দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দুর্গাপুজো চলাকালীন বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন কিছু সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার আঁচ পড়েছে সে দেশের উৎসবের পরিবেশে। এপার বাংলার মতো ওপার বাংলার বাঙালিরাও উৎসবে মেতে ওঠেন এই সময়। তবে এবছর সেই উৎসবে ভাঁটা পড়েছে ওপার বাংলার দুর্গা মণ্ডপে তাণ্ডবের ঘটনায়।
মৌলবাদী কীর্তির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকায় পুজো পরির্দর্শনের সময় বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠাের সাজা দেওয়া হবেই। সূত্রের খবর, বাংলাদেশ পুলিশ কুমিল্লায় পুজো মণ্ডপে কোরান শরীফ রাখা এবং তার জেরে হিংসার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৪জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
উল্লেখ্য, ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার একটি পুজো মণ্ডপে কোরান শরীফ পাওয়াকে কেন্দ্র করে সহিংসতার জের ধরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও পুলিশের সাথে হামলাকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় চার জন নিহত হয়েছে। এমনকি এই পুরো ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি হামলাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোরতম শাস্তি দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। বৃহস্পতিবার হাসিনা বলেন যে, বাংলাদেশের মতো অসাম্প্রদায়িক দেশে এহেন ঘটনা নিন্দনীয়। এখানে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করেন। কুমিল্লা জেলায় যে ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে জোর তদন্ত শুরু হয়েছে। ধর্মনির্বিশেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে তারপরও কমেনি এমন হামলার ঘটনা। জানা গিয়েছে, শুক্রবার বাংলাদেশের নোয়াখালিতে অবস্থিত ইসকনের একটি মন্দিরে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের অভিযোগ ওঠে। মন্দিরে কিছু জিনিসে আগুন লাগানো এবং উপস্থিত ভক্তদের মারধরেরও অভিযোগ ওঠে। খবর, শুক্রবার এই নোয়াখালির চৌমুহনীতে হিন্দুদের ১০টি মন্দির ও বাড়িতে হামলা হয়েছে। বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সিকদার জানান, ইসকন মন্দির হামলার ঘটনায় চারজন মারাত্মকভাবে আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একজন নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ প্রান্ত চন্দ্র দাসের মৃতদেহ মেলে এদিন মন্দির সংলগ্ন জলাশয় থেকে।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজো চলাকালীন বাংলাদেশের একাধিক জায়গায় দুর্গাপুজো মণ্ডপে ও মন্দিরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। কুমিল্লা, চট্টগ্রামের বাঁশখালি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এবং কক্সবাজারের পেকুয়ায় বিভিন্ন মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। বেশ কিছু ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, দুর্গা প্রতিমা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, এই ঘটনায় গতকালই একজনের মৃত্যু ঘটেছিল। শনিবার একই ঘটনায় এলাকার এক জলাশয় থেকে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতের নাম প্রান্ত চন্দ্র দাস (২৬)। নোয়াখালির বেগমগঞ্জে চৌমুহনীতে এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। শনিবার সকাল থেকেই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
দুর্গাপুজোর সময় এমন ঘটনায় নানা মহলে উঠেছে বিতর্কের ঝড়। নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ প্রশাসন। দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়ার কথাও বলেছেন শেখ হাসিনা। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
অন্যদিকে শুক্রবার ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বের হওয়া এক বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ায় শুরু হয় সংঘর্ষ। এই ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ বলেন, “বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। মিছিল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান জানান, “নতুন করে সহিংসতা এড়াতে শনিবার সকাল থেকেই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হবে। এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এই ঘটনায় গতকালই যতন সাহা নামে এক ব্যাক্তির মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন নোয়াখালি স্টেট জেনারেল হাসপাতালের কর্তা সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম।
নোয়াখালির পর চট্টগ্রাম ও সিলেটেও একাধিক পুজো মণ্ডপ ভাঙচুরের খবর সামনে আসে। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অবস্থান বিক্ষোভ-ধর্মঘট। প্রদর্শন করেন। অবিলম্বে দোষীদের শাস্তির দাবি করেন। তবে দেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী সহ প্রমুখের আশ্বাসের পর বিক্ষোভ-ধর্মঘট উঠে যায়।
বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে, তাদের আমরা খুঁজে বের করবই। আমরা বের করতে পারব। এখন প্রযুক্তির যুগ। এটা বের করা যাবে। সে যেই হোক না কেন, যে ধর্মের হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে যথাযখ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তা আমরা করেছি এবং করব।” সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই এহেন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে দাবি করেন হাসিনা।
জামাত-ই-ইসলামি নামক এক দলের বিরুদ্ধে এই ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। যেসব এলাকায় সহিংসতা হয়েছে সেখানে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও শেখ হাসিনা দেশের হিন্দুদের সংখ্যালঘু না ভাবার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়াও পুরো ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা উড়িয়ে দিচ্ছে না বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টির নেতারা। কুমিল্লার ঘটনার পেছনে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মদত আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন তাঁরা।
এমনকি ভারতকে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘ভারতেও যেন তেমন কিছু না ঘটে যার প্রভাব বাংলাদেশে এসে পড়ে সেইদিকে নজর দিতে হবে।’ বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা হাসিনার কাছে এই কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া একাধিক সাম্প্রদায়িক ঘটনা নিয়ে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে হাসিনার দ্বারস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশের এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।