ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্যে বাধা কেন, রাজীব সিনহাকে ফের কড়া চিঠি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের

0
1525

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ লকডাউনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে অনেক আগেই অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে ভারতে ট্রাক ঢোকার প্রক্রিয়া কেন শুরু হয়নি তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে চিঠি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা। স্বরাষ্ট্রসচিবের স্পষ্ট বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অবমাননা করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শুধু আইন লঙ্ঘন করেনি। তা সংবিধানের ২৫৩, ২৫৬ এবং ২৫৭ ধারা লঙ্ঘনেরও সামিল।

মঙ্গলবার ওই রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। তিনি চিঠিতে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহণের জন্য গত ২৪ এপ্রিল অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। অর্থাৎ ভারত-নেপাল, ভারত-ভূটান ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহণ শুরু করা যাবে। কিন্তু তাঁর কাছে রিপোর্ট রয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের রাজ্যের সীমানার মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ পণ্য পরিবহণ এখনও শুরু করেনি। তার ফলে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হওয়া বিপুল সংখ্যক পণ্যবাহী ট্রাক বিভিন্ন বর্ডার ক্রসিং পোস্টে আটকে রয়েছে। একই ভাবে বাংলাদেশে যে সব ট্রাক ও তাদের ড্রাইভার পণ্য সরবরাহ করতে গিয়েছিলেন, তাঁরাও সীমান্তের ওপারে আটকে রয়েছেন। তাঁদের ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আরও বলেছেন, গত ১ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যে নতুন গাইড লাইন প্রকাশ করেছিল, তাতেও স্পষ্ট লেখা রয়েছে যে কোনও রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য আটকাতে পারবে না। তাঁর কথায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক তরফা ভাবে সীমান্ত বরাবর বাণিজ্যের পথে বাধা হচ্ছে তা ভারত সরকারকে আন্তর্জাতিক চুক্তি রূপায়ণে সমস্যা তৈরি করছে। এই সব আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি আইনত সিদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গ শুধু বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের শর্ত লঙ্ঘন করছে তা নয়, সংবিধানের ২৫৩, ২৫৬ ও ২৫৭ ধারার লঙ্ঘনও করা হচ্ছে।

এ কথা জানিয়ে, মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে অবিলম্বে সীমান্ত বরাবর বাণিজ্যের পথ খুলে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করতে। সেই সঙ্গে এ ব্যাপারে দ্রুত রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

সংবিধানের ২৫৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনও রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল সংক্রান্ত হোক না কেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে আইন করার অধিকার ভারতীয় সংসদের রয়েছে। ২৫৬ ধারাতেও বলা হয়েছে, সংসদে পাশ করা কোনও আইন প্রনয়ণের ব্যাপারে কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে চলতে হবে রাজ্য সরকারকে। তা ছাড়া সংবিধানের ২৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্র আইন মেনে কোনও প্রশাসনিক নির্দেশ দিলে রাজ্য তার প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাতে বাধা তৈরি করতে পারবে না।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মতো তীব্র সংকটের পরিস্থিতিতে কেন্দ্র-রাজ্য যে সমন্বয় ও বনিবনার অভাব হচ্ছে তা এই চিঠিতেই পরিষ্কার। অথচ সময় ও এই সংকট থেকে বেরনোর দাবিই হল, দিল্লি-কলকাতা সুষ্ঠু সমন্বয় থাকবে। এই বনিবনার অভাবে সাধারণ মানুষ ও পরিষেবা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা তাই ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।

Previous articleদেশে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ হাজার ছাড়াল, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ ১৪৫৬ যা একদিনে সর্বাধিক
Next articleরাজীব সিনহাকে ফের চিঠি স্বরাষ্ট্রসচিবের, লিখলেন পশ্চিমবঙ্গে টেস্ট কম, নজরদারি দুর্বল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here