বনগাঁ কার্নিভালে দর্শনার্থীদের ধৈর্য্যচ্যুতি,ছুটছেন রেড রোডে:

0
955

শাস্ত্র মতে দুর্গাপুজো শেষ হয়ে বিসর্জনের বাজনা বেজে গিয়েছে। তবু রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা দিয়েই শেষ হতে চলেছে এবছর বাংলার দুর্গোৎসব। কলকাতার আদলে বনগাঁ শহরেও দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জন কে ঘিরে কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছিল। উদ্যোক্তা বনগাঁ পৌরসভা। সহযোগিতায় বনগাঁ পুলিশ প্রশাসন। ২২ অক্টোবর সোমবার এই শহরের বড় বাজেটের পুজো উদ্যোক্তারা মূলত এই কার্নিভালে অংশ নেয়।বনগাঁ মহকুমা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে অসংখ্য মানুষ এদিন দুপুর থেকে যশোর রোড, চাকদা রোড এবং মিলিটরি রোডে জড়ো হন৷ ঘন্টার পর ঘন্টা. অপেক্ষায় থাকেন লক্ষাধিক মানুষ৷ সোমবার বিকাল ৪টে থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল অনুষ্ঠান, কিন্তু কার্নিভাল শুরু হয় রাত ১০টা নাগাদ৷ দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষার প্রহড় গুণে ধৈর্য হারিয়ে ফিরে চলেযান কার্নিভাল দেখতে আসা অসংখ্য মানুষ ৷ এক কথায় ফাঁকা হয়ে যায় যশোর রোডের ধারে অপেক্ষারত দর্শনার্থীদের একটা বড় অংশ৷এঁদের মধ্যে বেশির ভাগটাই ছিলেন গ্রামের মানুষ৷ বাগদা থেকে এসেছিলেন সুধীন বিশ্বাস,তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এমন হবে জানতে পারলে বাড়িতে ঘুমাতাম,গাইঘাটার বাসিন্দা মনোজ ঘোষ আরও জানান কিছু নেতার একই কথা মাইকে বার বারশুনে শুনে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ,কিছু না দেখে পরিবার সহ বাড়ি ফিরতে হল । ক্ষোভ প্রকাশ করেন শহরের বাইরে দুপুর ৩টে থেকে আটকে থাকা বিভিন্ন গাড়ীর যাত্রী ও ড্রাইভারেরা৷ কৃষ্ণনগর থেকে বসিরহাট বাড়ি ফেরার পথে মতিগঞ্জে আটকে পড়েন সহীদুল মোল্লা,তার কথায় আমরা জানতাম না ,এখানে এভাবে রাস্তায় আটকে পড়তে হবে দীর্ঘক্ষন অন্য কোন পথ খোলা রাখা উচিত ছিল৷ এ বিষয়ে প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ বলেন,প্রচার করা হয়েছিল পুরসভা এবং পরিবহন দপ্তর থেকে সমস্ত বিষয় প্রশাসন নথিভূক্ত করেছে, আগামী দিনে আরও ক্রটি মুক্ত অনুষ্ঠান কি ভাবে করা যায় সে দিকে লক্ষ রাখছে স্থানীয় প্রশাসন৷ এদিন অভিযান সংঘের মাঠ থেকে যশোর রোড ধরে বাটার মোড়, বিএস ক্যাম্পের মোড়, মিলিটারি রোড, মতিগঞ্জ হয়ে থানার ঘাটে ভোর৪টে নাগাদ শেষ হয়েছে এই শোভাযাত্রা। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য বাটার মোড়, বিএস ক‍্যাম্প মোড় এবং মতিগঞ্জ মোড়ে বিশেষ বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এসডিপিও অনিল কুমার রায় জানান, এই কার্নিভালে যে পুজো কমিটিই অংশ নিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিযোগিতামূলক এই শোভাযাত্রায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারীদের যথাক্রমে ৫০,৪০ এবং ২৫ হাজার টাকা করে নগদ পুরস্কার দেয়া হবে। এই কার্নিভালকে ঘিরে ইতিমধ্যেই বনগাঁ শহরে এবং পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে উন্মাদনা শিখরে পৌঁছেছে। বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন “বনগাঁ উৎসবের শহর” এখানে সুস্থ সম্প্রীতিতে মোড়া থাকে সারা বছর এই শহরের ক্যানভাস।দুর্গা মায়ের বিদায়কে সাক্ষী রাখতে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছিলেন স্থানীয় মানুষ৷ দর্শনার্থীদের জন্য যশোর রোড সহ,মিলিটরি রোড এবং চাকদা রোডের দু-পাশে বসার জন্য সুব্যাবস্থা করা হয়েছিল৷ ছিল মেডিকেল টিম!দুর্ঘট না এড়াতে,দমকল সহ পুলিশ প্রশাসন কড়া নজর রাখাহয়েছিল গোপন ক্যামেরায়৷ সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে বনগাঁর কার্নিভ্যাল এবার আলোকিত হয়েছে। যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে কিছুটা সময় প্রথম দিকে নষ্ট হলেও সারারাত মানুষ আমাদের পাশে ছিলেন ,উপভোগ করেছেন এবারের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।বনগাঁ মহকুমার সমস্ত মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এই কার্নিভালে অংশগ্রহণ করবার জন্য৷ সোমবার সকাল থেকে কার্নিভ্যাল দেখতে ভিড় করেছিলেন অগুনিত মানুষ।তাদের কথা মাথায় রেখে আগামী বছর আরও বড় করে কার্নিভ্যালের আয়োজন করা হবে বলে জানান বনগাঁর প্রাক্তন পুর প্রধান জ্যোৎস্না আঢ্য। – বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বিশ্বজীৎ দাস বলেন বনগাঁর মানুষ ভালবাসতে জানেন,তাদের ভালবাসা আর শুভেচ্ছাতেই এবারের দুর্গা কার্নিভাল স্বয়ং সম্পূর্ণ।কার্নিভাল এ উপস্থিত ছিলেন বারাসত জেলার পুলিশ আধিকারিক সহ অন্যান্য গুণীজনেরা।

