মণীশ শুক্ল খুনে গ্রেফতার ২

0
1230

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল খুনের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করা হল। ধৃতদের নাম মহম্মদ খররম ও গুলাব শেখ বলে জানা গিয়েছে। পুরনো শত্রুতার জেরেই খুররম মণীশকে খুনের ষড়যন্ত্র করে বলে দাবি করেছে পুলিশ। সোমবারই মণীশ খুনের মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছিল সিআইডি-র হাতে।

রবিবার রাত ৮ টা নাগাদ টিটাগড়ের বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেয় আততায়ীরা। মণীশের শরীরে অন্তত ১২ টি বুলেট লেগেছে বলে জানা গিয়েছে। ওই খুনের ঘটনার পরই বিজেপি অভিযোগ করে, তৃণমূল আশ্রিত গুণ্ডারাই এর নেপথ্যে রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে পুলিশি মদত। নইলে থানার ঢিল ছোড়া দূরতে এমন ভাবে খুন হতে পারে না।

কিন্তু সূত্রের খবর, ঘটনার তদন্তে নেমে সোমবার ভোরে টিটাগড় এলাকা থেকে এক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ। তার নাম খুররম। টিটাগড়, ভাটপাড়া, জগদ্দল এলাকার অনেকেই জানেন মণীশের সঙ্গে খুররমের সংঘাত অনেক দিনের। খুররমের বাবা ছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতা। তাঁর খুন হওয়ার ঘটনায় মণীশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল।

এদিন পুলিশ খুররমকে আটক করার পর সিআইডি-র অফিসাররা তাঁকে সারাদিন ধরে জেরা করেন। জানা গিয়েছে, সেই সঙ্গে আটক করা হয়েছে এক শার্প শ্যুটারকে। তবে সেই গুলি চালিয়েছিল কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। বরং একটি সূত্রের মতে, হতে পারে মণীশ সম্পর্কে সে তথ্য দিয়েছিল আততায়ীদের।

সোমবারই পুলিশ জানিয়েছিল, মণীশ হত্যাকাণ্ডে একজন অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়েছে। দু’জনকে আটক করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ট্যুইটে এও ইঙ্গিত ছিল যে, রাজনীতি নয়, পুরনো শত্রুতার কারণেই মণীশকে খুন হতে হয়েছে। যদিও বিজেপি সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।

সোমবার এই দু’জনকে আটক করার পর পুলিশ তাৎপর্যভাবেই জানিয়েছিল যে টিটাগড়ের খুনের ঘটনা নিয়ে অহেতুক জল্পনা ঠিক নয়। কারণ, যে ব্যক্তি খুন হয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি খুনের অভিযোগ ও প্রানহাণির চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। হতে পারে ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্ত চালাচ্ছে।
সোমবার গভীর রাতে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে রাজ্য পুলিশের এক বড় কর্তাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, তদন্ত ভালই এগোচ্ছে। কাল সকালের জন্য অপেক্ষা করুন।

সোমবার এনআরএসের লাশঘর থেকে মণীশের মরদেহ রাজভবনে নিয়ে যাওয়ার বেনজির পরিকল্পনা ভেস্তে যায় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে। যদিও এনআরএস হাসপাতাল চত্বর থেকে শুরু করে মধ্য কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তা এসএন ব্যানার্জি রোডে মণীশের দেহ নিয়ে বিজেপি নেতা-কর্মীদের জমায়েত পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় সোমবার সারাদিনই। এমনটা যে হতে পারে, আঁচ অবশ্য সকালে ছিলই। কারণ সকাল থেকেই অর্জুন-ব্রিগেডের সঙ্গে পুলিশের খন্ডযুদ্ধে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের একাংশে স্বাভাবিক জনজীবন থমকে যায়। মুড়ি-মিছরির মতো বোমা পড়তে থাকে রাস্তায়, বাদ ছিল না থানার ছাদও। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল।

