বিক্রম চাঁদেই, দক্ষিণ মেরুতে আমরাই প্রথম,ঘোষণা ইসরোর

0
1202

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চাঁদ ছুঁতে পেরেছে ভারত। রবিবাসরীয় দুপুরে এমনটাই ঘোষণা করেছে ইসরো।

অরবিটারই খুঁজে বার করেছে হারিয়ে যাওয়া বিক্রমকে। থার্মাল ইমেজে ধরা পড়েছে চাঁদের বুকেই রয়েছে ল্যান্ডার বিক্রম। তবে সে এখন কী অবস্থায় আছে, কেমন আছে সেটা অজানা। যদিও ইসরো কর্তা কে শিবন জানিয়েছেন, বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। চাঁদের কক্ষপথ থেকে রেডিও বার্তায় বিক্রমকে পাকড়াও করার চেষ্টা চালাচ্ছে অরবিটারও। যোগ সূত্র মিললেই হুশ করে সেটা পাঠিয়ে দেওয়া হবে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে। মিশন কন্ট্রোল রুমের মনিটরে চোখ রেখে তারই অপেক্ষায় অধীর মহাকাশবিজ্ঞানীরা।


৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইসরো জানায়, সফট ল্যান্ডিং-এর আগে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার উচ্চতায় আচমকাই সিগন্যাল পাঠানো বন্ধ করে দেয় ল্যান্ডার। তার পর থেকেই উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছেন বিজ্ঞানীরা। ইসরো চেয়ারম্যান শিবন জানিয়েছিলেন, আশা নিভে যায়নি। সময় এখনও কিছু বাকি। বিক্রমের সঙ্গে ঠিক যোগাযোগ করা যাবে।

আজ দুপুরে ইসরো ঘোষণা করে বিক্রমের সন্ধান মিলেছে। অরবিটারের পাঠানো অপটিক্যাল ইমেজ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, বিক্রম অক্ষত থাকলেও থাকতে পারে। তার ভিতরে রোভার প্রজ্ঞানও তাহলে ঠিকঠাকই থাকবে। সেই বার্তাই পৃথইবীতে পাঠানোর চেষ্টা করছে অরবিটার।

লক্ষ্যের কাছে পৌঁছেও বিক্রম কেন লক্ষ্যচ্যুত হলো তার সম্ভাব্য কিছু কারণ জানিয়েছিলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। সেখানে গতি নিয়ন্ত্রণে বিপর্যয় একটা বড় কারণ বলে মনে করা হয়েছিল। টাচ ডাউনের আগে গতি বেড়ে গিয়ে মোক্ষম ধাক্কার ফলে বিক্রম ছিটকে যেতে পারে এমনটাই জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

কী বলা হয়েছিল—

গলদ হতে পারে ফাইন-ব্রেকিং পর্যায়ে

ইসরো জানিয়েছে, অরবিটার থেকে আলাদা হওয়ার পরে একটু একটু করে চাঁদের দিকে এগিয়ে গেছে বিক্রম। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে শেষ ১০০ কিলোমিটারের দূরত্ব পেরিয়ে অবতরণের জন্য মোট চারটি পর্যায় ছিল, রাফ ব্রেকিং, ফাইন ব্রেকিং, হোভারিং ও প্যারাবোলিক ডিসেন্ট। রাফ ব্রেকিং উতরে গিয়েছিল বিক্রম। সমস্যা হয়েছিল ফাইন ব্রেকিং-এর সময়।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদের ৩০ কিলোমিটার উপর থেকে নামা শুরু করার সময় বিক্রমের গতি ছিল ১,৬৮০ মিটার প্রতি সেকেন্ড। পরবর্তী ১০ মিনিটে সেটা ক্রমশ কমে দাঁড়ায় ১৪৬ মিটার/সেকেন্ড। এর পর শুরু হয় ফাইন-ব্রেকিং স্টেজ। চাঁদের থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে গতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বিক্রম। শেষ ২.১ কিলোমিটারে তাই আর কোনও যোগাযোগই করা যায়নি তার সঙ্গে। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১টা ৫৫ মিনিট।

