দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুবাই ঘুরে মুম্বইতে এসেছিলেন ৩৩ বছরের এক ব্যক্তি। শনিবার তাঁর দেহে মিলল কোভিডের ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্ট। এই নিয়ে ভারতে চারজন ওমিক্রন আক্রান্তের সন্ধান মিলল।
সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি কল্যাণ-ডোম্বিভ্যালি পুরসভা এলাকার বাসিন্দা। তিনি কোভিড ভ্যাকসিনের একটি ডোজও নেননি।
গত ২৪ ডিসেম্বর ওই ব্যক্তি মুম্বইতে আসেন। তখন তাঁর হালকা জ্বর ছিল। কল্যাণ-ডোম্বিভ্যালির কোভিড কেয়ার সেন্টারে তাঁর চিকিৎসা হয়। শনিবারই ভারতে ওমিক্রন আক্রান্ত তৃতীয় ব্যক্তির সন্ধান মিলেছে।
২৮ নভেম্বর জিম্বাবোয়ে থেকে গুজরাতের জামনগর আসেন ৭১ বছর বয়সি ওই ব্যক্তি। টেস্টে তিনি কোভিড পজিটিভ হন। তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। তাতে বেরিয়েছে, তিনি ওমিক্রন আক্রান্ত।
জামনগরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নোডাল অফিসার এসএস চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, শহরে পৌঁছনোর পর তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা ধরা পড়ে। তিনি নিজেই স্থানীয় প্রাইভেট ল্যাবে কোভিড টেস্ট করালে রিপোর্ট পজিটিভ বেরয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে জামনগরের ডেন্টাল কলেজে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন স্থাপিত কোভিড ১৯ হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়।
তাঁর পুরো জিনোম সিকোয়েন্সিং করে গুজরাত বায়োটেকনোলজি রিসার্চ সেন্টার। তাঁর একটি নমুনা সেখানো পাঠানো হয়েছিল। আরেকটি পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে। এখনও পুণে থেকে পুরো জিনোম সিকোয়েন্সিং রিপোর্ট আসেনি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জিম্বাবোয়ের নাগরিক। তাঁর স্ত্রী জামনগরের মহিলা। দুজনে সেখানে এসেছিলেন।
ভারতে গত ২৪ ঘন্টায় ৮৬০৩টি নতুন করোনাভাইরাস কেস নথিভুক্ত হয়েছে। মারা গিয়েছেন ৪১৫ জন। সক্রিয় কেস ৯৯,৯৭৪টি। ৮১৯০ জন সুস্থ হয়েছেন।
বিজ্ঞানী-গবেষকরা বলছেন, ভারতে যেহেতু করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রাথমিক প্রতিরোধ শক্তিও ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মধ্যে তৈরি হয়নি, তাই সরকারের বুস্টার শট দেওয়ার চেয়ে ভ্যাকসিনেক দুটি ডোজ দেওয়ায় অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
এর মধ্যে জানা যায়, যে দেশগুলিতে ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়েছে, সেখান থেকে কয়েকজন ভারতে এসে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গিয়েছেন। তাঁরা বাধ্যতামূলক কোভিড টেস্ট করাননি। কোয়ারান্টাইনেও থাকেননি। তাঁদের থেকে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারি সূত্রে খবর, উত্তরপ্রদেশের মিরাটে সম্প্রতি ৩০০ জন বিদেশ থেকে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জনের খোঁজ নেই। সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, যাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের অন্তত সাতজন এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। ওই দেশেই প্রথম ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্ট দেখা দিয়েছিল।
চণ্ডীগড় পুলিশ সূত্রে খবর, গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এক মহিলা ভারতে আসেন। বিমান বন্দরে তাঁর কোভিড পরীক্ষায় নেগেটিভ আসে। বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে থাকতে বলে। কিন্তু তিনি বাড়িতে না গিয়ে হোটেলে উঠেছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বেঙ্গালুরুতে এসে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন ১০ জন। কর্নাটকের রাজস্ব মন্ত্রী আর অশোক জানিয়েছেন, বিমান বন্দরের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের খুঁজছেন।
ওমিক্রনের জন্য কি আসতে পারে তৃতীয় ঢেউ ?কেন্দ্র কী জানাচ্ছে?
:করোনার ডেল্টা প্রজাতির প্রভাবে ভারতে এসেছিল দ্বিতীয় ঢেউ। তার ফল যে কতটা মারাত্মক হয়েছিল, সেই স্মৃতি এখনও দগদগে। তখনই বিশেষজ্ঞরা বারবার সাবধান করেছিলেন, যে ভারতে ফের আসতে পারে তৃতীয় ঢেউ। সেই সময়সীমাও ঘোষণা করেছিলেন। যদিও তা পেরিয়ে গেলেও দেশে সংক্রমণ আর লাগামছাড়াভাবে বাড়েনি। এবার করোনার আরও এক নতুন প্রজাতি ওমিক্রন থাবা বসিয়েছে ভারত সহ দুনিয়ার অনেক দেশে।
প্রশ্ন উঠছে, এর জন্যই কি ভারতে ফের আসতে পারে তৃতীয় ঢেউ? ওমিক্রন নিয়ে এ রকমই হাজারো প্রশ্ন এখন উঠছে মানুষের মনে। এ রকম কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক। সেখানে এই সংক্রান্ত বহু প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। এই ওমিক্রনের জেরেই কি আছড়ে পড়তে পারে তৃতীয় ঢেউ? প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনস্টিটিউট অফ জেনোমিক অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজিক ডিরেক্টর অনুরাগ আগরওয়াল বলেন, ‘করোনার এই প্রজাতি অত্যন্ত শক্তিশালী।’
যদিও এখনও পর্যন্ত ওমিক্রনের কোনও মারাত্মক উপসর্গ প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি খুবই সংক্রামক। সেক্ষেত্রে এই প্রজাতির কারণে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরেও বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন ছড়াচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। আরও দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার মধ্যে রয়েছে ভারতও। যদিও এখনও কত দ্রুত এই প্রজাতি ছড়াবে এবং তার প্রভাব কতটা গুরুতর হতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে কেন্দ্র আশ্বাস দিয়েছে, ‘যেহেতু ভারতে দ্রুত গতিতে টিকাকরণ হয়েছে এবং ভারতে ডেল্টা প্রজাতি বিপুলভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, তাই এই ওমিক্রনের প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ পাশাপাশি কেন্দ্রে বারবার কোভিড বিধি মানার ওপর জোর দিয়েছে। যেমন মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মানা এবং অবশ্যই টিকার দু’টি ডোজ নিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্র। প্রশ্ন উঠেছে, যে এই টিকা কি ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কাজ করবে? বিশেষজ্ঞরা বলছে, কাজ যে করবে না, সেই নিয়েও এখনও কোনও তথ্যপ্রমাণ সামনে আসেনি।