এমনিতেই লোকসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্য-রাজনীতিতে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল মার আর পাল্টা মারের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বহুবার বলেছেন, ‘বিজেপিকে জেতালে ব্যারাকপুর হয়।’সেই ব্যারাকপুরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীর নিশানায় সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের প্রধান মনোজ ভার্মা এবং ডেপুটি কমিশনার অজয় ঠাকুর। ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং সরাসরি অভিযোগ করেছেন, যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে সেটা পুলিশ ব্যবহার করে। 

আবার পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ‘যে ধরনের অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে, তা এ রাজ্যের দুষ্কৃতীদের কাছে থাকে না। শুনেছিলাম লোকসভা ভোটের আগে অর্জুন বাইরে থেকে শার্প শ্যুটার আনিয়েছিল।’খুনের কারণ নিয়েও চাপানউতোর। অর্জুনদের অভিযোগ, ‘পুলিশের মদতে তৃণমূল খুন করেছে।’ আর ফিরহাদের পাল্টা বক্তব্য, ‘মণীশ বিজেপিতে শান্তিতে ছিল না। তৃণমূলে ফিরতে চাইছিল। ব্যারাকপুরে অনেক ব্যাপার রয়েছে। 

অনেক নেতা বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরতে চাইছে। তাই কি এমন ঘটনা?’ পাশাপাশি ফিরহাদের এও প্রশ্ন, ‘একই গাড়িতে অর্জুন এবং মণীশ ছিল বলে শুনেছি। সেখান থেকে হঠাৎ অর্জুন নেমে গেল। কেনই বা সেই সময় কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ফোন এল এবং অর্জুন কলকাতায় চলে এল? এটা কোনও চক্রান্ত নয় তো?’

অন্যদের দেওয়া হলেও মণীশকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি বিজেপি। অথচ এদিন কৈলাস বিজয়বর্গীয়ই দাবি করেছেন, অর্জুন তাঁদের আগে জানিয়েছিলেন যে তাঁর এবং তাঁর অনুগামীদের উপর প্রাণঘাতী হামলা হতে পারে।খড়দহের আদর্শপল্লিতে এদিন সকালে মণীশ শুক্লার বাড়িতে ঢল নামে বিজেপি নেতাদের। কৈলাস, মুকুল রায়, অর্জুনরা যান। বাড়ির বাইরে ভিড় জমান প্রচুর বিজেপি কর্মী-সমর্থক। সোমবার রাতে রাজভবন থেকে বেরিয়ে মণীশের বাবা বলেন, ‘রাজ্যপালকে বললাম দেখুন যদি সিবিআই তদন্ত করানো যায়। পুলিশ তো থানাতেই প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করছিল। 

রাজ্যপাল আশ্বাস দিয়েছেন ওঁর এক্তিয়ারের মধ্যে যতটুকু করা সম্ভব করবেন।’ রাতে বিজেপির নেতৃত্বে খড়দহেই ফেরানো হয় মণীশের দেহ।তদন্ত ও খুনের কারণ নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘ভারতের কোনও রাজ্যে যদি ৩৫৬ ধারা জারি করার মতো অবস্থা হয়ে থাকে, তবে সেটা পশ্চিমবঙ্গেই। সরকারের মদত ছাড়া বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের খুনের এই রাজনীতি চলতে পারে না।’

বিজেপির কেন্দ্রীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চাই, এ রাজ্যে আদৌ কি গণতন্ত্র বলে কিছু আছে? তিনি এবং তাঁর দলের প্রতিনিধিরা দেশের অন্য রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে এত সরব। অথচ একবারও মণীশ শুক্লর পরিবারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না!’ যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, ‘এটা রাজনৈতিক খুন নয়। টিটাগড় জুড়ে সাট্টার ঠেক চলে। সিইএসসির ছাইয়ের বখরা নিয়েও গন্ডগোল রয়েছে। এ সবের ভাগ বাঁটোয়ারাই নিয়েই ঝামেলা।’

Previous articleকরোনা আবহে জঙ্গলমহলে প্রশাসনিক বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleসৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,করোনায় আক্রান্ত ,ভর্তি হাসপাতালে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here