দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: বাজেয়াপ্ত করা অবৈধ শব্দবাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে তুমুল বিস্ফোরণ ঘটে বিপত্তি। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে নৈহাটির রামঘাটে। গত তিন–চার দিন ধরেই গঙ্গার পাড়ে বাজেয়াপ্ত করা অবৈধ বাজিগুলি নিষ্ক্রিয় করছিল পুলিস। এদিনও সেই কাজই চলছিল।কিন্তু হঠাৎই তীব্র বিস্ফোরণ হয় বাজিগুলিতে। ঘন সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাক দিয়ে ওঠে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় শুধু নৈহাটিই নয়, গঙ্গার ওপাড়ে চুঁচুড়ার মাটিও কেঁপে ওঠে। চুঁচুড়ার বকুলতলা এলাকার বহু বাড়ি, অফিসের কাচ চুরমার হয়ে যায়। উল্টে পড়ে আসবাব, বাসনপত্র। কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরে।আতঙ্কে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। সূত্রের খবর, দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও প্রথমে কোথায় এবং কীভাবে বিস্ফোরণ তা বুঝতে না পেরে হকচকিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিস পৌঁছলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বকুলতলার বাসিন্দারা। পথ অবরোধও করা হয়। অভিযোগ, পুলিসের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।পরে ঘটনাস্থলে চন্দননগরের কমিশনার হুমায়ুন কবির গেলে তাঁকে ঘিরেও চলে বিক্ষোভ। বিকেলের দিকে বারাসতে যাত্রা উৎসবে যোগ দিয়ে ঘটনার কথা জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তিনি নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন। জেলাশাসককে মমতা নির্দেশ দেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যেন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে স্থানীয় প্রশাসন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের তীব্রতায় আগুন ধরে যায় পুলিশের দু’টি গাড়িতে, ভেঙে যায় পুলিশের চারটি গাড়ির কাচ। গাড়িগুলি বিস্ফোরণস্থলের ১২০ মিটারের মধ্যে ছিল।
বিস্ফোরণের শব্দে ও তার অভিঘাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার মানুষজন। গত শুক্রবারের স্মৃতি তাঁদের মনে ফিরে আসে। তাঁরা আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। উদভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে থাকেন এলাকার লোকজন।
বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে গঙ্গার অপর পারও কেঁপে ওঠে। চুঁচুড়াতেও ভেঙে পড়ে বাড়ির ছাদ, যায় জানলার কাচ। ক্ষতি হয়েছে চুঁচুড়া পুরসভা ভবনেরও।ঘটনার পরে এলাকার লোকজন দোষ দিতে থাকেন পুলিশকে। ইতিমধ্যে খবর রটে যায় যে হুগলি-চুঁচুড়ায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। নৈহাটির লোকজনও ক্ষতিপূরণ দাবি করতে থাকেন। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ জনরোষ গিয়ে পড়ে পুলিশের উপরে। পুলিশ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তখন ঘোষপাড়া রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দা। অবরোধ বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলতে থাকে।
বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থানীয় বিধায়ক পার্থ ভট্টাচার্য ঘোষণা করেন যে কারও কোনও ক্ষতি হয়ে থাকলে ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। সরকারের আশ্বাস পেয়ে অবরোধ উঠে যায়, এলাকাও শান্ত হয়।
গত শুক্রবার সকালে বাজি কারখানার ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল নৈহাটির দেবক এলাকা। বিস্ফোরণে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও সাত জন। বাজি কারখানার বিস্ফোরণের তীব্রতা যে মামুলি নয় তা বোঝা গিয়েছিল স্থানীয়দের কথাতেই। শুধু নৈহাটি নয়, বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল গঙ্গার ওপারের হুগলিও। চুঁচুড়ার আখনবাজার, প্রেমনগর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছিলেন তাঁরাও কম্পন টের পেয়েছেন। ছ’দিন পরে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে ফিরে এল সেই দিনের স্মৃতি।