্টে অতীতে আয়লার সময়ে তৃণমূলনেত্রীর কী ভূমিকা ছিল সেই প্রসঙ্গ টেনে আনতে শুরু করেছেন বিজেপি ও বাম নেতারা। ঘূর্ণিঝড় সামলানোর প্রস্তুতি নিয়ে ওড়িশার সঙ্গে বাংলার তুলনা টানছেন। আর তার মাধ্যমে ক্রমাগত চাপ বাড়াতে চাইছেন প্রশাসনের উপরে।
অন্যদিকে সিইএসসি ও পর্ষদ জানিয়েছে কলকাতা সহ জেলার বেশির ভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ চলে এসেছে, দাবি স্বরাষ্ট্র দফতরের
প্রায় ৮০ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকার পর কলকাতার অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুৎসংযোগ ফিরেছে বলে রাজ্য সরকারকে জানাল সিইএসসি এবং রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে টুইট করে জানানো হয়েছে, সিইএসসি সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছে, শহরের বেশিরভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতর আরও জানিয়েছে, বৃহত্তর কলকাতার যে সব জায়গা রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের অধীনে সেখানে তো বটেই, নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা তমলুকের মতো এলাকাতেও বিদ্যুৎ এসেছে।
যাদবপুর, সেলিমপুর, মুকুন্দপুর, রিজেন্ট এস্টেট, সার্ভে পার্ক, রাসবিহারী, বেহালা শীল পাড়া, জেমস লং সরণি, চৌরাস্তা, লেকটাউন, নাগেরবাজারের মতো অধিকাংশ জায়গাতে বিদ্যুৎ এসেছে। স্বরাষ্ট্রদফতরের তরফে আরও বলা হয়েছে, কলকাতার বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশনেও কাজ শুরু হয়েছে।
রবিবার বেলা দেড়টা থেকে দুটোর মধ্যে এই দুটি টুইট করা হয় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে। যদিও যে এলাকাগুলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেরকম অনেক এলাকাতেই এখনও কারেন্ট আসেনি বলে জানা গিয়েছে। সার্ভে পার্ক এবং রিজেন্ট এস্টেটে দ্য ওয়াল-এর প্রতিনিধিদের বাড়ি রয়েছে। রবিবার বেলা আড়াইটে পর্যন্ত তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুৎ আসেনি। নদিয়ার চাকদহ, পায়রাডাঙা, কৃষ্ণনগর, তাহেরপুরের মতো বহু এলাকা এখনও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। প্রায় চারদিন হতে চলল বিদ্যুৎবিহীন রয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তৈরি হয়েছে তীব্র জলসংকট।
জল, বিদ্যুতের দাবিতে শুক্রবার থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল কলকাতা-সহ জেলায় জেলায়। শনিবার তা তীব্র আকার নেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিক্রিয়ায় বলেন, লকডাউনের জন্য লোকের অভাবেই পুনর্গঠনের কাজ করা যাচ্ছে না। সব এদিক ওদিক ছিটকে গিয়েছে। কাকদ্বীপ যাওয়ার পথে শনিবার তারাতলা সিইএসসি অফিসের সামনে প্রচুর ভিড় দেখে কনভয় থামিয়ে নেমে পড়েন মমতা। সেখানে ক্ষোভ প্রশমিত করতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর বাড়িতেও কারেন্ট নেই। ভূতের মতো রয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী সিইএসসি-কে সিপিএম জমানার বলেও তোপ দাগেন। বলেন, বেসরকারি সংস্থার দায় রাজ্য সরকারের ঘাড়ে চাপাতে না। তারপর সাংবাদিক সম্মেলন করে মানুষের কাছে ক্ষমা চায় সিইএসসি কর্তৃপক্ষ।
তবে এদিন দুপুরে স্বরাষ্ট্র দফতর যে সমস্ত এলাকার উল্লেখ করেছে, সেরকম অনেক এলাকাই এখনও বিদ্যুৎহীন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বনগাঁ শহরে আংশিক বিদ্যুৎ সংযোগ হলেও বেশির ভাগ এলাকা এখনও অন্ধকারে ডুবে আছে বলে জানান স্থানীয় মানুষ৷তবে রবিবার রাত ১০টা পর্যন্ত বনগাঁ যশোর রোড সংলগ্ন জয়পুর এলাকায় বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের কাজ করতে দেখা গেছে।