দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় এ বার ৭ দফায় লোকসভা ভোট করাবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। রবিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে এই ঘোষণা করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা।
বাংলায় ভোট কবে এবং কোথায়?
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১১ এপ্রিল প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে।
১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ভোট নেওয়া হবে আসনে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও রায়গঞ্জে।
২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ভোট গ্রহণ হবে পাঁচটি আসনে। সেগুলি হল,- বালুরঘাট, মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ।
২৯ এপ্রিল চতুর্থ দফায় আটটি আসনে ভোট হবে বাংলায়। সেগুলি হল,-বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রাণাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর ও বীরভূম।
৬ মে পঞ্চম দফায় যে সাতটি আসনে ভোট নেওয়া হবে সেগুলি হল, বনগাঁ, বারাকপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, হুগলি, শ্রীরামপুর, আরামবাগ।
১২ মে ষষ্ঠ দফায় বাংলার আরও আটটি আসনে ভোট হবে। ওই আসনগুলি হল, তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়া।
১৯ মে সপ্তম ও শেষ দফায় পশ্চিমবঙ্গে ৯ টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। ওই ৯ টি লোকসভা কেন্দ্র হল, দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতা উত্তর।
বাংলায় এ বার সাত দফায় লোকসভা ভোট করাবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে যা নজিরবিহীন।
রবিবার বিকেলে নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে এই ঘোষণা করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। তিনি জানান, গোটা দেশে মোট সাত দফায় ভোট গ্রহণ হবে লোকসভা নির্বাচনে। বাংলাতেও ওই সাত দফাতেই ভোট গ্রহণ করবে কমিশন। উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারেও ভোটগ্রহণ হবে সাত দফাতেই।
বাংলায় প্রথম দফা তথা ১১ এপ্রিল দুটি আসনে ভোট গ্রহণ হবে, ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় তিনটি আসনে ভোট হবে, ২৩ এপ্রিল ভোট হবে পাঁচটি আসনে, চতুর্থ দফায় ২৯ এপ্রিল আটটি আসনে, ৬ মে পঞ্চম দফায় সাতটি আসনে, ১২ মনে ষষ্ঠ দফায় আটটি এবং ১৯ মে সপ্তম ও শেষ দফায় বাংলার ৯ টা আসনে ভোট নেওয়া হবে।
সন্দেহ নেই কমিশনের এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলায় ভোটের দামামা বেজে গেল। কারণ, প্রথম দফার ভোটের আগে ঠিক এক মাস হাতে রইল সব দলের সামনে। ১১ এপ্রিলের ওই ভোটের জন্য নোটিফিকেশন শুরু হয়ে যাবে মার্চের ১৮ তারিখ।
এর আগে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় সাত দফায় ভোট গ্রহণ করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু লোকসভা ভোটে কখনও এত দীর্ঘ সময় ধরে ভোট গ্রহণ হয়নি পশ্চিমবঙ্গে। পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় পাঁচ দফায় ভোট নেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে ভোট গ্রহণ হয়েছিল তিন দফায়।
তবে গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের সময় বল্গাহীন রাজনৈতিক হিংসার ছবিটা ছড়িয়ে পড়তেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, লোকসভা ভোটে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হতে পারে! শুধু হিংসার ঘটনাই নয়, তার থেকেও বড় উদ্বেগের বিষয় ছিল, পঞ্চায়েত ভোটের সময় প্রায় ২ কোটি মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। ৩৪ শতাংশ আসনে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি, বিশেষ করে বিজেপি নেতৃত্ব বারবার কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে বলেন, বাংলায় অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে সবরকম ব্যবস্থা নিতে হবে নির্বাচন সদনকে। বিরোধীদের সেই বক্তব্যকে কমিশন যে গুরুত্ব দিচ্ছে এ দিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়ে যায়। পৃথক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের ভোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি মন্তব্য করেননি ঠিকই। কিন্তু বলেন, যে সব রাজ্যে ভোটের সময় হিংসার ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, যে রাজ্যগুলিতে প্রচুর স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে, সেখানে বাইরের রাজ্য থেকে অভিজ্ঞ আমলাদের বিশেষ অবজার্ভার হিসাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
এ ছাড়াও এ বারের ভোটে বিশেষ পুলিশ অবজার্ভার নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বাংলায় লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের সময় বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেন যে, আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হলেও যখন কোথাও হিংসার ঘটনা ঘটে তাদের দেখা যায় না। আসলে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যের পুলিশের কম্যান্ডে কাজ করে। ফলে রাজ্য পুলিশের অনেক কর্তা আধা সামরিক বাহিনীকে ঠিক মতো ব্যবহার করেন না। এই কারণেই বিরোধী নেতারা কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটে বাংলায় পুলিশ অবজার্ভার নিয়োগ করা হোক। কোথায় কত আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে তা ওই পুলিশ পর্যবেক্ষকরাই স্থির করবেন। সেই দাবিও মেনে নিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।