দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভোটের দিন ঘোষণা হতেই কলকাতা পুলিশে রদবদল। এডিজি আইনশৃঙ্খলা পদ থেকে জাভেদ শামিমকে সরাল নির্বাচন কমিশন। তাঁর জায়গায় ওই পদে দায়িত্ব নিচ্ছেন দমকলের ডিজি জগমোহন। দমকলের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন জাভেদ শামিম। উল্লেখ্য, শুক্রবারই ভোটের দিন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা পুলিশে যেভাবে বদল করা হল, তা উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
ভোট ঘোষণার মাত্র কয়েক দিন আগে রাজ্য পুলিশের অন্যতম শীর্ষ পদ এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) থেকে জ্ঞানবন্ত সিংকে সরিয়ে জাভেদ শামিমকে সেই পদে বসিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কমিশনের এই পদক্ষেপে বিজেপি-র হাত থাকতে পারে বলে অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর কথায় ‘আমি আশ্চর্য। জাভেদ খুব অভিজ্ঞ অফিসার। আজ বিজেপি-র প্রতিনিধিদল নির্বাচনী দফতরে গেল। তারপরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। যদি কমিশন কোনও দলের নির্দেশে এই পদক্ষেপ করে থাকে, তাহলে মানুষ ভরসা হারাবে।’
পুলিশে রদবদল প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে সুষ্ঠু ভোট করা চ্যালেঞ্জ। এখন নির্বাচন কমিশন যেটা ভালো মনে করবে, সেটা করবে। কমিশনের উদ্দেশ্য একটাই, সুষ্ঠু নির্বাচন। বিজেপি-র থেকে আমরা দাবি করেছি, অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস-দের পোষা হচ্ছে। যেমন সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, তিনি তো অবসর নিয়েছেন। তবুও তাঁকে কেন পদ দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে?’
উল্লেখ্য, ভোট ঘোষণার কয়েকদিন আগেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে বদল ঘটানো হয়। অনুজ শর্মাকে সরিয়ে কলকাতার সিপি করা হয়েছে সৌমেন মিত্রকে। অনুজ শর্মাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এডিজি (সিআইডি) পদে। সিদ্ধিনাথ গুপ্তাকে এডিজি (সিআইডি) পদ থেকে বদলি করে পাঠানো হয়েছে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) পদে। সৌমেন মিত্রের পুরনো পদ অর্থাৎ এডিজি (প্রশিক্ষণ)-এ স্থলাভিষিক্ত হন দেবাশিস রায়। তিনি এর আগে এডিজি (সশস্ত্র পুলিশ) পদে বহাল ছিলেন।
গতবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় নিয়ে এসেছিল সৌমেন মিত্রকে। তবে ২১ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশ হওয়ার পরই সৌমেনবাবুকে এডিজি এডিজি আইজিপি (প্রশিক্ষণ) পদে বদলি করে দেয় রাজ্য সরকার।
প্রসঙ্গত, বাংলায় এবারের বিধানসভা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে হিংসা ঠিকাতে বাড়তি তৎপর নির্বাচন কমিশন। বাংলায় আট দফা নির্বাচনের সূচি ঘোষণা করেছে কমিশন। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ হবে ২৭ মার্চ। দ্বিতীয় দফায় ভোট ১ এপ্রিল, তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ ৬ এপ্রিল,চতুর্থ দফা ১০ এপ্রিল,পঞ্চম দফার ভোট ১৭ এপ্রিল, ষষ্ঠ দফার ভোট ২২ এপ্রিল, সপ্তম দফা ২৬ এপ্রিল এবং অষ্টম অর্থাৎ শেষ দফার ভোট ২৯ এপ্রিল। ভোটের ফল জানা যাবে আগামী ২ মে। এবার নির্বাচনে বাংলায় দুই বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে ও এম কে দাসকে নিযুক্ত করেছে কমিশন।
কমিশনের এ হেন পদক্ষেপের নেপথ্যে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, অধীর চৌধুরী, আবদুল মান্নান, সুজন চক্রবর্তী মায় সমস্ত বিরোধী নেতার অভিন্ন অভিযোগ যে বাংলায় পুলিশরাজ চালিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ দিয়ে দল ও সরকার দুটোই চালিয়েছেন তিনি। তাঁদের অভিযোগ, ভোটের সময়ে এক শ্রেণির পুলিশ কর্তা তৃণমূলের জেলা সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের মতো কাজ করেন। শুধু বিরোধীরা নয়, এ ব্যাপারে ইদানীং সরব রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও।
এই সব অভিযোগ কমিশনের অজানা নয়। বরং এও তাঁরা এও দেখেছেন যে পঞ্চায়েত ভোটে যখন ব্যালট বাক্স জলে ফেলা হচ্ছে, গণনা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখন এডিজি আইনশৃঙ্খলা বিবৃতি দিয়ে বলছেন, মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। আর বিরোধীরা বলছেন, গণতন্ত্রের প্রহসন হচ্ছে।
কিন্তু এ বার ভোটে এই সব যে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন, তা শুরুতেই হয়তো বুঝিয়ে দিতে চাইছে। সন্দেহ নেই, জাভেদ শামিমকে সরালে শাসক দলের থেকেও প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। এমনিতেই ভোট ঘোষণার সময় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, কমিশন মোদী-অমিত শাহর কথায় চলছে। এবং অতি সক্রিয়তার স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।