শের সময় ওয়েবডেস্কঃ একুশের ভোটযুদ্ধের আগে পুরুলিয়ায় গিয়ে বিজেপি-কে তুলোধনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘পুরুলিয়া প্রথম ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী। পুরুলিয়া কখনও বহিরাগতদের কাছে মাথা নত করেনি। বিজেপি আসলে পুরুলিয়া থাকবে না, রূপসী বাংলা থাকবে না। মাওবাদীদের থেকে বিজেপি আরও ভয়ঙ্কর’। মমতা আরও বলেছেন, ‘নির্বাচন এলে বঙ্গালের কথা মনে পড়ে! নির্বাচনের সময় মন্ডা-মিঠাই খাওয়াবে। আর ভোট মিটলে কাঁচকলা খাওয়াবে’।

এদিন বিজেপি-কে আক্রমণ করে তৃণমূলনেত্রী আরও বলেছেন, ‘ফেক ভিডিও ছড়াচ্ছে বিজেপি। একদম ওদের বিশ্বাস করবেন না। লোকসভা নির্বাচনে মিথ্যা কথা বলে ভোট নিয়ে পালিয়ে গেল। যখন নির্বাচনের সময় বিজেপি নেতারা আসবেন, তাড়িয়ে দেবেন’। তাঁর সভায় বিজেপি গোলমাল পাকাচ্ছে বলে এদিন অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি সহযোগে বাইক মিছিল করে রণহুঙ্কার কেন দিতে হবে, ভগবানের নাম তো ভালবেসে নেওয়া উচিত। একটি সংবাদমাধ্যমের টক শো-তে একথা বলেছিলেন বাঙালি অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। তারই জেরে টুইটারে রীতিমতো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন মেঘালয় ও ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়।
টুইট-পাল্টা টুইটের পরে শেষ অবধি তথাগত রায় থামলেও, বিষয়টা সেখানেই থামেনি। তিনি পরের দিনই সায়নীর বিরুদ্ধে এফআইআর করেন কলকাতা পুলিশে। অভিযোগপত্রের ছবি টুইটারে আপলোড করেন তিনি, দেখা যায়, ৬ বছর আগে সায়নীর একটু টুইটে থাকা ছবি তাঁর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে বলে দাবি করেন তিনি।

আজ পুরুলিয়ার সভায় বক্তৃতা রাখার সময়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে গিয়ে সে কথা তোলেন মমতা। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এভাবে ধমকানো উচিত নয় অভিনেতাকে। এমন করলে যে তা মেনে নেওয়া হবে না, সে বার্তাও দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, “সায়নী বলে একটা মেয়ে, তাকে বিজেপি ধমকাচ্ছে। কেন? এত বড় ক্ষমতা! তুমি উত্তরপ্রদেশে ধমকাও, বিহারে ধমকাও, বাংলাতে ধমকানোর আশা রাখো কোথা থেকে? বাংলায় ধমকালে মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দেবে মানুষ। ক্ষমতা থাকে সায়নীর গায়ে হাত দিয়ে দেখাও, ক্ষমতা থাকলে টলিউডের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও। ক্ষমতা থাকলে সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও।”

তাঁর কথায়, “বয়স হয়ে গেছে (তথাগত রায়ের) তবুও ভীমরতি যায় না। নাতনির বয়সী মেয়ে, তাঁকে প্রতিদিন থ্রেট করছে। কীসের জন্য, তার কি স্বাধীন ভাবে কথা বলার অধিকার নেই। নিশ্চয়ই আছে।”

