দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কালী পুজোর আগের রাতে রাজ্যওয়াড়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নাম ঘোষণা করেছিলেন বিজেপি সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা। সেই তালিকায় বাংলায় সহ পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে সর্বভারতীয় বিজেপির আইটি সেলের ইনচার্জ অমিত মালব্যকে। তারপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতায় পা রাখলেন মালব্য।
বিমানবন্দরে নেমেই তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়ে দেন, “একুশের ভোটে ২০০-র বেশি আসন নিয়ে বাংলায় ক্ষমতায় আসবে বিজেপি।” বুধবার দুপুরে রাজ্য বিজেপির বৈঠক রয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন নয়া সহ পর্যবেক্ষক।
অমিত মালব্য একটা সময়ে ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি চাকরি ছেড়ে বিজেপির সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে যান। সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। সেই দায়িত্ব পাওয়ার পর বিজেপির প্রচারকে ডিজিটাল ময়দানে ব্যাপক আকার দেন অমিত।
Grateful for this warm and rapturous welcome on my first visit to West Bengal after being appointed the co-incharge.
— Amit Malviya (@amitmalviya) November 16, 2020
I am sure together we will re-establish the glory of WB.
It can happen only if Pishi’s government steeped in corruption, appeasement and lawlessness is routed… pic.twitter.com/gTKiw6P2Em
জেপি নাড্ডা যে তালিকা দিয়েছিলেন সেই তালিকা অনুযায়ী বংলা বিজেপির মূল দায়িত্বে কৈলাস বিজয় বর্গীয়। কৈলাসের সঙ্গে সহকারী হিসেবে দুই নেতার নাম রয়েছে তালিকায়। অরবিন্দ মেনন ও অমিত মালব্য। মেনন আগে থেকেই ছিলেন। নতুন আনা হয়েছে মালব্যকে।
পর্যবেক্ষকদের মতে বাংলার সহকারী দায়িত্বে অমিত মালব্যকে পাঠানোটা রাজনৈতিক ভাবে তাত্পর্যপূর্ণ। কারণ, অনেকেই মনে করছেন এই করোনা আবহে একুশের ভোটে অনেকটা লড়াই হবে ডিজিটাল দুনিয়ায়। হতে পারে বঙ্গ বিজেপির আইটি সেলকে আরও শক্তিশালী করতেই মালব্যকে এ রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।
আমার পরিবার বিজেপি পরিবার, আর নয় অন্যায় -সহ একাধিক প্রচার সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল দুনিয়ায় হাজির করেছে বিজেপি। ওদিকে তৃণমূলের ভোট ম্যানেজার প্রশান্ত কিশোরের টিমও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে। দিদিকে বলো থেকে বাংলার গর্ব মমতার পর ‘বিজেপি থেকে সুরক্ষিত’ গোছের ক্যাম্পেইন প্যাটার্ন হাজির করেছে শাসকদল। ২০১৪ থেকে অমিত মালব্য গেরুয়া শিবিরের সাইবার রুমে বসছেন। তাঁকে এবার বাংলায় পাঠালেন অমিত শাহরা।
বাংলায় এবার প্রতিষ্ঠা করতে হবে গেরুয়া রাজত্ব। বিজেপি শিবিরের এখন ধ্যান-জ্ঞান একটাই। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে টার্গেট করেই এখন এগোচ্ছে পদ্ম শিবির। এরাজ্যে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঘন ঘন আগমন জানান দিচ্ছে, বাংলার ভোট তাঁদের কাছে কতটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই আবহে বিহারে ফের ক্ষমতায় ফেরা বিজেপির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে অনেকটাই। তাই বাংলায় বাজিমাত করতে এবার সর্বশক্তি নিয়ে নামতে চাইছেন অমিত শাহ-জেপি নাড্ডারা। আর এই আবহেই সম্প্রতি এরাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলল গেরুয়া শিবির। নতুন মুখ হিসাবে এবার বঙ্গ বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যকে। বাংলা জয়ের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করতে বিজেপির আর দুই কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও অরবিন্দ মেননের সঙ্গে এবার বাংলাতেই থাকবেন গেরুয়া শিবিরের এই তরুণ নেতা। সেই লক্ষ্যে সোমবারই কলকাতায় পা রাখলেন বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান সেনাপতি।
এদিন দমদম বিমানবন্দের অমিত মালব্যকে স্বাগত জানাতে ভিড় জমিয়েছিলেন প্রচুর বিজেপি কর্মী সমর্থক। অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ এই নেতাকে বরণ করতে হাজির হয়েছিলেন বিজেপির মহিলা সেলের সদস্যরাও। সেই ছবি নিজেই ট্যুইট করেন অমিত। সঙ্গে লেখেন “পিসির দুর্নীতি, আইনের শাসনহীন সরকারের বদলে বাংলার গৌরব আমরা সকলে মিলে ফিরিয়ে আনব।”
গেরুয়া শিবিরের তরুণ ব্রিগেডের অন্যতম অমিত অমিত মালব্যর বঙ্গ বিজেপিতে আগমন তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গত লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে বিজেপির সাফল্যের পেছনে আইটি সেলের অবদান অনস্বীকার্য। রাবরই সক্রিয় গেরুয়া শিবিরের আইটি সেল। আর এবার বাংলার দায়িত্বে অমিত মালব্যকে নিয়ে আসা মানে সোশ্যাল মিডিয়া ও সামগ্রিক ভাবে সংবাদমাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে আরও আক্রমণাত্মক ও আগ্রাসী ভঙ্গিমায় নামতে চাইছে বিজেপি। পাশাপাশি মোদী মন্ত্রিসভার সেকেন্ড ইন কমান্ড অমিত শাহ এই অমিতের প্রতি চোখ বন্ধ করে ভরসা করে থাকেন। তাই নিজের বিশ্বস্ত সহচরকেই এবার বাংলা জয় করতে কাজে লাগাতে চাইছেন।
এদিকে অমিত বাংলায় পা রাখতেই মঙ্গলবার জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কলকাতায়। কৈলাস বিজয়বর্গীয় , অরবিন্দ মেনন , মুকুল রায়, শিবপ্রকাশ-সহ প্রায় সমস্ত বিজেপি নেতাই উপস্থিত থাকবেন এই বৈঠকে। থাকবেন সদ্য বাংলায় পা রাখা মালব্যও। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করতেই এই বৈঠক বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, নির্বাচনী প্রস্তূতির পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির মিডিয়া এবং আইটি সেলেরও বেশ কিছু বদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই বৈঠকে।