দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় লগ্নির ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দিঘায় দেশ–বিদেশের শিল্পপতি ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সামনে মমতা বললেন, ‘আপনারা বিনিয়োগ করুন। পূর্ণ সহযোগিতা দেব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ব্যবসায় এক নম্বর গন্তব্যস্থল হয়ে উঠবে বাংলা।’
দিঘায় ‘বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভ ২০১৯’–এর সূচনা হল এদিন মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে। তিনটি মউ ও বেশ কয়েকটি প্রকল্পেরও ঘোষণা করা হল আন্তর্জাতিকমানের এই বাণিজ্য সম্মেলনে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাজপুর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের সাইট অফিস উদ্বোধন।
পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়ন নিয়ে দুদিনের এই বাণিজ্য সম্মেলনে শুরুতেই এদিন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা পাড়েন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে। শিল্পের সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একে অপরের পরিপূরক আধুনিক যুগে। অথচ গোটা দেশকে মোদি সরকার বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
মমতা তাই বলেন, ‘এটা সমালোচনা নয়, দেশের বাস্তব পরিস্থিতি। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর উন্নতি হয়নি। এই অবস্থায় বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আমরা।’ পরিসংখ্যান দিয়ে মমতা শিল্পপতিদের সামনে ব্যাখ্যা করেন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শিল্প ও পরিকাঠামো উন্নয়নে এই রাজ্য আজ কতটা সমৃদ্ধ হয়েছে। সারা দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার যেখানে ৬ শতাংশে নেমেছে, সেখানে রাজ্যের তৃণমূল সরকার ১২.৫৮ শতাংশে তুলেছে। এরকমই উৎপাদন শিল্প, বিদেশি বিনিয়োগ, বেকারত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে কেন্দ্রের শোচনীয় আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও বাংলা ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমিয়েছে।
মমতার কথায়, ‘সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও কাজের ওপর নির্ভর করে সবটাই। দারিদ্রের হারও আমরা ৬ শতাংশ নামিয়ে এনেছি। পরিকল্পনা খাতে বৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশ। এসবেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলা ভাল কাজ করছে।’
এদিন বেলা বাড়তেই ‘দিঘাশ্রী’ কনভেনশন সেন্টারে এসে উপস্থিত হন ছোট ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোগীরা। এসেছিলেন ইউকে, নেদারল্যান্ড, জাপান, পোল্যান্ড, কোরিয়া, আর্জেন্টিনা, আমেরিকা, ভুটান, বাংলাদেশ, চীন–সহ ২০টি দেশের শিল্পপতি, দূতাবাসের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প–বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন সে দেশের শিল্পমন্ত্রী নুরুল মহম্মদ মাজিদ হুমায়ুন, ভুটানের বিদেশ ও অর্থমন্ত্রী লোকনাথ শর্মা, নেদারল্যান্ডসের বাণিজ্য প্রতিনিধি মার্টিন ভনগার বার্গ, পোল্যান্ডের মার্সিন উইলোক প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ড. অমিত মিত্র, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ শিশির অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারী প্রমুখ।
শিল্পপতিদের মধ্যে ছিলেন হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়া, মায়াঙ্ক জালান, রুদ্র চ্যাটার্জি, উমেশ চৌধুরি, নিত্যানন্দ কুণ্ডু প্রমুখ। এছাড়াও রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা, শিল্পসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, রিনা মিত্র, ডিজি বীরেন্দ্র ও গৌতম সান্যাল। অন্তত ১৫০০ প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন বাণিজ্য সম্মেলনে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানান, কলকাতা থেকে যেহেতু দূরত্ব খুব বেশি নয়, তাই দিঘা আগামী দিনে পর্যটনের পাশাপাশি শিল্পক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে। সমুদ্রপাড় ঘেঁষে ৭ কিমির মেরিন ড্রাইভ তৈরির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে দুটি সেতুর কাজ শেষের পথে। আগামী মার্চ–এপ্রিলে তার উদ্বোধন হয়ে যাবে। পুরীর মতো এখানে বড় মন্দির তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে আগে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, এডিবি–র প্রকল্পের কাজ চলছে পশ্চিমবঙ্গে, আমাজন সংস্থা ক্ষুদ্র–মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ করছে। মমতা আরও জানিয়েছেন, হোটেল ব্যবসা বাড়ছে দিঘায়।তাজপুরে বন্দর তৈরি হবে। পর্যটন শিল্পেই ১৩ লক্ষ মানুষ কাজ করছে এ রাজ্যে।
ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসএমই, হোটেল শিল্পে প্রায় ৩১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। ১৬ লক্ষ বিদেশি পর্যটক এসেছে বাংলায়। আর খুব সঙ্গত কারণে তাই মমতার আবেদন, ‘ব্যবসা করুন হাসিমুখে। দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে। এখানে বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা, সবই আছে। আমাদের ল্যান্ডব্যাঙ্ক, জমিনীতি রয়েছে। নতুন পর্যটন নীতি, তথ্য–প্রযুক্তি শিল্প থেকে বিদ্যুৎ, দক্ষ কর্মী কোনও কিছুরই অভাব নেই।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ রয়েছে তাই বাংলা শুধু ‘গেটওয়ে নয়’, গোটা দেশের ‘লাইফ লাইন’।’ তিনি আরও বলেন, রাজনীতি বা সমালোচনা করলে চলবে না। বাংলাকে এখন কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমাদের শিক্ষিত যুব সম্প্রদায় রয়েছে। নাসা থেকে সারা পৃথিবী ছড়িয়ে কাজ করছে তারা। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন শিল্পোদ্যোগীরা।
কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের আর্থিকনীতির কড়া সমালোচনাও করতে ছাড়েন নি এদিন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে মোদির নাম না করে গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পরিস্থিতিকেও খোঁচা দিয়েছেন তাঁর বক্তব্যে। মমতার কথায়, ‘ঐক্য ও বৈচিত্র হল আমাদের ভিত। আমরা পশ্চিমবঙ্গে কাউকে আলাদা চোখে দেখি না। ভেদাভেদ করি না। ভ্রাতৃত্ববোধে একটা পরিবারে থাকি।
বাংলা–ই দেশকে পথ দেখায়। কলকাতার চরিত্রও কসমোপলিটন। রবীন্দ্রনাথ, মাদার টেরেসা বা অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাটি এই বাংলা। সংগৃহীত ছবি।