একদিনে রেকর্ড মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা প্রাণ কেড়েছে ৬৮ জনের, আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৯২ জন। অর্থাৎ পরিস্থিতি চরম ভয়ানক। কিন্তু তবুও হুঁশ ফিরেছে কি সাধারণ মানুষের! মাস্কের থুতনিতে অবস্থান অনেক ক্ষেত্রেই অব্যাহত। অনেকে আবার মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করছেন না। বাজার, শপিং মল, ধর্মতলা এলাকার সামাজিক দূরত্ব গাল ভরা কথা মাত্র!
রাজ্যে প্রতি ৩ জনের কোভিড পরীক্ষায় ১ জন সংক্রমিত ধরা পড়েছে। সেই সঙ্গে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ফের ১৬ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। অন্য দিকে, করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১১ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কলকাতায় মৃতের সংখ্যা ২৬। যা এ শহরে এখনও পর্যন্ত ১ দিনে মৃ্ত্যুর নিরিখে সবচেয়ে বেশি।
সোমবার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১১ হাজার ৯ জন কোভিডের শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি, দৈনিক সংক্রমণের হারও বেড়ে হয়েছে ৩২.৯৩ শতাংশ।
সোমবার রাতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ২৪ পরগনায় ১১ জন কোভিড রোগীর মৃ্ত্যু হয়েছে। তা ছাড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭, হুগলিতে ৫ এবং মালদহে ৪ জন মারা গিয়েছেন। একই সঙ্গে, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হাওড়ায় ২ জন করে সংক্রমিতের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, কোচবিহার, নদিয়া, এবং পশ্চিম বর্ধমানে ১ জন করে রোগী মারা গিয়েছেন।
গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে বাংলায় মৃত্যুর হার অন্যান্য রাজ্য অপেক্ষা ছিল অনেকাংশে কম। কিন্তু বর্তমানে হু হু করে রাজ্যে বাড়ছে করোনা, কমছে সুস্থতার হারও। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪ হাজার ৯৪৯ জন, সুস্থতার হার ৮৬.০৬ শতাংশ। ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯৪২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৯ জনের। রাজ্যে মধ্যে সবথেকে ভয়াবহ পরিস্থিতি কলকাতার। বিগত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮৬৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৩ হাজার ৪২৫ জন এবং ৯৮২ জন।
প্রসঙ্গত, রবিবার রাজ্যে প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী বিগত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৮৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের প্রয়োজনে নবান্নে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েই চলেছে।
কলকাতায় প্রতিদিন হাজারের উপরে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি আঁচ করে হাসপাতালের বেড বাড়ানোর পাশাপাশি সম্প্রতি সেফ হোমের পরিকাঠামো বাড়াতে আরও তৎপর হয় রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতায় সেফ হোমের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান বিদায়ী পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল অবস্থা। দেশ জুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের আকাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘রাজ্যেকে বঞ্চিত করে অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ।
সংক্রমণ রুখতে গোটা দেশের মতো এ রাজ্যেও টিকাকরণ কর্মসূচি চলছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় তা একধাক্কায় অনেকটাই কমেছে। ওই সময়ের মধ্যে মাত্র ৩০ হাজার ৫৪১ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের অন্যান্য জেলার থেকে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পগনায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় এ শহরে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৭৩ জন। সেই সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনায় দৈনিক আক্রান্ত ৩ হাজার ৪২৫ জন। এ ছাড়াও, হাওড়া (৯১৪), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৯৮২), হুগলি (৮১৮), পশ্চিম বর্ধমান (৭৭০), বীরভূম (৭০৪), মালদহ (৬৪৪), নদিয়া (৬৩৭), পূর্ব মেদিনীপুর (৫০৫) এবং মুর্শিদাবাদ (৫০২) জেলার দৈনিক আক্রান্তের পরিসংখ্যানও উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।