দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিশ্বজুড়ে মহামারীর আকার নিয়েছে করোনা ভাইরাস। দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এমনই দাবি করছে ব্রিটেনের এক গবেষণা। সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই গবেষণা অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকায় ২২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ব্রিটেনে হতে পারে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু।

এই গবেষণা করেছেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ম্যাথেমেটিক্যাল বায়োলজির প্রফেসর নীল ফার্গুসনের নেতৃত্বাধীন একটি দল। গত কয়েক দিনে ইতালিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাবের তথ্য নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, এই গবেষণায় ১৯১৮ সালের ফ্লু’য়ের সঙ্গে বর্তমানে কোভিড ১৯-এর প্রভাবে ছড়ানো মহামারীর তুলনা করে দেখা হয়েছে। তাতে গবেষকরা জানিয়েছেন, যদি এখনই আরও বেশি করে সুরক্ষার পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে মৃত্যু হতে পারে ৫ লাখ মানুষের। সংখ্যাটা আমেরিকার জন্য আরও বেশি। সেখানে ২২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে এই ভাইরাসের প্রকোপে।
এই গবেষণায় আরও জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে ব্রিটেন ও আমেরিকার সরকার যাঁরা আক্রান্ত তাঁদের আইসোলেশনে রাখলেও সামাজিক স্তরে দূরত্ব বাড়ায়নি। ফলে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটাই দেখা গিয়েছে ইতালিতে। এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে বলেই তাঁদের ধারণা।

সেইসঙ্গে গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, যদি এখনই প্রত্যেক আক্রান্ত মানুষকে একেবারে কোয়ারেন্টাইনে রাখা যায় ও ক্লাব, পাব, থিয়েটার, মার্কেটে যাওয়া থেকে মানুষকে আটকানো যায় তাহলে এই মৃত্যুর হার অবশ্যই কমবে।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত প্রফেসর আজরা ঘানি জানিয়েছেন, “এই ভাইরাস আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির উপর বিরাট প্রভাব ফেলতে চলেছে।” আর এক গবেষক টিম কলবোর্ন জানিয়েছেন, “খারাপ সময় আসছে। গবেষণা কিন্তু সাংঘাতিক ইঙ্গিত দিচ্ছে।”

সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই গবেষণা সামনে আসার পরেই পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে ব্রিটেনের সরকার। বিশেষজ্ঞদের কথা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় এই কাজ চলছে। সরকারের এক আমলা জানিয়েছেন, “আমরা গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের কথা অনুযায়ী চলছি। আমরা যে রকম ভেবেছিলাম তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণে ও তাড়াতাড়ি সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

এর আগে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সমালোচনা করেছিল ব্রিটেনের একাধিক সমাজসেবী সংস্থা। তাদের দাবি ছিল, করোনা মোকাবিলায় অন্য অনেক দেশ যেরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা দেখা যাচ্ছে না ব্রিটেনে। ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনের মতো দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখে ব্রিটেন সরকারের উচিত ছিল অনেক আগে থেকে এই বিষয়ে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া। একই সমালোচনা শোনা গিয়েছে আমেরিকার ক্ষেত্রেও৷

লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিরেক্টর পিটার পিয়ট আবার জানিয়েছেন, ব্রিটেন এতদিন যা ব্যবস্থা নিয়েছে তা সবই প্রমাণ নির্ভর। এটা করা হয়েছে জনগণের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক যোগাযোগের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য। তিনি বলেন, “আমরা এই করোনা ভাইরাসের সম্পর্কে খুব একটা বেশি জানি না। তাই প্রতি মুহূর্তে যেভাবে এই ভাইরাসের প্রভাব দেখা যাচ্ছে, সেই অনুযায়ীই তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা উচিত।”
ভারতে দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা।

এই মুহূর্তে ভারতে ১৪২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। মহারাষ্ট্রে সংখ্যাটা সবথেকে বেশি। এই রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ জন। ১৪৭ জনের মধ্যে ২৫ জন আক্রান্ত বিদেশি নাগরিক। পশ্চিমবঙ্গেও মঙ্গলবার প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। এখনও পর্যন্ত ১৪ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।

কর্নাটক এবং দিল্লির পর মুম্বইতে মৃত্যু হয়েছে এক করোনা আক্রান্ত রোগীর। জানা গিয়েছে, বৃদ্ধের বয়স ৬৪ বছর। মুম্বইয়ের কস্তুরবা হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
এর আগে করোনাভাইরাসের গ্রাসে মৃত্যু হয়েছিল কর্নাটকের বাসিন্দা ৭৬ বছরের মহম্মদ হুসেন সিদ্দিকির। জানা গিয়েছিল, তীর্থ করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তিনি। ২৯ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরার পর হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে তাঁকে স্ক্রিনিং করা হয়। কিন্তু তখন সংক্রমণের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এর কয়েকদিন পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বৃদ্ধকে।

পরিবারের তরফে জানা যায়, শ্বাসকষ্ট এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হয়েছিল তাঁর। পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখা যায় নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। আশঙ্কা করা হয়েছিল করোনাভাইরাসের সংক্রমণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃত্যুর পর বৃদ্ধের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করা হলে সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়। এটা ছিল করোনা ভাইরাসে ভারতের প্রথম মৃত্যু। এই ব্যক্তির মেয়ের শরীরেও পাওয়া গিয়েছে সংক্রমণের নমুনা। কালবুর্গির হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।

কর্নাটকের পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতের দ্বিতীয় মৃত্যু হয় দিল্লিতে। মারা যান বছর ৬৮-র এক মহিলা। জানা গিয়েছে, তাঁর ছেলে সুইৎজারল্যান্ড থেকে সদ্যই ফিরেছেন। তিনি ছিলেন করোনাভাইরাস আক্রান্ত। ছেলের থেকেই মায়ের শরীরে সংক্রমণ হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করেন চিকিৎসকরা। দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে মৃত্যু হয় বৃদ্ধার।

কলকাতায় মঙ্গলবার ইংল্যান্ড ফেরত এক তরুণের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ওই তরুণের বাবা, মা ও গাড়ির চালককেও হাসপাতালে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। সকলেই কোয়ারেন্টাইনে। ওই তরুণ আর কার কার সংস্পর্শে এসেছেন তার খোঁজ চলছে। জানা গিয়েছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছেন ওই তরুণ।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিসেস (নাইসেড)-এ তরুণের লালারসের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে সেই রিপোর্ট আসে। সেই রিপোর্টে জানা যায় তা পজিটিভ। পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে ১২ হাজারেরও বেশি নাগরিককে বাড়িতেই সেলফ কোয়ারিন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে খবর।


ইতিমধ্যেই নোভেল করোনাভাইরাসকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। ভারতেও হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সারা দেশ জুড়েই প্রায় বন্ধ হচ্ছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-সিনেমা হল-সুইমিং পুল-জিম ও অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠান। কী ভাবে এই ভাইরাসকে ঠেকানো যায় তার পরিকল্পনাতেই ব্যস্ত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here