দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আমতায় আনিস খান মৃত্যুরহস্যে নতুন মোড়। মঙ্গলবার গভীর রাতে আনিসের দাদার কাছে গেল হুমকি ফোন। সেখানে বলা হয়, সিবিআই তদন্তের দাবি করলে গোটা পরিবারকেই খুন করে দেওয়া হবে । বুধবার সকালে সংবাদমাধ্যমে একথা জানিয়েছেন আনিস খানের দাদা সাবির খান।
জানা গেছে গতকাল রাত ১.০৪ নাগাদ আনিস খানের দাদার ফোনে একটি ফোন আসে। কে সেই ফোন করেছিল তা জানা যায়নি। শুধু তাতে আনিসের গোটা পরিবারকেই খুন করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সিবিআই তদন্ত চাইলে আনিসের বাবা আর দাদাকে মেরে ফেলা হবে। এই ফোন পাওয়ার পর স্বভাবতই আতঙ্কে রয়েছে প্রয়াত ছাত্রনেতার পরিবার।
আনিসের দাদা জানিয়েছেন, রাতের ওই ফোনকল রেকর্ড করেছেন তিনি। বলেছেন, আমার ভাইয়ের খুনি এখনও ধরা পড়ল না, তার উপর এই হুমকি ফোন। কী হচ্ছে আমরা কিছু ভেবে পাচ্ছি না। ওরা কেসটা ধামাচাপা দিয়ে দিতে চায়।
তিনি আরও বলেন, ভয়ের চেয়ে আমার লজ্জা লাগছে বেশি, যে এ কী রাজ্যে আমরা বাস করছি? ভাই মারা গেছে, পরিবারের কাছে হুমকি আসছে।
আনিসের পরিবার নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। আনিস খানের মোবাইল ফোন তাঁরা এখনও পুলিশের হাতে তুলে দিতে রাজি হননি। জানিয়েছেন ওই ফোন সিবিআই কিংবা আদালতের কাছে জমা দেবেন তাঁরা, কিন্তু যে পুলিশ ছেলেকে খুন করেছে তাদের হাতে ফোন দেবেন না কিছুতেই।
আনিস খানের মৃত্যুর তদন্ত হচ্ছে বিশেষ তদন্তকারী দল সিটের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে সিটের সদস্যরা আমতার বাড়িতে ঘুরে এসেছেন। কিন্তু মোবাইল ফোন তাদের হাতেও দিতে রাজি হয়নি আনিসের পরিবার।
পরিবারের অভিযোগে শেষমেশ টনক সিটের। কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্তে তোড়জোড়। ম্যাজিস্ট্রেটকে ইতিমধ্যেই আর্জি জানানো হয়েছে। হঠাৎ বুধবার সকালে ব়্যাফ নিয়ে আনিসের বাড়িতে বাগনানের অফিসার। পরিবারের তরফে আগে থেকেই অভিযোগ করা হচ্ছিল, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কিছু কারচুপি হয়েছে।
সিট তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর থেকেই প্রথমে আমতা থানার পুলিশ কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপর সাসপেন্ড করা হয় তিন পুলিস কর্মীকে। এরপরই খোঁজ পড়ে আনিসের মোবাইলে। মঙ্গলবার রাতে আনিসের বাড়িতে যায় সিট। তদন্তকারীদের হাতে আনিসের মোবাইল তুলে দিতে চাননি পরিবারের সদস্যরা।
আমতা থানার প্রাক্তন ওসি সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায় ও বাগনান থানার অফিসার ব়্যাফ নিয়ে আনিসের বাড়িতে যান। আনিসের বাবা বাগনান থানার অফিসারকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কে?’ তখন বাগনান থানার অফিসার জানান, তাঁর সঙ্গে আনিসের দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি যখন আমতায় কর্মরত ছিলেন, তখন থেকেই পরিচয়। সেই কারণেই তাঁর আসা। পুরো ঘটনা তিনি আনিসের বাবার থেকে শোনেন। তারপর তিনি জানান, পুনরায় আনিসের দেহের ময়নাতদন্ত হতে পারে। হঠাৎ কেন ব়্যাফ নিয়ে পুলিশ কর্তারা তাঁদের বাড়িতে এলেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আনিসের পরিবার।
এদিকে, আনিস কাণ্ডে আরও একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সিবিআই-এর দাবিতে সুর চড়াতে এবার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে খান পরিবারকে। এমনটাই বিস্ফোরক অভিযোগ উঠছে। জানা যাচ্ছে, গভীর রাতে আনিস খানের দাদা সাবির খানের মোবাইলে ফোন আসে। ‘কেন্দ্রীয় তদন্ত চাইলে বাপ-বেটা খুন’, ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে সেই কল রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেনি দেশের সময় ।
প্রথম থেকেই আনিসের দাদা ও বাবা এই লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠেছেন।সিবিআই তদন্তের দাবিতে তাঁরা অনড়। আনিসের গোটা গ্রামও সিবিআই তদন্তের দাবিতে সোচ্চার। সেই কলটি রেকর্ড করেছেন আনিসের দাদা সাবির খান। তদন্তকারীদের বিষয়টি জানাবেন তিনি। বুধবার সকালেও তিনি সাংবাদিকদের জানান, রাজ্য পুলিশে তাঁর ভরসা নেই। মঙ্গলবার রাতেও সিটের তদন্তকারীদের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ ছিল পরিবার। তাঁরা আনিসের মোবাইল সিটের হাতে তুলে দিতে চাননি। সিটের সামনেও তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁরা সিবিআই তদন্তই চান।