দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কয়েকদিন ধরেই দিদি বক্তৃতার শেষে দলের কর্মীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। বলছেন, ভোট শুরুর আগে যে ছদ্ম ভোটগ্রহণ হয়, সেই সময়ে দু’বার করে মেশিনটা অফ-অন করে দেখে নিতে হবে। ৩০টা ভোট দিয়ে ‘মক পোল’ করলে হবে না।
কিন্তু শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সন্দেহ প্রকাশ করলেন তা এক কথায় মারাত্মক! তাঁর আশঙ্কা বিজেপি খাবারে কিছু মিশিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারে তৃণমূল কর্মীদের।
এদিন পাঁশকুড়ার সভায় দিদি বলেন, “ভোট হয়ে যাওয়ার পর গণনা পর্যন্ত স্ট্রং রুমে ইভিএমগুলো কিন্তু পাহারা দেবেন। ওই সময়ে ওরা আপনাদের বিরিয়ানির মধ্যে কিছু দিয়ে দিতে পারে। দুধের মধ্যে, চায়ের মধ্যে বা সরবতের মধ্যে কিছু মিশিয়ে ঘুম পাড়াতে পারে আপনাদের। তার পর আসল মেশিনগুলি বের করে নেবে। আর বিজেপির ভোট ভর্তি মেশিন ঢুকিয়ে দেবে। তাই এই এক মাস ওদের দেওয়া খাবার একদমই খাবেন না।”
লোকসভা ভোটের পর বিজেপি অভিযোগ করেছিল, দক্ষিণবঙ্গের একটি লোকসভা কেন্দ্রে ইভিএম বদল করেছে তৃণমূল। এ বার সেই বিজেপি সম্পর্কে তেমনই শঙ্কা প্রকাশ করলেন মমতা।
এদিন কর্মীদের উদ্দেশে আরও দুটি পরামর্শ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক—‘মক পোলের সময় দু’বার মেশিনটাকে অন অফ করতে হবে’। দুই, ‘মেশিন ইচ্ছে করে খারাপ করে দিতে পারে। তখন কিন্তু কেউ বাড়ি চলে যাবেন না। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবেন। ভোটটা দিয়ে তবে যাবেন’।
এর আগেও ইভিএম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল তৃণমূল। ব্যালটে ভোট করানোরও দাবি জানিয়েছিল। এবার একুশের বিধানসভার আগে সেই গণ্ডগোলের আশঙ্কা প্রকাশ করে কর্মীদের সতর্ক করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পাঁশকুড়ার সভায় তৃণমূলনেত্রীর এ হেন বক্তৃতা শুনে বিজেপির নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, “এসব হচ্ছে আগে থেকে গান গেয়ে রাখা। ভোটের পর বলবেন মেশিনে গণ্ডগোল ছিল। জোর করে হারিয়েছে।”
পূর্ব মেদিনীপুরের ‘প্রেস্টিজ ফাইট।’ হুইলচেয়ারেই ম্যারাথন সভা মমতার। হলদিয়ার পর খেজুরির সভা থেকেও গেরুয়া শিবির সহ অধিকারী পরিবারকে তীব্র আক্রমণ তৃণমূল সুপ্রিমোর। একইসঙ্গে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতি উসকে বলেন, ‘খেজুরি না থাকলে নন্দীগ্রাম হত না।’
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে নেত্রী বললেন, ‘ক্ষমতায় ফিরলে দুয়ারে সরকারে ২৫ লাখ বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে।’ একইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘হলদিয়া কেবল ল্যান্ডিং সেন্টার তৈরি হচ্ছে। তাতে আরও ২৫ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি হবে।’ তিনি বলেন, ‘তৃণমূল সরকারকে ভোট দিলে আগামী ২ মাস পর থেকে বাড়িতে বিনা পয়সায় রেশন পৌঁছে যাবে।’
খেজুরির সভামঞ্চে দাঁড়িয়েও বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন সু্প্রিমো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি রাবণ-দৈত্যের দল। বিজেপি বিভীষণ-দুঃশাসন। ওদের দলেই মেয়েরা সুরক্ষিত নয়।’ জনগণের কাছে তাঁর আর্জি, ‘ বহিরাগত এসে ভোট চাইতে এলে হাতা-খুন্তি- ঘটি নিয়ে তেড়ে যান।’ খেজুরিতেও মমতার নিশানা থেকে বাদ গেল না অধিকারী পরিবার। ‘অন্ধ স্নেহ’ ছিল স্বীকার করে এ দিনের সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, এখন তিনি স্বাধীন। আকারে-ইঙ্গিতে অধিকারী পরিবারকে বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁতের জন্য দোষারোপ করে মেদিনীপুরের মানুষের কাছে নিজের কষ্ট উগড়ে দিয়েছেন।
দলবদলের দিন অমিত শাহের সভায় শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, ২০১৪ থেকে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করলেও এ দিনের সভায় সেই প্রসঙ্গ টেনেই মমতা বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে তাঁরা যে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে, তা ভাবতে পারিনি। আজ বলছে, যোগাযোগ ছিল। ঘরের শত্রু বিভীষণ। তাই এত কষ্ট হয়েছে।’
বিজেপি কে একটাও ভোট না দেওয়ার আবেদন জানিয়ে তিনি এ দিন বলেন, ‘বাংলা ওদের ঘর নয়। বাংলা বাংলাই থাকবে। আর যদি কেউ ভেবে থাকে কিছু গদ্দারকে দিয়ে মানুষের উপর ছড়ি ঘোরাবে, হতে দেব না। অনেক সহ্য করেছি আর নয়।’
এ দিনও নিজেকে ২৯৪ আসনের প্রার্থী হিসেবে সকলকে মনে করিয়ে দিতে গিয়ে বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে চান, তাহলে প্রার্থী কে তা না দেখে, জোড়া ফুলে ভোট দেবেন।’মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘কোনও এনপিআর এ রাজ্যে হতে দেব না। কাউকে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে হবে না।’