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার। সেদিন সকাল থেকেই টুইটারে বাক-যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তথাগত রায় ও সায়নী ঘোষের মধ্যে। সেই টুইটের শুরু ছিল, তার আগের দিন একটি সংবাদ চ্যানেলে সায়নী ঘোষের বক্তব্য। সেখানে অতিথি বক্তা হিসেবে একটি বিতর্কে অংশগ্রহণ করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যে ভাবে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানটিকে রণধ্বনিতে পরিণত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ভুল। উপরন্তু, এটি বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যেও পড়ে না। ঈশ্বরের নাম ভালবেসে বলা উচিত।’’ এই নিয়েই টুইটারে লড়তে থাকেন দুই পক্ষ। শেষে তথাগত রায় লেখেন, “আর পারছি না, ক্ষ্যামা দে মা লক্ষ্মী।” এখানেই শেষ হয় টুইট।
তবে লড়াই যে আসলে শেষ হয়নি, তা বোঝা যায় পরের দিনই।

সায়নীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন তথাগত রায়। জানা গেছে, ২০১৫ সালে সায়নী ঘোষের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছিল, যাতে একটি শিবলিঙ্গে কন্ডোম পরাচ্ছিলেন এক মহিলা। তাঁকে এইডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের আইকন ‘বুলাদি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ছবিটিতে লেখা ছিল, ‘বুলাদির শিবরাত্রি’। সায়নীর শেয়ার করা এ ছবির ক্যাপশনে ছিল, ‘এর থেকে বেশি কার্যকরী হতে পারেন না ঈশ্বর’।


এই ছবিটিকেই অভিযোগের হাতিয়ার করেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তাঁর অভিযোগ, হিন্দু ধর্মের পবিত্রতা নষ্ট করছেন সায়নী। তিনি শিবের ভক্ত। ১৯৯৬ সালে শিবের পুজো দেওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা করেছিলেম। অভিনেত্রী সায়নীর এই ছবিটি দেখে তাঁর ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়েছে বলে তাঁর দাবি।

যদিও এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন সায়নী ঘোষ। তিনি নিজের টুইটার প্রোফাইল থেকে টুইট করে জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছিল। পরে অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার হলে তিনি ছবিটি ডিলিটও করেন। এই হ্যাক হওয়া এবং ছবি পোস্ট হওয়ার কথা আগেও সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন সায়নী। তবে তাতে যে শেষেরক্ষা হয়নি, তা এদিনের ঘটনাতেই স্পষ্ট।


এই প্রসঙ্গই তুলেছেন মমতা। জানিয়ে দিয়েছেন, সায়নীর উপর এই ধমক বা হুমকি চলবে না। যদিও মমতার এ কথার প্রসঙ্গে একটি পুরনো ভিডিওর কথা মনে পড়ে গেছে অনেকেরই। সে ভিডিওতেও সায়নী কড়া গলায় প্রশ্ন তুলেছেন, শিল্পীর স্বাধীনতা নিয়ে। তার প্রেক্ষাপট ছিল, সরকারি কোপে অনীক দত্ত পরিচালিত সিনেমা ‘ভবিষ্যতের ভূত’ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা। সেখানে অবশ্য বর্তমান শাসক দলের বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তুলেছিলেন সায়নী।

পুরুলিয়ার সভায় এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের ঘরের মেয়ের মতোই, কারও বোন, কারও দিদি, কারও আন্টি। আমি আপনাদের পরিবারের একজন’। দলত্যাগীদের নিশানা করে মমতা এদিন বলেন, ‘যাঁরা চলে যাচ্ছেন, বুঝবেন আপদ বিদেয় হয়েছে। তিন ধরনের লোক রয়েছে রাজনীতিতে। লোভী, ভোগী, ত্যাগী’। উল্লেখ্য, সোমবার নন্দীগ্রামের সভাতেও তৃণমূলনেত্রীর গলায় এই মন্তব্য শোনা গিয়েছে।