অন্য দিকে দেশবিদেশের অতিথিদের সামনে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের সমাপ্তি হবে মঙ্গলবার। কলকাতা শহরের সমস্ত পুরস্কারজয়ী পুজোর শোভাযাত্রা। দুর্গা কার্নিভালের এটি তৃতীয় বছর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছিল ২০১৬ সালে। তার পর থেকে ক্রমে বেড়েছে এর পরিসর এবং বর্ণময়তা। মঙ্গলবার সেই শোভাযাত্রা উপলক্ষেই সব পথ মিলে যাবে রেড রোডে। এক জায়গায় বসে সেরা পুজোগুলি দেখে নেওয়ার তীর্থক্ষেত্রে। অনুষ্ঠানের সূচনা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও তাঁর ট্রুপের মাতৃবন্দনা দিয়ে। তারপর কার্নিভাল রঙিন হয়ে উঠবে একের পর এক পুজো আয়োজনের প্রদর্শনী, ট্যাবলো, চন্দননগরের আলো, শিল্পসংস্কৃতি, অভিনয় জগতের তারকা আর দেশ–বিদেশের অতিথিদের উপস্থিতিতে। থাকবেন বিশিষ্ট শিল্পদ্যোগীরাও। থাকবেন বিচারপতি, মন্ত্রী, পদস্থ আমলা–সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ অফিসাররাও। বিকেল সাড়ে ৪টেয় কার্নিভাল শুরু। চলবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। কিন্তু শুরুর অনেক আগে থেকেই ভরে যাবে রেড রোডের দর্শকাসন। থাকবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। সোমবারই তিনি টুইট করে সকলকে ওই শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মমতার ফেসবুক পেজেও ‘লাইভ’ দেখা যাবে গোটা অনুষ্ঠান। কার্নিভালে যোগ দিচ্ছে সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী ক্লাব, বড়িশা ক্লাব, কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, ত্রিধারা, অকালবোধন, হিন্দুস্থান পার্ক দুর্গোৎসব কমিটি, সল্টলেক এ কে ব্লক অ্যাসোসিয়েশন, শিবপুর মন্দিরতলা সাধারণ দুর্গোৎসব কমিটি, ৯৫ পল্লী সর্বজনীন দুর্গোৎসব যোধপুর পার্ক। থাকছে টালা পার্ক প্রত্যয়, সল্টলেক এফ ডি ব্লক সর্বজনীন পুজো কমিটি, হরিদেবপুর অজেয় সংহতি, ৪১ পল্লী, ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন মহম্মদ আলি পার্ক, কলেজ স্কোয়ার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, হাতিবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, দমদম পার্ক ভারতচক্র ক্লাব, একডালিয়া এভারগ্রিন, হাওড়ার স্বামীজী স্পোর্টিং ক্লাব–সহ কলকাতা, হাওড়া, বিধাননগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোট ৭৪টি পুজো। প্রতিটি ক্লাবের প্রতিমাই আসবে তাদের স্থানীয় থানার পুলিসের তত্ত্বাবধানে। প্রসঙ্গত, কসবার বোসপুকুর শীতলা মন্দির এবার বিশাল পাথরে খোদাই প্রতিমা করেছে। সেটি কার্নিভালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় তারা ওই মূর্তির ছবির ফ্লেক্স নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। প্রতি পুজোর আয়োজক মুখ্যমন্ত্রী ও বিশিষ্ট অতিথিদের সামনে দেড়মিনিট করে মোট ৩ মিনিট সময় পাবেন তাঁদের থিমের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে। যাঁদের থিম সং আছে, তাঁরা সেটি বাজাবেন। সঙ্গে থাকবে থিমভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। যাঁদের থিম সং নেই, তাঁদের প্রতিমার যাত্রাপথে বাজবে ঢাকের বাদ্য। প্রতিটি প্রতিমা রেড রোডে আসার সঙ্গে সঙ্গে ধারাভাষ্যে বলে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট পুজোটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। বাংলার পাশাপাশি বিদেশি দর্শকদের জন্য ইংরেজিতেও চলবে ধারাভাষ্য।

ঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী–সহ বিশিষ্টরা বসবেন। পাশের দু’টি মঞ্চে থাকবেন ভিভিআইপি এবং বিদেশি অতিথিরা। রাজ্যের প্রথমসারির ৭৫ জন শিল্পপতিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, সঞ্জয় বুধিয়া, হর্ষ নেওটিয়া, সত্যম রায়চৌধুরী প্রমুখ। কার্নিভাল দেখতে ইংল্যান্ড থেকে এসেছে ২০ জন বিশেষ প্রতিনিধি দল। সম্প্রতি লন্ডনের টেমস উৎসবে বাংলার শারদোৎসবকে তুলে ধরা হয়েছিল। তারপর থেকেই বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে শারোদৎসব দেখার আগ্রহ বেড়েছে। বেশকিছু বিদেশি পর্যটকেরও কার্নিভালে অংশ নেওয়ার কথা। সোমবার তাঁরা বিধাননগরে মহড়াও দিয়েছেন।

শহরের পাঁচতারা হোটেলগুলি থেকে আসবেন আরও ২০০ জন বিদেশি পর্যটক। আইসিসিআর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনো ইন্ডিয়া, জেআইএস, আ্যাডামাস, অ্যামিটির মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদেশি পড়ুয়াদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দেশবিদেশ মিলিয়ে আড়াই হাজার পর্যটক থাকবেন কার্নিভাল প্রাঙ্গণে। তাঁদের মধ্যে দেড়হাজার বিদেশি।
নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, চীন ছাড়াও আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালির উপদূতাবাস ও কনসুলেটের প্রতিনিধিরা থাকবেন। থাকবেন কনসাল জেনারেলরাও। কার্নিভালে দর্শকদের প্রবেশ অবাধ। দাঁড়িয়েও শোভাযাত্রা দেখা যাবে। তবে আসনে বসে সামনাসামনি কার্নিভাল উপভোগের জন্য ছাড়পত্র পাওয়ার হুড়োহুড়ি পড়েছে। তথ্যসংস্কৃতি দপ্তর এবং পর্যটন দপ্তরে তো বটেই, মন্ত্রীদের কাছেও জমছে অনুরোধের পাহাড়। কলকাতাস্থিত বিভিন্ন দেশের উপদূতাবাস, কনসুলেট থেকেও পর্যটন দপ্তরের কাছে কার্নিভাল দেখার ‘‌পাস’‌ চেয়ে বিস্তর অনুরোধ এসেছে।
প্রথমে ঠিক ছিল ১৫ হাজার দর্শকাসনের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু আগ্রহ বাড়তে থাকায় তা বাড়িয়ে ২৬ হাজার করা হয়েছে। দাঁড়িয়ে দেখতে পাবেন আরও অন্তত ৫ হাজার মানুষ। তবে এর চেয়েও বেশি দর্শক আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিমার সঙ্গেই কার্নিভালে থাকছে ট্যাবলো। সেখানে কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, সবুজশ্রী, খাদ্যসাথীর মতো রাজ্য সরকারের জনপ্রিয় প্রকল্পগুলি তুলে ধরা হবে। খিদিরপুর থেকে রেড রোড হয়ে কিংসওয়ে পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে চন্দননগরের আলোয় পুজোর ভাবনা এবং সবুজশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পগুলি তুলে ধরা হয়েছে। কার্নিভাল প্রাঙ্গণে দর্শকদের ঢোকার জন্য ময়দানের দিক থেকে ৬টি প্রবেশপথ করা হয়েছে। দর্শকদের সুবিধার্থে থাকছে ৪টি জায়ান্ট স্ক্রিন এবং ১০০টি প্লাজমা টিভি। কার্নিভাল সরাসরি টিভিতেও সম্প্রচার করা হবে।‌‌‌‌ যাঁরা রেড রোডে পৌঁছতো পারবেন না, তাঁদের জন্যই এই ব্যবস্থা। কার্নিভালের পরিপূর্ণ তৃপ্তি পেতে মঙ্গলবার সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়েছেন বহু মানুষ সীমান্ত শহরবনগাঁ সহ বাংলার প্রান্তিক গ্রাম ও শহর থেকে৷

Previous article“লক্ষ্মীলাভের আশায়”৷ দেবন্বিতা চক্রবর্তী : বনগাঁ: দেশের সময়ঃ
Next articleলক্ষ্মীপুজোর বাজারে – ফল সবজি আকাশ ছোঁয়া:দেবন্বিতা চক্রবর্তী: বনগাঁ: দেশের সময়ঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here