দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ গত কাল রাত পর্যন্ত ঠিক ছিল মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে। মারাঠা মুলুকে কংগ্রেস, এনসিপি এবং শিবসেনার জোট সরকার হবে। আজ শনিবার দেশের সবকটি দৈনিক সংবাদপত্রে ঢালাও করে সেটাই প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু চিত্রনাট্যের একদম শেষেই যেন ট্যুইস্ট লেখা ছিল! সাত সকালে দেখা গেল, মুম্বইয়ের রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছেন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছেন এনসিপি নেতা তথা শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত পওয়ার।
শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গোটা দেশের কাছেই এ হল বড় চমক। কাল রাত পর্যন্ত যাঁরা জানতেন মহারাষ্ট্রে বিজেপি-কে বাদ দিয়েই সরকার গঠন হতে চলেছে, ঘুম থেকে উঠে তাঁরাই দেখলেন শপথ গ্রহণ করে ফেলেছেন ফড়নবীশ। আরও বিস্ময়, শরদ পওয়ারকে নিয়ে। যে মানুষটা শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেছিলেন, উদ্ধব ঠাকরেই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তাঁর দল রাতারাতি ভোল বদলে, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে গত বিশ বছরের যাবতীয় ভাষণ বেমালুম ভুলে গিয়ে বিজেপি-র হাত ধরে ফেলল। শুধু তা নয়, কেউ কিছু জানতে পারার আগেই উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথও নিয়ে নিলেন পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার।
মুম্বইয়ের রাজভবনে এ দিন সকাল ৮ টা ৫ মিনিটে দেবেন্দ্র ফড়নবীশ ও অজিত পাওয়ারকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছিল। এ দিন রাজভবনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর জানানো হয় যে, রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
শপথ অনুষ্ঠানের পর মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ বলেন, মহারাষ্ট্রে সুশাসন দেওয়ার জন্য বিজেপি-কে মানুষ বিপুল ভাবে ভোট দিয়েছিলেন। জোট শরিক হিসাবে শিবসেনাও অনেক আসনে জিতেছিল। কিন্তু ভোটের পরই বেচাল শুরু করেছিল শিবসেনা। যা রাজ্যের পক্ষে শুভ ছিল না। মহারাষ্ট্রে খিচুড়ি সরকার চায় না মানুষ।
ফড়নবীশ ও অজিত পাওয়ারকে টুইট বার্তায় অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।
Congratulations to @Dev_Fadnavis Ji and @AjitPawarSpeaks Ji on taking oath as the CM and Deputy CM of Maharashtra respectively. I am confident they will work diligently for the bright future of Maharashtra.
— Narendra Modi (@narendramodi) November 23, 2019
श्री @Dev_Fadnavis जी को महाराष्ट्र के मुख्यमंत्री और श्री @AjitPawarSpeaks को प्रदेश के उपमुख्यमंत्री के रूप में शपथ लेने पर हार्दिक बधाई।
मुझे विश्वास है कि यह सरकार महाराष्ट्र के विकास और कल्याण के प्रति निरंतर कटिबद्ध रहेगी और प्रदेश में प्रगति के नये मापदंड स्थापित करेगी।
— Amit Shah (@AmitShah) November 23, 2019
এখন কৌতূহল হল, গত বারো ঘন্টায় কী খেলা হয়ে গেল তলায় তলায়?
কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “সকালে ঘুম থেকে আমি তো ভেবেছিলাম ভুয়ো খবর। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা ঠিক যে সরকার গঠনের ব্যাপারে কংগ্রেস, এনসিপি, শিবসেনা অনেক সময় নিচ্ছিল”। এনসিপি প্রধানকে খোঁচা দিয়ে সিঙ্ঘভি বলেন, “তবে মানতেই হবে, পওয়ার তুস্সি গ্রেট হো!”
অনেকের মতে, এই খেলা হঠাৎ করে হয়নি। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন শরদ পাওয়ার। সে দিনই তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়ে গিয়েছিল। এর পরেও কংগ্রেস ও শিবসেনার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটা ছিল শুধুই নাটক।
কিন্তু এনসিপি নেতা তারিক আনোয়ার বলেন, আমি তো শুনছি এটা অজিত পাওয়ারের খেলা। শরদ পাওয়ার জানতেনই না। দলের মধ্যে ক্যু করেছেন অজিত। এই ভয়ঙ্কর কাণ্ডটা কী করে হল, আমরাও বুঝতে পারছি না। আশা করছি, খুব শিগগিরই গোটা খেলাটা জেনে যাব।
এর পর যা হয়েছে…
আমিই জানতাম না সরকার হচ্ছে, বিশ্বাস করুন: বললেন শরদ পাওয়ার
মহারাষ্ট্রে শেষমেশ কী খেলা হল তা এখনও স্পষ্ট নয়। শুধু যেটা স্পষ্ট তা হল, মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন বিজেপি-র দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। আর উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার। মহারাষ্টের বিজেপি-এনসিপি জোট সরকার হচ্ছে।
কিন্তু শরদ পাওয়ার দাবি করলেন, বিজেপি-এনসিপি যে সরকার হচ্ছে সেটা তিনিই জানতেন না। শনিবার সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে তিনি জেনেছেন যে, একটু পরই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হতে চলেছে রাজভবনে।
পাওয়ার জানিয়েছেন, তিনি খুব শিগগির সাংবাদিক বৈঠক করবেন এ ব্যাপারে। শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে বলে জানান পাওয়ার। তিনি বলেন, উদ্ধবও তার পর সাংবাদিক সম্মেলন করে যা বলার বলবে।
শনিবার সকালে টুইট করে পাওয়ার লিখেছেন, “মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিজেপিকে সমর্থন করা অজিত পাওয়ারের একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে এনসিপির কোনও যোগ নেই। আমরা ওঁর এই সিদ্ধান্তকে কোনওভাবেই সমর্থন করছি না।”
Ajit Pawar's decision to support the BJP to form the Maharashtra Government is his personal decision and not that of the Nationalist Congress Party (NCP).
