দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দীর্ঘ পাঁচ মাসেরও বেশি সময় বন্ধ ছিল হুগলির তারকেশ্বর মন্দির। অবশেষে সরকারি নির্দেশ মেনে দীর্ঘদিন পর ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হল মন্দিরের দরজা। বৃহস্পতিবার ৩রা সেপ্টেম্বর বৈঠক করে মন্দির কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে মন্দির খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেবদর্শনে আর কোনও বাধা রইল না ভক্তদের।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চলতি বছরের ২৪শে মার্চ থেকে তারকেশ্বরের শিব মন্দির বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো মন্দির কর্তৃপক্ষ। এর ফলে পুণ্যার্থীরা যেমন দেবাদিদেবের দর্শন থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনই তীব্র ক্ষতির মুখে পড়েছেন মন্দির সংলগ্ন হোটেল, পুজো সামগ্রির দোকানের ছোটো ব্যবসায়ীরা।

মন্দির বন্ধ থাকায় উপার্জন বন্ধ পূজারীদের। ধুঁকছে তাদেরও পরিবার। এই অবস্থায় পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে দেশজুড়ে আনলক ৪ এর ঘোষণার পর স্থানীয় প্রশাসন এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে যৌথভাবে মন্দির খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চৈত্র মাসের গাজনের সময় এবং শ্রাবণ মাসের শ্রাবণী মেলায় লক্ষ লক্ষ ভক্ত-মানুষের সমাগম হয় তারকেশ্বরে। গোটা দেশ থেকে এসময় পুণ্যার্থীরা ছুটে আসেন বাবা তারকনাথের দর্শন পাওয়ার জন্য। বৈদ্যবাটির নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে গঙ্গার জল তুলে বাঁকে করে প্রায় চল্লিশ কিমি পথ পায়ে হেঁটে ভক্তরা তারকেশ্বরে পৌঁছোন, এবং মহাদেবের মাথায় সেই জল ঢেলে পুণ্য অর্জন করেন।

এছাড়াও নানা মনস্কামনা নিয়ে বাবা মহাদেবের টানে তারকেশ্বরে লোক সমাগম লেগে থাকে সারা বছরই। তারকেশ্বরের এটাই পরিচিত ছবি। কিন্তু দেশজোড়া করোনা আবহে এবছর মার্চ মাস থেকে মন্দির বন্ধ থাকায় এই চেনা ছবি থেকে এতদিন বঞ্চিত হয়েছে তারকেশ্বরের মানুষ।

মহামারিতে দেশের অন্যান্য মন্দিরের মত তারকেশ্বর মন্দিরও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর, এই ছমাসে দেশজুড়ে সংক্রমণ বাড়লেও গড় মৃত্যুর হার এখন অনেক কম। প্রথমদিকের ভয়, আতঙ্ক অনেকটাই দূর হয়েছে মানুষের মন থেকে। করোনা আক্রান্ত হলেও এখন বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন বেশিরভাগ আক্রান্ত। অন্যদিকে দীর্ঘদিন মন্দির বন্ধ থাকার দরুণ জীবিকায় টান পড়েছে তারকেশ্বরের পুরোহিত,পান্ডা,ব্যবসায়ীদের। 

অগস্ট মাসের শেষ থেকেই একের পর এক খুলে যাচ্ছে রাজ্যের অন্যান্য ধর্মস্থানগুলোও। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ভক্তদের জন্য মন্দির খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন।

শুক্রবার সকাল থেকেই প্রশাসনের তরফে মাইকে চলছে প্রচারের কাজ। করোনা আবহে ভক্তেরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো দিতে পারেন তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিন মন্দির কমিটির তরফে সংবাদিকদের জানানো হয়, মন্দিরের মূল দরজায় প্রবেশ করতে তিনটি গেট পেরোতে হবে ভক্তদের। পুজোর ডালি নিয়ে অপেক্ষা করার সময় সামাজিক দূরত্ব যাতে বজায় থাকে ভক্তদের মধ্যে, সে ব্যাপারেও নজর রাখবে মন্দির কর্তৃপক্ষ।

মন্দিরের দরজা খুললেও গর্ভগৃহে এখনই প্রবেশের অধিকার পাবেন না ভক্তরা। মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে তাই চোঙার ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্দির প্রশাসন। এমনকি দুধ পুকুরে স্নান করে পুজো দেওয়ার রীতিতেও আনা হয়েছে বিধি নিষেধ।

এত কিছুর পরেও মন্দির খোলায় খুশির আবহ তারকেশ্বরে। বাবার মাথায় জল ঢেলে পুজো দিতে পেরে খুশি ভক্তরাও। কৈলাশপতির কাছে দেশ তথা বিশ্বকে মহামারি মুক্ত করার প্রার্থনা নিয়ে শুক্রবার থেকেই দর্শনার্থী সমাগম শুরু হয়ে গেল তারকেশ্বরে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here