দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ সোমবার দুপুরেই ছবিটা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। কারণ, দিদি তখন বাঁকুড়ায়। এদিকে কলকাতায় সরকারের দেওয়া পুলিশি পাইলট ছেড়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু।
তার ৪৮ ঘণ্টা পর দিদি কলকাতায় ফিরতেই বুধবার হুগলি রিভারব্রিজ কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। আর আজ কোনও রহস্য বাকি রাখলেন না। শুক্রবার সকাল হতেই মন্ত্রিসভা তথা সরকারের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন তৃণমূলের অন্যতম দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সন্দেহ নেই, একুশের ভোটের আগে এ এক বড় ঘটনা। এমনিতেই শুভেন্দুর দলত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছেন অনেকেই। তবু দলের প্রবীণ সাংসদ শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনায় বসার পর অনেকে আশায় বুক বাঁধছিলেন। কিন্তু শুক্রবার শুভেন্দুর মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফার খবর পেয়ে আন্দোলিত তৃণমূল। দলের উপরের সারির অনেক নেতা থেকে শুরু করে নিচু তলার বহু কর্মী মনে করছেন, শুভেন্দুর দলত্যাগ এখন সময়ের অপেক্ষা।
শুভেন্দুর অনুগামীরা যে এতে যারপরনাই উৎসাহিত, তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, নন্দীগ্রামের সভার পর দলের এক নেতা যখন শুভেন্দু ও তাঁর পরিবারকে উদ্দেশ করে কুকথা বলেছিলেন, তখন থেকেই তাঁরা চোয়াল শক্ত করছেন। তাঁদের অনেকেই অধীর ও অধৈর্য্য হয়ে পড়ছিলেন, দাদা এর পরেও ইস্তফা দিচ্ছেন না কেন।
কিন্তু শুভেন্দু যেন কৌশলী। যা কিছু করার শালীনতা ও প্রশাসনিক শিষ্টাচারের সীমার মধ্যে থেকেই করতে চেয়েছেন। পেশাদার প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে তিনি ‘অনিবার্য’ কারণেই দেখা করতে চাননি। কিন্তু দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় যখন তখন তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন তখন এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছেন। সৌগতবাবু দ্বিতীয় বার কথা বলতে চাইলে তাতেও না করেননি শুভেন্দু। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, দাদার বক্তব্যের সঙ্গে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সহমত হননি। তাই দাদাও আর আপস করে থাকতে চাননি। কারণ, অল্প বয়স থেকেই শুভেন্দু স্বাভিমানী। কাঁথি পুরসভার কাউন্সিলর হওয়ার সময় থেকেই সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে চলেন। তিনি মনে করছিলেন, দল এখন পুরোপুরি আর দিদির হাতে নেই। তাতে মর্যাদার সঙ্গে কাজ করতে তাঁর অসুবিধাই হচ্ছিল। তাই এই ইস্তফা।
শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ক্ষমতা থাকলে পদ ছেড়ে কথা বলুক। দাদা পদ ছেড়ে দিয়েছেন। এখন অনেক কথা হবে।”
শুভেন্দুর পদত্যাগপত্র পেয়েছেন বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন রাজ্যপাল। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আজ দুপুর ১টা বেজে ৫ মিনিটে শুভেন্দু অধিকারীর দফতর থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা পদত্যাগ পত্র আমাকে ফরোয়ার্ড করা হয়। সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট থেকে বিষয়টি দেখা হবে৷
Today at 1:05 pm a resignation letter of Mr. Suvendu Adhikari from office as minister addressed to Hon’ble Chief Minister has been forwarded to me.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) November 27, 2020
The issue will be addressed from constitutional perspective. pic.twitter.com/cxjF68uomH
শুভেন্দু দিল্লি যাচ্ছেন বলে শুরুতে শোনা গিয়েছিল। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, এখনই দিল্লি যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই শুভেন্দুর। তাই তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরাল হচ্ছে। তবে এখনও তৃণমূল ছাড়েননি তিনি। এ নিয়ে তৃণমূলের তরফে সৌগত রায় বলেন, ‘‘এখনও বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেননি উনি। দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও পদত্যাগ করেননি। যত ক্ষণ বিধায়ক আছেন, তত ক্ষণ দলের সদস্য উনি। মন্ত্রিত্ব ছাড়া একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ওঁর। আমি এতে দুঃখিত। ওঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, দল ছাড়বেন না। আমি এখনও আশাবাদী। যত ক্ষণ দলে আছেন, আমি আশা করব এবং চেষ্টা চালিয়ে যাব ওঁকে দলে রাখার৷