দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সম্প্রতি ফোনে কথা হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেই আলোচনায় নাকি উঠে এসেছে কাশ্মীর প্রসঙ্গ। জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থা নিয়ে হাসিনার কাছে নিজের চিন্তার কথা নাকি জানিয়েছেন ইমরান। এই খবরে উদ্বেগ বেড়েছে নয়াদিল্লির। চিনের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে ভারতের পড়শি রাষ্ট্রগুলির অবস্থান নিয়ে ধন্ধে ভারত।

গত মাস থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে নেপাল। তার মধ্যে যদি ইমরানের সঙ্গে আলোচনার পরে ঢাকাও ভারতের বিরোধিতা শুরু করে সেক্ষেত্রে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে চাপে পড়তে পারে নয়াদিল্লি। তাতে অনেকটাই সুবিধা হবে চিনের। কারণ ইতিমধ্যেই চিন অনেকভাবে বাংলাদেশের উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে, যাতে বাংলাদেশও ভারত বিরোধিতা শুরু করে। এই প্রভাব খাটিয়েই নেপালকে নিজেদের দলে টেনেছে চিন। ইমরানের এই ফোন করার পিছনেও চিনের প্রভাব থাকতে পারে বলে নয়াদিল্লির ধারণা।

অবশ্য ইমরান ও হাসিনার এই ফোনালাপের পরে ইসলামাবাদ ও ঢাকার তরফে যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে তার মধ্যে তফাত রয়েছে। ইসলামাবাদের তরফে জারি আট পাতার বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে নিজের চিন্তা হাসিনাকে বলেছেন ইমরান। উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী চিন্তিত। তিনি চান শান্তিপূর্ণ ভাবে এই সমস্যার সমাধান হোক। অন্যদিকে ঢাকার তরফে জারি করা দু’পাতার বিবৃতিতে বলা হয়েছে দু’দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ও বাংলাদেশের বন্যা নিয়ে দু’জনের কথা হয়েছে। সেখানে কাশ্মীরের কোনও প্রসঙ্গ নেই।

এই ঘটনার পরে অবশ্য বিদেশমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে চিন্তার কোনও কারণ নেই। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। জম্মু-কাশ্মীর ও তার উন্নতি নিয়ে ঢাকার মনোভাব নয়াদিল্লি জানে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে।”

তবে কূটনৈতিক মহল পুরোপুরি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ভারতের চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ভারত ও চিনের মধ্যে এই সমস্যার সময়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এই সম্পর্কের হঠাৎ পরিবর্তন নয়াদিল্লির পক্ষে উদ্বেগ বাড়াতেই পারে। অনেক ক্ষেত্রেই শেখ হাসিনা নিজের গণ্ডি পেরিয়েছেন। ইতিহাসে তার অনেক প্রমাণ রয়েছে বলেই তাঁদের মত।

প্রাক্তন বিদেশ সচিব কৃষ্ণণ শ্রীনিবাসন অবশ্য এই ব্যাপারে ভয় না পাওয়ার কথাই বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “দুই প্রধানমন্ত্রী তঁদের মধ্যে আলোচনায় যে কোনও বিষয় তুলতেই পারেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দুটিই মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। তাই তাঁদের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনায় কাশ্মীর প্রসঙ্গ আসতেই পারে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।”

জম্মু-কাশ্মীরের উপর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার সময় পাকিস্তান এর বিরোধিতা করলেও বাংলাদেশ একে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেছিল। কিন্তু নাগরিকত্ব আইন পাশ করার পরে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আব্দুল মুমিন জানিয়েছিলেন, এই আইন পাশ করে ভারত ধর্মনিরেপক্ষ রাষ্ট্র বলার অধিকার হারাল। যদিও ঢাকার তরফে সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। এখন দেখার ইমরান ও হাসিনার এই ফোনালাপের পরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনও বদল আসে কিনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here