দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জল্পনার মধ্যেই আজ ফের একাধিক অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যেতে চলেছে শুভেন্দু অধিকারীকে।
বৃহস্পতিবার শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর ১৩১ তম জন্মদিন কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। হলদিয়ায় পৃথক মিছিল করবেন বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীরা এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। শুভেন্দু নিজে থাকবেন তমলুকে। হলদিয়ার মিছিলে তিনি থাকবেন না। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাসদর তমলুকে ক্ষুদিরাম স্মরণে পৃথক ‘অরাজনৈতিক’ কর্মসূচিতে যোগ দেবেন তিনি। শহরের হাসপাতাল মোড়ে ক্ষুদিরামের মূর্তিতে মালা দেওয়ার পরে হেঁটে যাবেন হ্যামিল্টন স্কুলে। সেখানে একটি সভা করার কথা তাঁর। প্রসঙ্গত, ক্ষুদিরাম হ্যামিল্টন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। তমলুক থেকে শুভেন্দু যাবেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় একটি কর্মসূচিতে।
অন্য দিকে, ক্ষুদিরামের জন্মদিনে হলদিয়ায় আলাদা মিছিল করবেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও। হলদিয়ার দু’টি মিছিলই একই সময়ে শুরু হওয়ার কথা। পূর্ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘দাদার অনুগামী’রা বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টে নাগাদ কদমতলা থেকে সিটি সেন্টার পর্যন্ত মিছিল করবেন। এরপর সিটি সেন্টারে একটি সভা করার কথা রয়েছে। যেখানে স্থানীয় বিশিষ্ট নাগরিক এবং সমাজকর্মীদের বক্তৃতা করার কথা৷
অন্যদিকে, সম্ভবত, আগামী রবিবার অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর প্রথমবার জনসমক্ষে মুখ খুলতে পারেন তিনি। সেখানেই নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে মত প্রকাশ করতে পারেন শুভেন্দু। এমনটাই দাবি বাংলার বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের।
রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু পর্বের ধোঁয়াশা অব্যাহত। এদিনও শুভেন্দু অধিকারীর বেশ কিছু অরাজনৈতিক সভা রয়েছে। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ১৩১ তম জন্মবার্ষিকীতে একটি সভা রয়েছে তাঁর। তমলুক, গড়বেত, হলদিয়ায় পর পর কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। তবে রাজনৈতিক মহলের ধারনা, সম্ভবত আজকের এই সভাগুলি থেকে রাজনৈতিক বিষয়ে কোনও মুখ খুলবেন না শুভেন্দু অধিকারী। খুব সম্ভবত যাবতীয় প্রশ্নের তিনি উত্তর দেবেন ৬ তারিখ। আগামি সোমবার মেদিনীপুরে সভা করার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগেই রবিবার শুভেন্দু জনসমক্ষে মুখ খুলতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রায় মাসখানেকের বেশি সময় ধরে রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গ দূরত্ব বাড়ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। বিভিন্ন অরাজনৈতিক সভায় দেখা যাচ্ছিল তাকে। সেইসঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে পোস্টারও পড়তে থাকে। এর পরেই সক্রিয় হন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। তিনি নিজেই দুটি বৈঠক করেন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। কিন্তু প্রথম দুটি বৈঠকে কোনও রফাসূত্র হয়নি। তার ঠিক পরে রাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন শুভেন্দু। এমন অবস্থায় শুভেন্দুকে দলে আসলে স্বাগত জানানো হবে বলে মন্তব্য করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। চাপ বাড়তে থাকে রাজ্যের শাসকদলের উপরে। এর পরেই শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃতীয় বৈঠকে উপস্থিত থাকেন সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশান্ত কিশোর। সেই বৈঠক ইতিবাচক বলে দাবি করেছিলেন সৌগত রায়। তিনি বলেছিলেন, সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে৷
কিন্তু তার পরের দিন শুভেন্দু আবার সৌগতবাবুকে মেসেজ করে জানিয়ে দেন, আমার বক্তব্যের এখনও সমাধান হয়নি। সেই সমাধান না করেই আমার ওপর সব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ৬ ডিসেম্বর আমার সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা ছিল। সাংবাদিক সম্মেলন করে সব জানাতাম। কিন্তু তার আগেই আপনারা সংবাদমাধ্যমকে সব জানিয়ে দিলেন। ফলে একসাথে কাজ করা মুশকিল। আমাকে মাফ করবেন।’ আর এমন মেসেজের কথা স্বীকার করে নিয়ে সৌগত রায় বলেন, বৈঠকে যা হয়েছিল আমি তা সত্যনিষ্ঠ ভাবে তুলে ধরেছি, এর পরে শুভেন্দু কোনও সিদ্ধান্ত নিলে এটা তাঁর বিষয়। এমন অবস্থায় রবিবার শুভেন্দু প্রথমবার এই বিষয়ে মুখ খুলে ঠিক কী বার্তা দেন, সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে৷
এদিকে কলকাতায় ফের রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী-র ছবি দিয়ে পোস্টার। দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ‘আমরা দাদার অনুগামী’ লেখা পোস্টার সাঁটিয়েছেন তাঁর সমর্থকরা। সেখানে তাঁর ছবিও রয়েছে। যা নিয়ে ফের জল্পনা শুরু হয়েছে।
দিন কয়েক আগে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের পৌরহিত্যে তৃণমূলের আর এক সাংসদ, যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে বৈঠক হয়। প্রথমে মনে করা হচ্ছিল, সব কেটে গিয়েছে। কিন্তু পরে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠমহলে জানান, বৈঠকের কথা সংবাদমাধ্যমে পৌঁছনোয় তিনি ক্ষুব্ধ। ফলে নতুন করে জট তৈরি হয়েছে। আর এর মাঝে এই পোস্টার সেই জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিল বলে মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর, গোলপার্ক, গড়িয়াহাট মোড়, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, বাসন্তী দেবী কলেজ-সহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় ওই পোস্টারগুলি দেখা যায়। সেখানে শুভেন্দু ছবি রয়েছে। লেখা রয়েছে ‘মানুষের কাজ করতে কোন পদ লাগে না’।
এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর নামে পোস্টার পড়েছে। তমলুক, গড়বেতা, হলদিয়া-সহ আরও অনেক জায়গায়। এর আগে উত্তর কলকাতায় শ্যামবাজার চত্বরেও তাঁর নাম এবং ছবি দিয়ে পোস্টার পড়েছিল। সেখানে বেশিরভাগ জায়গায় লেখা ‘আমরা দাদার অনুগামী’।
ফলে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি তিনি রাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর আগে ছেড়ে দিয়েছেন হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স এবং হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ।
শুভেন্দুকে নিয়ে তৈরি হওয়া জট কাটাতে আসরে নেমেছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। মঙ্গলবার উত্তর কলকাতায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে বৈঠক হয়। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এই দুজনের মধ্যেই ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের পরামর্শদাতা, ভোট বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কিশোর৷