We place on record that we do not support or endorse this decision of his.— Sharad Pawar (@PawarSpeaks) November 23, 2019
পাওয়ার ঘনিষ্ঠদের দাবি, ভাইপো অজিত পাওয়ার শরদ পাওয়ারের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে ক্যু করেছেন। তাতে পূর্ণ মদত যুগিয়ে গিয়েছে অমিত শাহ বাহিনী। একদিকে যখন কংগ্রেস ও শিবসেনার সঙ্গে জোট করে সরকার গঠনের জন্য এগিয়েছেন শরদ পাওয়ার তখন, তলায় তলায় অন্য খেলা খেলেছে বিজেপি।
এখন প্রশ্ন হল, এনসিপি-র সব বিধায়কের সমর্থন কি রয়েছে অজিত পাওয়ারের সঙ্গে। মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের জন্য ১৪৫ জন বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন। বিজেপি-র ১০৫ টি আসনে জিতেছে এ বার। আরও চল্লিশ বিধায়কের সমর্থন তাদের প্রয়োজন। অন্য দিকে এনসিপি ৫৪ টি আসনে জিতেছে। অজিত পওয়ার যদি এনসিপি দলেই ভাঙন ধরাতে চান, তা হলে অন্তত দলের দুই তৃতীয়াংশ তথা ৩৬ জন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে থাকা দরকার। ফলে অনেকের মতে, নাটকের এখনও শেষ হয়নি। কোথাকার জল এখন কোথায় গড়ায় সেটাই দেখার।
এর পর যা হয়েছে…
অজিত পাওয়ার ছুরি মেরেছে পিছন থেকে, এটা বেইমানি: শিবসেনা
এমন আঘাতের জন্য নিশ্চয়ই প্রস্তুত ছিল না মাতশ্রী! ঘটনার প্রাথমিক অভিঘাত সামলে শনিবার প্রথম প্রতিক্রিয়াতেই ঝলসে উঠতে চাইলেন শিব সৈনিকরা। বললেন, এ হল বেইমানি! বিশ্বাসঘাতকতা!
শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্ধব ঠাকরেকে পাশে নিয়ে এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ার যখন ঘোষণা মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস, শিবসেনা ও তাঁদের সরকার হচ্ছে, তার পর থেকেই বাল সাহেব ঠাকরের বাসভবন মাতশ্রীর বাইরে বাজি ফেটেছে। দু’দশকেরও বেশি সময়ে খরা কাটিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর তখত দখল করতে চলেছেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী হবেন বালাসাহেব পুত্র উদ্ধব!
কিন্তু সকালে উঠেই যেন দুঃস্বপ্ন দেখেছে শিবসেনা! ঘুমের ঘোর কাটার আগেই রাজভবনে শপথ নিয়ে ফেলেছেন বিজেপি-র দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। সেই সঙ্গে উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন এনসিপি নেতা তথা শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার।
এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত বলেন, “গত কুড়ি দিনের বেশি সময় ধরে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে এনসিপি-র সঙ্গে। অজিত পাওয়ারও সেই আলোচনায় সামিল ছিলেন। তার পর অজিত পাওয়ার যা করলেন তা হল পিছন থেকে ছুরি মারা। মহারাষ্ট্রের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন অজিত”।
জানা গিয়েছে, খুব শিগগির সাংবাদিক বৈঠক করবেন উদ্ধব ঠাকরেও। এ ভাবে সরকার গঠনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হতে পারে শিবসেনা। কারণ, মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছিল। তা কখন প্রত্যাহার হল, কখনওই বা সরকার গঠনের জন্য রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়াড়ি দেবেন্দ্র ফড়নবীশকে আমন্ত্রণ জানালেন, আর তার আগে কখনওই বা দেবেন্দ্র ফড়নবীশ ও অজিত পাওয়ার রাজভবনে গিয়ে বললেন, তাঁদের কাছে সংখ্যার তাকত রয়েছে তার কোনওটাই স্পষ্ট নয়। শিবসেনার কথায়, এ হল গণতন্ত্রের কালো দিন। কেন্দ্রে সরকারে থাকার সুবাদে মোদী-অমিত শাহ যা নয় তাই করছে। বেশি দিন তা ধর্মে সইবে না।