অন্যদিকে, গত সপ্তাহে দলের সঙ্গে ‘মানভঞ্জনে’র পর এদিন পুরুলিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় বিজেপি-কে নিশানা করলেন শতাব্দী রায়। বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ বলেন, ‘বিজেপি মানুষের জন্য কাজ করছেন। যে নেতারা এত কথা বলছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করুন তো, জিএসটি-র টাকা কেন দেয়নি? কেন নতুন সংসদ ভবন বানানো হচ্ছে? কীসের প্রয়োজন নতুন সংসদ ভবনের? সাংসদদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছে? সংসদ ভবনের থেকে খাবার, মাথার ছাদ অনেক প্রয়োজন’। শতাব্দী প্রসঙ্গে মমতা এদিন বলেন, ‘ওঁর কথায় আমি মুগ্ধ’।

পুরুলিয়ায় জনসভা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি যা বললেন —


আমি শতাব্দীর কথায় মোহিত। খুব রাজনৈতিক কথা বলছিল।


আমি পুরুলিয়া নিয়ে বিশেষ জানতাম না। আজ সকালে একটা বই পড়ছিলাম। জানলাম পুরুলিয়ায় ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। পুরুলিয়াতে একটা ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তা নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছিল।
আমি নিজে কুরমালি ভাষা জানি। কুড়ুক ভাষা জানি। আমরা অলচিকি ভাষাকে শুধু স্বীকৃতি দিয়েছি তা নয়, আদিবাসীদের ভাষা আকাডেমিও তৈরি করেছি।


আমরা আইন করেছি আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া যাবে না।
কুম্ভকর বাগদি, বাউড়ি এদের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। বাউড়ি সংস্কৃতি বোর্ড তৈরি করেছি। অলচিকি অভিধান তৈরি করেছি।
বিজেপি নেতারা ভুলভাল বুঝিয়ে ভোট নিয়ে পালিয়ে গেছে দিল্লি। যাঁকে লোকসভায় ভোট দিয়েছিলেন, কোনও উন্নয়ন করেছেন? কোভিডের সময় তাকিয়ে দেখেছে?

নির্বাচনের আগে মণ্ডামিঠাই খাওয়াবে। নির্বাচনের পর কাঁচাকলা খাওয়াবে।
বাংলায় যত না আছে, তার থেকে বেশি মিডিয়া ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখাবে।


অমিত শাহর কথায় সার্ভে পাল্টে দিল। বলেছে, না এটা বলতে পারবে না। তোমরা বলো তৃণমূল পাবে ১৫৮, বিজেপি পাবে ৯২। কীসের সংবাদমাধ্যম, কী ব্যবসা? ক্ষমতা আছে পুলওয়ামা নিয়ে বলার কথা। ক্ষমতা আছে দাঙ্গা নিয়ে বলার।


যখনই সংবাদমাধ্যম দেখাবে তৃণমূল কম পাবে, জেনে রাখবেন যা বলবে তার চার ডবল আসন পাবে তৃণমূল।


শুধু বিজেপি চমকাতে পারে, আমরা চমকাই না তাই। শুধু বিজেপি ইনকাম ট্যাক্সের ভয় দেখায়, আর আমাদের ইনকাম ট্যাক্স নেই তাই?
বিজেপি ফেক ভিডিও ছাড়ে। সব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছে। সেগুলো একদম বিশ্বাস করবে না।

বিজেপি এলে পুরুলিয়া থাকবে না, রূপসী বাংলা থাকবে না। আবার মাওবাদীরা এসে…। মাওবাদীদের থেকে বিজেপি আরও ভয়ঙ্কর।
বিজেপি যেখানে ঢুকবে, বাঁশ হয়ে ঢুকবে আর ফালি হয়ে বেরোবে। যদি বলেন, কোনটা বিষাক্ত সাপ কোবরা না কেউটে। এক ছোবলেই শেষ তার নাম বিজেপি। যাকে ধরল, তাকে খেয়ে নিল, চলে গেল।


ভোট এলে বাংলার কথা মনে পড়ে। বলে বোঙ্গাল, ভোটের জন্য কাঙ্গাল। পুরুলিয়া জানে, না অযোধ্যা জানে, না ঝালদা জানে? কী জানে, কিস্যু জানে না।
মমতার সভায় লোক আসেনা? কে শিখিয়ে দিয়েছে? দিল্লি?


