পিয়ালী মুখার্জী: বেহালার পর্ণশ্রী সেন পল্লিতে ভয়াবহ কাণ্ড। একইসঙ্গে মা ও ছেলের গলা কাটা মৃতদেহ উদ্ধার হল ঘর থেকে। এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
সোমবার রাত ন’টা পনেরো থেকে সাড়ে ন’টা। অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে সদর দরজার চাবির জন্য ক্রমাগত স্ত্রী সুস্মিতা মণ্ডলকে ফোন করে যাচ্ছিলেন পেশায় বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্মী তপন মণ্ডল। কিন্তু স্ত্রীর মোবাইল ফোন বন্ধ। অগত্যা অন্য এক আবাসিক দরজা খুলতেই তিন তলায় নিজের ফ্ল্যাটে চলে যান তপনবাবু।
ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেখেন আনলক অবস্থায় দরজা। অল্প ঠেলতেই দরজা খুলে যায়। ঘর অন্ধকার। আলো জ্বালাতেই প্রথম চোখে পড়ে স্ত্রী সুস্মিতা বিছানার ওপর পড়ে আছেন। রক্তে ভেসে গেছে বিছানা । মেঝেতেও রক্ত। চিৎকার করে পাশের ঘরে যেতেই সেখানে বছর ১৩-র ছেলে তমোজিৎ পড়ে রয়েছে উল্টোভাবে। সেখানেও রক্ত। এরপরই ১০০ ডায়ালে ফোন করেন তপনবাবু।
পুলিস সূত্রে খবর, ফোন পেয়েই খবর দেওয়া হয় পর্ণশ্রী থানায়। পুলিস গিয়ে দেখে দুটি পৃথক ঘরে রক্তাক্ত দুটি দেহ পড়ে রয়েছে। গলার নলি কাটা। ঘরের জিনিসপত্র এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
ঘটনাস্থলে আসে কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার আধিকারিকেরা। আসেন গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মাও ।জোড়া দেহ ঘিরে ইতিমধ্যে বেশকিছু সন্দেহ তৈরি হয়েছে পু্লিসের মনে।
অ্যাপার্টমেন্টের সদর দরজা সব সময় তালা বন্ধ থাকে। তাহলে আততায়ী কী মণ্ডল পরিবারের ঘণিষ্ঠ? যে বা যারা এসে মা ও ছেলেকে মেরে বেরিয়ে গিয়েছেন। পুলিস জানতে পেরেছেন লোন নিয়ে ওই ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তপনবাবু। সেক্ষেত্রে কি আর্থিক কোনও সমস্যার জেরে স্ত্রী ও ছেলেকে মেরে থাকতে পারেন?
ইতিমধ্যে তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমন কি বাড়ি ফিরে স্ত্রীর ফোন বন্ধ পাওয়া, ঘরে ঢুকে দেহ দেখার যে কথা পুলিশকে তপনবাবু জানিয়েছেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিস।
এক্ষেত্রে তিনি যে ব্যাঙ্কের কর্মী, সেখানে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে তপন মণ্ডল সোমবার কাজে গিয়েছিলেন কিনা? গেলে কখন বেরিয়েছেন? এমনকি তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করা হচ্ছে।রাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পর্ণশ্রী থানায়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পুলিশের তরফে।আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে, প্রতিদিন বিকেলে তমোজিতের প্রাইভেট টিউটর আসেন। এদিনও তিনি এসেছিলেন। কিন্তু ডেকে সাড়া পেয়ে তিনি ফিরে যান। তপনবাবু নিজে টিউটরকে ফোন করে জানতে পারেন যে এদিন পড়াতে এসে ফিরে গেছেন। তবে এখানে একটি অসঙ্গতি ধরা পড়েছে পুলিসের চোখে।
তপনবাবু পুলিসকে জানিয়েছেন তিনি তিন তলায় গিয়ে দেখেন দরজা আনলক অবস্থায ছিল। কিন্তু টিউটর যখন এসেছিলেন তিনি দরজায় বেশ কয়েকবার ডাকেন। সাড়া না পেয়ে ফিরে গেছেন । এখানেই প্রশ্ন, যে দরজা অল্প ধাক্কায় খুলে গেল, তপন বাবু ভিতরে ঢুকে পড়লেন, কিন্তু টিউটর ধাক্কা দেওয়া সত্ত্বেও খুলল না? এক্ষেত্রে দুজনের বক্তব্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
দেহ দেখে পুলিশের অনুমান সোমবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে খুন হয়ে থাকতে পারেন মা ছেলে। তমোজিৎকে যে অবস্থাতে পাওয় গিয়েছে, তার পরনে ছিল স্কুল ড্রেস। মনে করা হচ্ছে অনলাইন ক্লাসের পর এই ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু প্রশ্ন, গলার নলি কাটা হল কেউ চিৎকার শুনতে পেলেন না, তাহলে কি পরিকল্পনা করেই খুনের আগে মা ও ছেলেকে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছিল?
কীভাবে এমন সাংঘাতিক ঘটনা ঘটল খাস কলকাতার বুকে তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। গৃহকর্তাও কিছুই বলতে পারেননি। কারা এই নৃশংস খুন করল, কেনই বা করল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
পর্নশ্রী থানা এলাকার সেন পল্লিতে জোড়া খুন কাণ্ডে ধোঁয়াশায় পুলিশ। খুনের মোটিফ কী, কেন দরজা খোলা ছিল, দিনে দুপুরে নলি কেটে খুন করা হল কেউ বুঝতেও পারল না-এই প্রশ্নগুলিকে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।