চাঁদের ধুলোয় মহাজাগতিক রশ্মির বিকিরণে তাপমাত্রা বাড়তে পারে

মহাকাশবিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদে যে ১৪ দিন কাজ করার কথা ছিল রোভার প্রজ্ঞানের, সেই ১৪ দিন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সূর্যের আলো পড়ার কথা। হিমশীতল, অন্ধকার দক্ষিণ মেরু অভিযানের জন্য তাই ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ সেপ্টেম্বর মধ্যেকার সময়টাকেই বেছে নিয়েছিল ইসরো। কারণ, বিক্রম ও প্রজ্ঞান চলবে সৌরবিদ্যুৎশক্তিতে, তাই গবেষণা, অনুসন্ধান, পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য চাঁদের ওই অংশে সূর্যের আলোকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবে ল্যান্ডার ও রোভার।

গবেষকদের মতে, পৃথিবীর আয়োনোস্ফিয়ার যেমন মহাজাগতিক রশ্মিকে প্রতিফলিত করতে পারে। চাঁদে তেমনটা হয়না। সরাসরি আছড়ে পড়ে চাঁদের বুকে। আর চাঁদের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ণ ধুলিকণায় সেই রশ্মির ঝাপটা লেগে উত্তাপ অনেকটাই বাড়ে। ল্যান্ডিং-এর সময় বিক্রম গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এই ধূলিকণা যন্ত্রের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তা ছাড়া ধূলিকণার ঘর্ষণে উৎপন্ন তাপও রেডিও যোগাযোগ ছিন্ন করে দিতে পারে।

সন্দীপ চক্রবর্তী

ইসরোর সাম্প্রতিক ঘোষণার পরে অনেক বিজ্ঞানীই অবশ্য বলছেন, দক্ষিণ মেরুর ঠিক যে জায়গায় বিক্রমের ল্যান্ড করার কথা ছিল সেখানে সে নামতে পারেনি। তাই হয়তো সিগন্যাল পাঠাতে সমস্যা হয়েছে। অথবা এমনও হতে পারে, ল্যান্ড করার পরেই বিক্রমের ভিতরের যন্ত্রপাতিতে চিড় ধরেছে। এই প্রসঙ্গে কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের ডিরেক্টর, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, “চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ঠিক যে জায়গায় নামার কথা ছিল, সেখানে ল্যান্ড করেনি বিক্রম। তাহলে ইসরো এতক্ষণে বিক্রমের খোঁজ পেয়ে যেত। সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গার পাশে অন্য কোথাও অবতরণ করেছে বিক্রম তাই সেখানকার রেডিও সিগন্যাল এখনও ইসরোর হাতে আসেনি।”

সন্দীপ বাবু আরও জানান, থার্মাল ইমেজে রেগোলিথ বা চাঁদের ধূলিকণার যে তাপমাত্রা ধরা পড়েছে, সেটা ওই নির্দিষ্ট জায়গার তাপমাত্রা নয়, যেখানে ল্যান্ডিং-এর জন্য বিক্রমকে প্রোগাম করা হয়েছিল।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, অরবিটার কিছু ধাতব অংশের খোঁজ পেয়েছে যার হাবভাব বিক্রমের মতো এবং তাপমাত্রা আশপাশের ধূলিকণা বা রেগোলিথের থেকে আলাদা। ইসরো তাই বলতে পারছে বিক্রমের খোঁজ মিলেছে। কিন্তু, আশঙ্কা একটা থেকেই যাচ্ছে। বিক্রম যদি ১২ ডিগ্রির বেশি ঢাল নিয়ে চাঁদের বুকে নামে, তাহলে তার দরজা খুলে রোভার প্রজ্ঞান বার হতে পারবে না।

সে ক্ষেত্রে, আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। সূর্যের আলো দক্ষিণ মেরুর ওই অংশে পড়লে, সৌরশক্তিতে বিক্রমের ট্রান্সমিটার অ্যাকটিভ হবে এবং যদি সে অক্ষত থাকে তাহলে ফের কাজ করা শুরু করবে।

Previous articleবনগাঁয় বিনা চিকিৎসায় নির্মমভাবে মৃত্যু হল একটি ষাঁড়ের,প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ
Next articleকলকাতা লিগে বড় জয় মোহনবাগানের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here