সায়নী বলে একটা মেয়ে, তাকে বিজেপি ধমকাচ্ছে। কেন? এতো বড় ক্ষমতা! তুমি উত্তরপ্রদেশে ধমকাও, বিহারে ধমকাও, বাংলাতে ধমকানোর আশা রাখো কোথা থেকে? বাংলায় ধমকালে মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দেবে মানুষ। ক্ষমতা থাকে সায়নীর গায়ে হাত দিয়ে দেখাও, ক্ষমতা থাকলে টলিউডের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও। ক্ষমতা থাকলে সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও।

বয়স হয়ে গেছে তবুও ভিমরতি যায় না। নাতনির বয়সী মেয়ে, তাঁকে প্রতিদিন থ্রেট করছে। কীসের জন্য, তার কি স্বাধীন ভাবে কথা বলার অধিকার নেই? নিশ্চয়ই আছে।
এই বসুন তো বসুন, প্রতি জায়গায় চলে আসে দু-চার জন। বক্তব্য থাকলে লিখে আনবেন। মিটিংয়ে গণ্ডগোল করবেন না। আমাকে এখানে বললে একটি কাজও করব না। মিটিং নষ্ট করার অধিকার কে দিচ্ছে। পোষায় আর না। যতই দাও ততই চায়। দেওয়ার সিস্টেম আছে তো। চিঠি লিখুন, চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিন।


এরা কারা? আমি তো বুঝতেই পারছি না। আইসিডিএস না কি! তোমরা কী এসএলও? এই তোমরা কী প্রাণীমিত্র? তোমাদের দেড় হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। আরে তোমরা তো সাত আটটা লোক মিলে পাবলিক মিটিং ডিস্টার্ব করছ। এ বার কিন্তু মিটিংয়ে ডিস্টার্ব করলে আমি কিন্তু অ্যাকশন নেব।

অন্য কারও মিটিংয়ে এরকম করতে পারতে? বিজেপি শিখিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমি কিন্তু বিজেপির মিছিলে লোক পাঠিয়ে দেব, সিপিএমের মিছিলে লোক পাঠিয়ে দেব। চালাকি বুঝিয়ে দেব। প্রত্যেকটা মিটিংয়ে এরকম করছে। প্রত্যেকটা মিটিংয়ে এরকম করছে।

মেয়েদের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে আর এরকম করছে।
বাংলায় ৩০ লক্ষ লোককে সিপিএম কী করেছিল? কাউকে দু’শ টাকা কাউকে ৫০ টাকা। আমি তুলে নিয়ে এসে টাকা বাড়ালাম।
আমি চাই পুরুলিয়ায় ঢেলে হোটেল তৈরি হোক, ঢেলে বাজার তৈরি হোক, যাতে এখানকার ছেলেমেয়েদের কাজের জন্য বাইরে যেতে না হয়।


সিপিএম তো নিজেকে বিজেপির হাতে তুলে দিয়েছে। কংগ্রেসও তাই করেছে।
কেউ কেউ দেখবেন চলে যাচ্ছে। ভালই হচ্ছে। আপদ বিদেয় হচ্ছে।
বিজেপির শৃঙ্খলের কারাগার ভেঙে করো চুরমার। কেউ কিছু বললেই তাকে গুলি করে মেরে দেয়, দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়। কীসের দম্ভ, কীসের অহঙ্কার।


বাংলাকে বেচতে দিও না, বাংলাকে বিক্রি করতে দিও না। বিজেপি চায় বাংলা দখল করে বাংলাকে পরাধীন করতে। যে যায় বিজেপিতে যাক গিয়ে। তাদের মাথাগুলো বিক্রি করে দিক। আমরা বিজেপির কাছে মাথা বিক্রি করব না।

রোজ রোজ শাড়ি বদলানো যায়। কিন্তু রোজ রোজ নিজের চরিত্র বদল করা যায় না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here