দেশের সময়ওযেবডেস্কঃ পুরুষশাসিত সমাজের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ হানলেন নির্বাসিত বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন । দেশের ‘সুশীল সমাজ’ মূলত পুরুষ ও অর্থবান ধনী পুরুষদের ক্ষমতায়নকেই কায়েম করে চলেছে বলেও মন্তব্য করলেন লেখিকা । গতকাল মাদককাণ্ডে বাংলাদেশী নায়িকা পরীমনি আটক ও তার আগে আরও দুই বাংলাদেশী মডেলের গ্রেফতারির পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশে নারীদের অবস্থান নিয়ে জোরালো সওয়াল করলেন ‘লজ্জা’র লেখিকা। বুধবার রাতে একের পর এক পোস্টে জ্বলে উঠল তসলিমার ফেসবুক পেজ।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2440960516048392&id=100004034030498
একটি ফেসবুক পোস্টে তসলিমার যা লিখেছেন তার মূল আক্রমণ সরাসরি বাংলাদেশের পুরুষশাসিত সামাজিক পরিকাঠামো। তসলিমার কটাক্ষ, সমাজ পুরুষশাসিত। আর সেই সকল নিয়মের উপরে ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে যাবতীয় সামাজিক নিয়ম। একাধিক ধর্ম থাকলেও সর্বত্রই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে পুরুষদের। সেই পথে হেঁটে ক্রমশ অবক্ষয়ের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। এমনই দাবি করলেন সে দেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
তাঁর পোস্টে তসলিমা দাবি করেন, বাংলাদেশে প্রগতিশীল মেয়েদের ‘বেশ্যা’ বলে গণ্য করা হয়। এটাই নাকি বাংলাদেশের সংজ্ঞা। নিজের এই বক্তব্যের ভিত্তিতে যুক্তিও দিয়েছেন তিনি। নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে তসলিমা লিখেছেন, “বাংলাদেশের সংজ্ঞা। পুরুষেরা লোভ করলে? –অ্যামবিশাস। মেয়েরা লোভ করলে?–বেশ্যা। পুরুষেরা মদ খেলে? –স্মার্ট। মেয়েরা মদ খেলে? –বেশ্যা। পুরুষেরা নাচলে?–কালচার্ড। মেয়েরা নাচলে?– বেশ্যা। পুরুষেরা ক্লাবে গেলে? — রিচ। মেয়েরা ক্লাবে গেলে?– বেশ্যা।”
বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুকে এই পোস্ট করেন তসলিমা নাসরিন। এর আগে এদিন দুপুরের দিকে আরও একটি পোস্ট করেন তিনি। যেখানে তিনি লেখেন, “বাংলাদেশের সুশীল সমাজ প্রায়ই এক একটি মেয়ের বিরুদ্ধে উন্মাদ হয়ে ওঠে। মেয়েগুলো সাধারণত ধনী এবং দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের শিকার।
চতুর ব্যবসায়ীরা এই মেয়েদের ব্যবহার করে তাদের অবৈধ ব্যবসার কাজে, এই মেয়েদের হোটেলের বারে গিয়ে মদ খেতে শেখায়, ক্লাবে গিয়ে নাচতে শেখায়। এই মেয়েদের তারা তাদের হাতের পুতুল বানায়। এদের এক্সপ্লয়েট করাটা তাদের জন্য সহজ। কারণ মেয়েগুলো নিতান্তই নিরীহ। হয়তো গরিব পরিবারের মেয়ে, শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব একটা নেই, হয়তো হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছে, ডিভোর্সি, পায়ের তলায় মাটি চাইছে। শিকারী পুরুষগুলোর পাতা ফাঁদে পড়ে যায় এরা, অথবা পড়তে এদের বাধ্য করা হয়। সুশীল সমাজ ধনী পুরুষদের বড় সমীহ করে চলে। বদনাম করার জন্য বেছে নেয় ওই নিরীহ মেয়েদের।”
চিরাচরিত সামাজিক রীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব হতে দেখা গিয়েছে তসলিমা নাসরিনকে। ধর্মীয় রীতির বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সরব হয়েছেন তিনি। যার কারণে মৌলবাদীদের রোষানলের মুখে পড়তে হয়েছে। ত্যাগ করতে হয়েছে নিজের জন্মভূমি। তবুও অবস্থানে অনড় থেকেছেন তসলিমা নাসরিন। নিজেকে নারীবাদী বলে দাবি করে লিখেছেন বিভিন্ন বই। সেই সঙ্গে নিজের মতো করে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তসলিমার এই দুই পোস্ট ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। নেটিজেনদের অনেকেই যেমন লেখিকার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন তেমনই বিরূপ মতও ভিড় জমিয়েছে তসলিমার কমেন্ট বক্সে। কিছু কিছুর উত্তরেও সপাটে নিজের মত জানিয়েছেন ব্যতিক্রমী লেখিকা।