দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ বিনা মেঘেই বজ্রপাত। তৃণমূলে যোগদান দেবেন এর আগে একবারের জন্যও বলেননি। হঠাৎই শনিবারের বারবেলায় যে কোনও রহস্য গল্পের মতোই বাংলার রাজনীতিতেও নতুন টুইস্ট দেখা গিয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সুপ্রিয় বড়াল তথা বাবুল সুপ্রিয়।
যোগদানের পর সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘সাত বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য যা করেছিলাম রাজনীতি ছাড়ার পর সেখানে ফুলস্টপ চলে এসেছিল। এটা কোনও প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়। একটা সুযোগ এসেছে। আগামী দিনে বাংলার উন্নয়নের জন্য, বাংলা মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করব।’
এরপরই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আসানসোলের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেব। যেহেতু বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগদান করেছি তাই ওই আসন নিয়ে টানা হিঁচড়া করা উচিত নয়। নিয়ম অনুযায়ী বাকি পদক্ষেপ নেব।’ এরপরেই তৃণমূলে সদ্য যোগদান করা বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘এত উষ্ণ অভ্যর্থনা পাব তৃণমূল থেকে তা সত্যিই ভাবিনি। আগামী সোমবার দিদির সঙ্গে দেখা করছি।’ ভবানীপুরে মমতার প্রচারে যাবেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের জন্য বাবুলের প্রচারের দরকার হয় নাকি? তবে দল বললে নিশ্চয়ই যাব।’
বাবুল আরও বলেন, ‘২০১৪-এ জিতেছিলাম। তাই প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯-এ ফের যখন প্রতিমন্ত্রী করা হল সকলে খুব অবাক হয়েছিল। একজন প্রতিমন্ত্রী কতটা ক্ষমতা তা আপনারা সকলেই জানেন।’ এরই পাশাপাশি বাবুল বলেন, ‘আগামিকাল সকলে আসুন, যা যা প্রশ্ন আছে সমস্ত উত্তর দেব।’
তাঁর তৃণমূলে যোগদান নিয়ে বিস্ময়, টুইস্ট, আকস্মিকতা যাই থাক, এখন কৌতূহলের বিষয় হল, বাবুল তৃণমূলে কী পদ পেতে পারেন তা নিয়ে। এ ব্যাপারে বেশ কিছু সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজানীতিতে।
তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, প্রথম কথা হল বাংলায় বিজেপির সাংসদ সংখ্যা এক জন কমে গেল। তাঁর কথায়, “আমার ধারণা হল, বাবুল সুপ্রিয় আসানসোল লোকসভার বিজেপি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। তার পর সেই আসনে উপ নির্বাচন হবে। বিধানসভা ভোটের ফল অনুযায়ী আসানসোল লোকসভায় তৃণমূলের লিড ছিল। অর্থাৎ আসানসোলে উপ নির্বাচন হলে তৃণমূলের অনায়াসে জেতার কথা।”
তৃণমূলের অনেকের ধারণা, বাবুল সুপ্রিয়কেই দলের টিকিটে আসানসোল লোকসভার উপ নির্বাচনে প্রার্থী করা হতে পারে। বাবুল যদি তাতে রাজি না হন, তিনি যদি নিরাপদে রাজ্যসভা থেকে নির্বাচিত হতে চান তা হলে সেখানে প্রার্থী করা হতে পারে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে। আর রাজ্যসভায় অর্পিতা ঘোষের ছেড়ে যাওয়া আসনে মনোনীত করা হতে পারে বাবুলকে।
আরও একটি সম্ভাবনা নিয়ে এখন জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তা হল আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক তথা বিজেপির মহিলা মোর্চা সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পলকে নিয়ে। অগ্নিমিত্রা বাবুলের ভাল বন্ধু। তাঁকে আসানসোল দক্ষিণ আসন থেকে প্রার্থী করার নেপথ্যে বাবুলের ভূমিকা ছিল বলে অনেকে মনে করেন। ফলে অগ্নিমিত্রা আগামী দিনে কোন পথে হাঁটবেন তা নিয়ে এখন থেকেই কৌতূহল বাড়ছে।
একুশের বিধানসভা ভোটে বাংলায় ৭৭টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। ইতিমধ্যেই ৪ জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তা ছাড়া ২ জন সাংসদ যাঁরা বিধানসভা ভোটে জিতেছিলেন তাঁরা ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে বিজেপির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭১। এ বার বাংলা থেকে লোকসভা আসনও কমল বিজেপির। ১৮ থেকে কমে দাঁড়াল ১৭।এখন দেখার আগামী দিনে আর কীকী হয়!