দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার বিকেলে নবনির্মিত মাঝেরহাট ব্রিজের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন এই ব্রিজের নাম তিনি দিয়েছেন ‘জয় হিন্দ’ ব্রিজ। বিকেল ৫টা ১৯ মিনিটে ব্রিজের উদ্বোধনের পরে ব্রিজের উপর দিয়ে হাঁটতেও দেখা যায় তাঁকে। আর এই ব্রিজের উদ্বোধনেই রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, রেলের জন্যই এই ব্রিজের উদ্বোধনে ৯ মাস দেরি হয়েছে। সেইসঙ্গে রেল কেন ৩৪ কোটি টাকা নিয়েছে সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। রেলকে সেই টাকা ফেরত দেওয়ারও কথা বলেন তিনি।

হাইলাইটস

  • রেল ও রাজ্য টানাপোড়েনের আবহেও অবশেষে খুলল নতুন মাঝেরহাট ব্রিজ।
  • এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে রেল নয়, বরং কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির দিকে অভিযোগ আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
  • তিনি বলেন, ‘রেলকে দোষ দেব না, দিল্লিতে যারা বসে আছে, দোষ তাদের।’

এদিন ব্রিজের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রেল অনুমতি দিলে ৯ মাস আগেই এই ব্রিজের উদ্বোধন হয়ে যেত। রেল কেন ৩৪ কোটি টাকা নিয়েছে। শুধু অনুমতি দেওয়ার জন্য এই টাকা ওরা নিয়েছে। পারলে রেল সেই টাকা ফেরত দিক। এটা রেলের আধিকারিকদের দোষ নয়। যারা দিল্লিতে বসে কলকাঠি নাড়ছে আমি তাদের বলছি।” শুধু রেল নয় পোর্ট ট্রাস্টও ৭৭ লক্ষ টাকা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ডি কে দাস ফোনে দ্য ওয়াল-কে জানিয়েছেন, “এই অভিযোগ প্রসঙ্গে আমি আর কী বলব। আজ শুভ দিন। ২ বছর পর মানুষের দুর্ভোগ কাটিয়ে এই ব্রিজের উদ্বোধন হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রেলের যৌথ উদ্যোগে এটা হওয়ায় রেল খুশি।”

এদিনের অনুষ্ঠান থেকে পোস্তা ব্রিজের প্রসঙ্গও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই যে বিবেকানন্দ ব্রিজ ভেঙে পড়ে গেল। ওখানে প্ল্যানিং ভুল ছিল। এটা আমাদের কাজ নয়। আগে যারা ছিল তারা করে গেছে। আমরা সাফার করছি।” এই প্রসঙ্গে বাম সরকারকেও দুষেছেন মমতা। তিনি বলেন, “২০১১ সালে এসে দেখলাম কোনও ব্রিজের অডিটই হয় না। শরীর থাকলে কখনও পেট খারাপ হয়, জ্বর হয়। ব্রিজেরও তেমন হয়, কিন্তু সেটার চেক আপ করতে হয়। এই ব্রিজটা ভেঙে যাওয়ার পরে আমরা পিডব্লুডির আন্ডারে অডিট কমিটি করে দিয়েছি।”


মাঝেরহাট ব্রিজের উদ্বোধনে কেন দেরি হচ্ছে সেই নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর সেখানে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। সেই প্রসঙ্গে গেরুয়া শিবিরকে খোঁচা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে প্রেসে মুখ দেখাতে এসেছিল কিছু লোক। পুলিশ বলছে আমি আপনাকে অ্যারেস্ট করব না। আর ওরা বলছে অ্যারেস্ট করুন। একটু প্রেসে মুখ দেখাব। আমাকে বেহালা চেনাচ্ছে। বেহালার মানুষ যখন বেহাল দশায় ছিল তখন আমিই ছিলাম।”

ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণে সাধারণ মানুষকেও যত্ন নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “অনেক কষ্ট করে সব বানানো হয়। দয়া করে কেউ থুক করে পানের পিক ফেলবেন না। বাসের জানলা দিয়ে পানের পিক ফেলে দেবেন না। খুব কষ্ট হয় জানেন তো। খুব কষ্ট করে এসব করি।”


এই প্রসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকের কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “২০০ কোটি টাকা দিয়ে দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক করে দিলাম। ওখানকার ট্রাস্ট থেকে ফোন করে বলল, দিদি, সাত দিনের মধ্যে পানের পিক ফেলে নোংরা করে দিয়েছে। তো আমি ওদেরকে বললাম আপনারা একটু দেখুন, একটু ব্যবস্থা করুন। করবেন না হ্যাঁ। একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে দেখতে ভাল লাগে।”


এদিনের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ব্রিজের উপর কেউ হেলমেট ছাড়া বাইক চালাবেন না। পুলিশকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, প্রথম কয়েক দিন কেউ হেলমেট কিনতে না পারলে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের টাকা থেকে তাদের হেলমেট কিনে দিতে। যদিও এই নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, যারা বাইক কিনতে পারবেন তারা কি হেলমেট কিনতে পারবেন না।

পুলিশ সূত্রের খবর, আপাতত মাঝেরহাট ব্রিজের উপর দিয়ে গাড়ি ও বাস চলাচল করবে। মোমিনপুরের দিক থেকে এসে গাড়ি-বাস মাঝেরহাট ব্রিজ ধরে এসে আবার তারাতলা ফ্লাইওভার ব্যবহার করে সহজেই ডায়মন্ড হারবার রোডে পৌঁছে যেতে পারবে। একই ভাবে বেহালার দিক থেকেও সহজেই মোমিনপুরের দিকে যাওয়া যাবে। আবার চাইলে কিছু বাস মাঝেরহাট ব্রিজ ধরে নামার পর তারাতলা ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তা ধরে বেহালার দিকেও যেতে পারবে।

দক্ষিণ-পশ্চিম কলকাতার সঙ্গে মূল কলকাতার অন্যতম সংযোগকারী এই ব্রিজ ভেঙে পড়ায় বেজায় প্রভাব পড়েছিল পণ্যবাহী গাড়ির চলাচলেও। আপাতত চালু না-হলেও কয়েক দিনে পরে মালবাহী গাড়ি চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মাঝেরহাট ব্রিজ চালু হলেও আলিপুরের বেইলি ব্রিজ এখনই বন্ধ করা হচ্ছে না। মাঝেরহাট ব্রিজের সমান্তরাল রাস্তা হিসাবে এই সেতুটি খুবই কার্যকর। মাঝেরহাট ব্রিজ খুলে দেওয়ার পর যানজট যাতে না-হয়, তার জন্য কোন ট্র্যাফিক সিগন্যাল কতক্ষণ লাল রাখা হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে পুলিশ। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘সিগন্যালের সময় পরিবর্তনের পুরোটাই নির্ভর করছে গাড়ির চাপ কতটা রয়েছে তার উপর। বিশেষ করে সকালে অফিস টাইমে বা সন্ধ্যার দিকে। ফলে যান চলাচলের চাপের উপর আমাদের কড়া নজর থাকবে ।’

ব্রিজ উদ্বোধনের সময় লোকের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসবের চেহারা নিয়েছিল মাঝেরহাট ব্রিজ চত্বর। কিন্তু তার মাঝেই রেল ও আগের বাম সরকারকে দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here