দেশের সময়, বনগাঁ: সুপার সাইক্লোন আমপানের ধাক্কায় বিপর্যস্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। বিদ্যুৎ নেই, জল নেই, সব মিলিয়ে তীব্র সংকটের মধ্যে রয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। পানীয় জল ও বিদ্যুতের দাবিতে জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। একই দাবিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে বিক্ষোভ অবরোধ চলছে উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁতেও । পরিস্থিতি যখন এমনই তখন মানুষকে শনিবারই কিছুটা ধৈর্য্য রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য শনিবার বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে হেলিকপ্টারে কাকদ্বীপ উড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। বাড়ি থেকে বেহালা যাওয়ার পথে তারাতলা সিইএসসি অফিসের সামনে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখে কনভয় থামিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গাড়ি থেকে নেমে মানুষের কাছে গিয়ে আবেদন জানিয়ে বলেন, আমি সমস্ত পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। চেষ্টা চলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার। তারাতলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার বাড়িতেও লাইন (বিদ্যুৎ সংযোগ) নেই। ভূতের মতো আছি।”
এদিন বেহালা ফ্লাইং ক্লাবে পৌঁছে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, “কেউ কেউ লোকজনকে ক্ষেপিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছেন। আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, এটা করবেন না। এখন রাজনীতি করার সময় নয়।”
ফের রবিবার সকালে বনগাঁয় বিদ্যুৎ পরিষেবা চালুর দাবিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পেট্রাপোল গামী যশোর রোডের উপর পথ অবরোধ করেন জয়পুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। অবরোধকারিদের দাবি আমপান ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকেই বিপর্যস্ত গোটা এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ায় প্রখর গরমে অসুস্থ্ হয়ে পড়ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধরাও৷ রাস্তার মাঝে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের খুটি, তারের ওপর পড়ে রয়েছে ঝড়ে ভেঙেপড়া গাছ ও বড়বড় ডাল ৷ স্থানীয়রা অভিযোগ বিক্ষোভ দেখানোর সঙ্গে গলার সুর চড়িয়ে বলেন বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হওয়া দূরের কথা ,ঘটনার পর থেকে এখনও পর্যন্ত এলাকায় আসেননি কোন বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরাও। তাঁদের দাবি অন্তত কাজ শুরু হোক। জয়পুর এবং ফুলতলা এলাকা শুধু নয় গোটা বনগাঁ এলাকাতেই বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে , অতিদ্রুত কাজ চালু করতে হবে৷ এদিন দীর্ঘ সময় অবরোধ চলার পর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পেট্রাপোল থানার পুলিশ, পেট্রাপোল থানা আধিকারিক, অবরোধকারিদের সাথে কথা বলেন ,কিন্তু অবরোধ তুলতে ব্যর্থ হন প্রথমে, তারপর বনগাঁ থানার পুলিশ পৌঁছায় ঘটনাস্থলে, অবরোধকারিদের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনা পর পুলিশ কর্মীদের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্প মোড় থেকে কাজ শুরু করা হবে আজ রবিবার থেকেই , এবং দ্রুত স্বাভাবিক হবে বিদ্যুৎ পরিষেবা এই প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর অবরোধ তুলে নেন স্থানীয়রা।
বস্তুত আমপানের অভিঘাতে গোটা রাজ্যে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। জায়গায় জায়গায় গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যেমন রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। তেমনই টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত। ভেঙে পড়েছে ইন্টারনেট ব্যবস্থাও। এ ব্যাপারে শনিবারই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমার ফোনও কাজ করছে না। আমি আমার মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। জেলায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।”
বহু জায়গায় নাগরিকদের বক্তব্য, সিইএসসি সাড়া দিচ্ছে না। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি নিজে সিইএসসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ওরা বলছে করোনার জন্য ৯০ শতাংশ লোক এদিক ওদিক ছিটকে গেছে। চেষ্টা করা হচ্ছে আরও লোক কাজে লাগানোর।”
ওড়িশার ফণীর উদাহরণ টেনে এদিন মমতা বলেন, “ওদের দেড়মাস লেগেছিল বিদ্যুৎসংযোগ পুনর্গঠন করতে। এখানে তিনগুণ ঝড় হয়েছে। শহরে সাতদিন লাগবেই। গ্রামেগঞ্জে কতদিন লাগবে আমি জানি না।” বহু জায়গায় যে গাছ উপড়ে রয়েছে তা সরানোর লোক পাওয়া যাচ্ছে না। এদিন মুখ্যমন্ত্রী সেই গাছ সরাতে পাড়ার ছেলে ও ক্লাবগুলোর কাছে আবেদন জানান। বারবার মমতা বলেন, নজিরবিহীন দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে বাংলা। সারা রাজ্যে এক কোটি বাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে জানান তিনি।
১৭৩৭ সালে এমন ঝড় হয়েছিল। তারপর এইরকম হল। একটু সহ্য করতে হবে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। সবটা সরকারের হাতে নেই।”