দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ব্রিগেড সমাবেশের আগেই বড় চমক বিজেপি-র। যশ দাশগুপ্তর পর এ বার বাংলায় গেরুয়া পথগামী হচ্ছেন অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিলেন তিনি। দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অমিত মালব্যদের থেকে বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নিলেন তিনি।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে এর আগে তৃণমূলের একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা যেত শ্রাবন্তীকে। সেক্ষেত্রে কেন এই বদল? তবে কি মোহভঙ্গ হয়েছে নায়িকার? এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রাবন্তী জানান, কোনও অভিমান থেকে নয়, শুধুমাত্র রাজ্যে পরিবর্তন আনার স্বার্থেই তাঁর বিজেপি-তে যোগ। তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। আর সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।’
বাংলা চলচ্চিত্রে এখনও কদর রয়েছে শ্রাবন্তীর। হাতে কাজও রয়েছে। কেরিয়ারে উজ্জ্বল থাকতে থাকতেই রাজনীতিতে এ বার ঢুকে পড়লেন বাংলা ছবির নতুন প্রজন্মের এই অভিনেত্রী। বিজেপিতে সামিল হয়েই বললেন, ‘সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে কাজ করব।’
এদিন শ্রাবন্তীকে বিজেপি-তে স্বাগত জানান দিলীপ ঘোষ। একইসঙ্গে তিনি বলেন, চমক আরও বাকি। অর্থাৎ পাইপ লাইনে রয়েছে আরও একাধিক তারকা মুখ, এই জল্পনা জিঁইয়ে রাখলেন তিনি। এদিকে বিজেপি-তে যোগ দিয়েই রাজ্যে পরিবর্তনের ডাক দিলেন অভিনেত্রী। তবে রাজনীতির জন্য অভিনয়ে কোনও ক্ষতি হবেন না, স্পষ্ট জানান তিনি। শ্রাবন্তীর কথায়, ‘নতুন ভাবে পথ চলা শুরু। বাবা সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তিনি বলতেন রাজ্য নয়, তোকে দেশের জন্য কিছু করতে হবে। বাবার দেখানো আদর্শই পথ দেখাবে আগামী দিনে।
দলে যোগদানের পরই প্রশ্ন উঠছে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চলেছেন অভিনেত্রী? এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রাবন্তী জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি কিছু ভাবেননি। দল তাঁকে যেখান থেকে দাঁড় করাবেন সেখান থেকেই লড়াই করবেন তিনি।’ অন্যদিকে, এতদিন পর্যন্ত শাসক দলের একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে অভিনেত্রীকে। এমনকী, কন্যাশ্রী প্রকল্পের উদ্বোধনেও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এই অভিনেত্রী। সেক্ষেত্রে কেন এই পরিবর্তনের ডাক? এই প্রশ্নের উত্তরে অভিনেত্রী জানান, মহিলা সুরক্ষার জন্য আরও অনেক কিছু করতে চান তিনি। আগামী দিনে রাজ্যের পরিবর্তনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তাঁর কাছে রয়েছে একাধিক পরিকল্পনা।
বাংলায় বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে চলচ্চিত্র ও থিয়েটার জগতের যোগ বহুদিনের। ডানপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সেই যোগসূত্র রচনার চেষ্টা অতীতে বার বার হয়েছে। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু থেকে নাফিসা আলিকে বাংলায় কংগ্রেসের প্রার্থী করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়রা। কিন্তু সেই প্রয়াস কাজে দেয়নি। তা দীর্ঘস্থায়ীও হয়নি। সেদিক থেকে বলতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সফল। তাপস পাল, শতাব্দী রায় থেকে শুরু করে দেব, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান রুহিদের তিনি শুধু তৃণমূলে সামিল করেননি, জিতিয়েও এনেছেন। তাঁরা সংসদে নিয়মিত উপস্থিত থাকুন বা নাই থাকুন, বছরে ৩৬৫ দিন নিয়ম করে নিজের নির্বাচন কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন বা নাই রাখুন, অনেকের মতে তাঁদের ইনফ্লুয়েন্সার হিসাবে ব্যবহার করতেও সফল হয়েছে তৃণমূল।
সে দিক থেকে বরং কিছুটা পিছিয়েই ছিল বিজেপি। কিন্তু বাংলায় ভোটমুখে দ্রুত পায়ে সেই দূরত্ব মোছার চেষ্টায় নেমে পড়েছে গেরুয়া শিবির। দিন কয়েক আগে যশ দাশগুপ্ত, হীরণ চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার সহ টলিপাড়ার বেশ কিছু অভিনেতা অভিনেত্রী বিজেপিতে সামিল হয়েছেন। বিজেপিতে সামিল না হলেও তাঁদের সঙ্গে একই ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম শীলদের। এ বার শ্রাবন্তীও হাঁটলেন সেই পথে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ধরে নেওয়া যেতে পারে এ বার কথার পিঠে কথা হবে। মিমি, নুসরতরা টুইটার হ্যান্ডেল থেকে বিজেপি বিরোধী সমালোচনা করলে তার পাল্টা জবাব আসবে হয়তো যশ, শ্রাবন্তীদের হ্যান্ডেল থেকে। অর্থাৎ ইনফ্লুয়েন্সার বনাম ইনফ্লুয়েন্সার। কার প্রভাব কত বেশি সেই লড়াই শুরু হয়ে যেতে পারে টলি পাড়াতেও।
প্রধানমন্ত্রীর ব্রিগেড সমাবেশের আগে বিজেপি-তে যোগদান করতে চলেছেন একাধিক তারকা, বিগত কয়েকদিন ধরে এই জল্পনা তুঙ্গে। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, অমিত শাহের সভার দিন যোগদান কর্মসূচি রাখার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসূচি বাতিল হওয়ার পরই এই পরিবর্তন। ৭ তারিখ ব্রিগেড মঞ্চে সদ্য যোগ দেওয়া অন্যান্য টলি তারকার পাশাপাশি দেখা যাবে শ্রাবন্তীকেও, জানাচ্ছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ।