দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একই দিনে তিনটি সভা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমবার বাঁকুড়ার কোতলপুর এবং ইন্দাসের পর বড়জোড়ায় তৃতীয় সভায় ভোটপ্রচারে ছিলেন মমতা।
ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রায় প্রতিটি সভাতেই একই কথা বলেছেন। এক পায়ে শট মেরে মাঠের বাইরে বের করে দেওয়া, হাতা খুন্তি নিয়ে বহিরাগতদের তাড়া করা ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সঙ্গে পইপই করে বলেন, এটা কিন্তু দিল্লির ভোট নয়। এটা বাংলার ভোট। বাংলার নির্বাচন।
বিজেপির ব্রিগেড সভায় বিজেপিতে যোগ দিয়ে মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী বলেছিলেন, এ বার ভোটে নতুন ডায়লগ হবে—‘এক ছোবলেই শেষ!’
সোমবার বাঁকুড়ার ইন্দাসে সভা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মিঠুনের কথাতেই সিলমোহর দিলেন কিনা স্পষ্ট নয়। তবে এদিন দিদি বলেন, ‘বিজেপি জলধর, বিষধর সাপ। বিষাক্ত কেউটে। যেখানে ঢুকবে ছোবল মারবে’।
উনিশের ভোটে বাঁকুড়ার দুটি লোকসভা আসনেই হেরেছিল তৃণমূল। জেলার ১২টি বিধানসভার ১২টিতেই পিছিয়ে ছিল। অনেকের মতে, সেই কারণেই এদিন মমতা বারবার বাঁকুড়ার লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে এটা দিল্লির ভোট নয়। এবং সেই কারণেই বিজেপি সম্পর্কে ভয় ঢোকাতে চেয়েছেন মানুষের মনে। তাই বিষধর সাপের কথা বলেছিলেন।
রাজনৈতিক দলকে বিষধর সাপের সঙ্গে তুলনা করা কতটা শালীন সেই প্রশ্ন এর আগেও উঠেছে। এমনকি ব্রিগেডের সভায় মিঠুন চক্রবর্তী যে সংলাপ বলেছিলেন, তা নিয়েও সামালোচনা কম হয়নি। মিঠুন বলেছিলেন, “আমি জলঢোঁড়া নই বেলেবোড়াও নই। জাত গোখরো। এক ছোবলেই শেষ।”
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে বাঁকুড়ায় তৃণমূলের ভরাডুবির জন্য স্থানীয় স্তরে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতাকেই অনেকে দায়ী করেছিলেন। তাঁদের মতে, মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল তৃণমূল। একশ দিনের মজুরি, আবাস যোজনার টাকা কেটে নেওয়া, সরকারি প্রকল্পের টাকা লুঠের অভিযোগও উঠেছিল। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া বলতে সম্ভবত এ সব ঘটনাকেই বোঝাতে চেয়েছিলেন মিঠুন।
পরে সমালোচনার মুখে পড়ে মিঠুন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, তিনি শারীরিক ভাবে ছোবল মারার কথা বলেননি। তিনি রাজনৈতিক ভাবে সে কথা বলেছিলেন। গরিব মানুষের অধিকার যারা কেড়ে নিচ্ছে তাদের রাজনৈতিক ভাবে খতম করার কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন মাত্র।
বড়জোড়ার নির্বাচনী সভা থেকে নিজের উপরে হামলার একের পর এক ভয়ঙ্কর ঘটনা তুলে ধরেন তৃণমূল নেত্রী। গার্ডেনরিচের একটি ঘটনা তুলে ধরে তৃণমূল সু্প্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সেবার আমার জীবন বাঁচিয়ে ছিল আখতার নামের একটি মুসলিম ছেলে। খবর পেয়ে ওখানে যেতেই আমার গাড়ি ভাঙচুর করে। আমার গুলি চলতেই দেখি কোথা থেকে একটা ছেলে এসে আমার সামনে দাঁড়াল। গুলিটা আমার কপালে না লেগে ওঁর হাতে লেগেছিল। আমি বেঁচে যাই।’
নেত্রী জানান, ‘এই প্রথম নয়। আমার উপর বহুবার হামলা হয়েছে। হাত ভেঙে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। ২১ জুলাই কোমরে এমন লাঠি মেরেছিল যে এখনও বেল্ট পরতে হয়। কিন্তু তবু আমাকে আটকাতে পারেনি।’ এখানেই শেষ নয়,তিনি বলেন,’আমার জীবন মানুষের জন্য। যতক্ষণ আছি, মানুষের কাজ করে যাব। আমি নিজে কোনও পেনশন নিই না। মুখ্যমন্ত্রীর বেতনও নিই না। দিনে এক বেলা খাই। আমার লেখা বইয়ের রয়্যালটিতে চলে যায়।’
বক্তব্য এগোতেই বিষয় বদল। আক্রমণের সুর চড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি বিষধর কেউটে, যেখানে ঢুকবে ছোবল মারবে। এটা দিল্লির নির্বাচন নয়। এটা বাংলার নির্বাচন। বাংলার ভবিষ্যতের লড়াই।’ তাঁর দাবি, ‘ নরেন্দ্র মোদী সরকার বিনা পয়সায় গ্যাস দাও। যাতে ভাত ফুটিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়। ৮০০ টাকার গ্যাসে কি খাওয়া যাবে! ‘
ভোট লুঠ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ কারও দেওয়া বিরিয়ানি, চা-বিস্কুট খাবেন না। বহিরাগত গুণ্ডারা এলে হাতা-খুন্তি নিয়ে তেড়ে যান। বিজেপি যেন ইভিএম লুঠ করতে না পারে। ভিভিপ্যাট যন্ত্র ভাল করে দেখে নেবেন। দলীয় কর্মীদের ইভিএম পাহারা দিতে হবে।’বাঁকুড়ার কোতুলপুরের সভা থেকে মমতা বলেন, ‘অনেক পুলিশ বিজেপির হয়ে কাজ করবে। অনেক দিল্লির পুলিশ আসবে।’