দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ফের নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ খোদ কলকাতায়। পুলিশ সূত্রে খবর, গার্ডেন রিচ এলাকার একটি কমিউনিটি হলের মধ্যে জোর করে আটকে রাখা হয় ৬ বছরের এক কিশোরীকে। অভিযোগ সেখানেই তাকে ধর্ষণ করে বাচ্চাটিরই এক প্রতিবেশী। অভিযুক্ত সন্দেহে একজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটেছে গার্ডেন রিচ এলাকার একটি কমিউনিটি হলে। একটি বিল্ডিংয়ের দোতলায় ছিল ওই কমিউনিটি হল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জন্য ভাড়া দেওয়া হতো ওই তারাতলা রোডের ওই হল। তবে ঘটনার দিন কোনও অনুষ্ঠান না থাকায় ফাঁকাই ছিল ওই কমিউনিটি হল। কিশোরীর মায়ের অভিযোগ, সেদিন সন্ধ্যায় ফাঁকা হলের বাথরুমে মেয়েকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে তাঁদের এক প্রতিবেশী। বছর ১৯-এর এক যুবককে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
গার্ডেন রিচ থানার এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন পকসো আইনে ধৃত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এইসবের পাশাপাশি কিশোরীর মেডিক্যাল টেস্টও করা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ। কিশোরীর মেডিক্যাল টেস্টের রিপোর্ট হাতে পেলে বাকি তদন্ত নিজের পথেই এগোবে বলে জানিয়েছে গার্ডেন রিচ থানা।
উন্নাও:
কাকভোরে খবর এসেছিল, পুলিশি এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে হায়দরাবাদে তরুণীকে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারায় অভিযুক্ত চার যুবক। রীতিমতো আনন্দের বন্যা বয়ে যায় দেশের একটা বড় অংশে। বহু মানুষের মনে হয়, ‘পুলিশি ব্যবস্থা’র উপর নতুন করে আশা ফিরে এসেছে জনমানসে। অন্যায় করলে পার পাওয়া যাবে না– এটা যেন নতুন করে বিশ্বাস করতে শুরু করে সকলে।
কেউ কেউ বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, সে প্রশ্ন ধুয়ে যায় আমজনতার সাবাশির মুখে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই, মধ্যরাতে খবর এল, উন্নাওয়ের দগ্ধ ধর্ষিতা তরুণী মারা গেছেন। সেই তরুণী, যিনি গণধর্ষিত হয়ে বিচার চাওয়ার আশায় আদালতের পথে পা বাড়িয়েছিলেন, কিন্তু বিচার শুরুর আগেই জামিনমুক্ত ধর্ষকেরা আগুন লাগিয়ে দেয় তার গায়ে।
উন্নাওয়ের মৃত্যুর খবর আসার সঙ্গে সঙ্গেই যেন এ দিন ফের ধাক্কা খেল পুলিশি ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস! আরও এক বার প্রকট হল দেশের সবথেকে বড় রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতা, পুলিশের ঢিলেমির। এক জন ধর্ষিতা তরুণী, যিনি নিজের বিচার পাওয়ার জন্য আইনি পথে লড়াই করছেন, তাঁকে পুড়ে মরতে হল ধর্ষকদের হাতে!
বৃহস্পতিবার ভোরে দগ্ধ অবস্থায় লখনউয়ের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শারীরিক পরিস্থিতি ক্রমে খারাপ হওয়ায় সফদরজং হাসপাতালে তাঁকে উড়িয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানেই ডাক্তার শালাব কুমারের পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। নির্দিষ্ট একটি আইসিইউ তৈরি করা হয়েছিল তাঁর জন্য। সফদরজং হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান শালাব কুমার জানিয়েছেন, তরুণীর ক্ষত দ্রুত বাড়ছিল। শুরু থেকেই তাঁর অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। শুক্রবার রাত ১১টা ১০ মিনিট নাগাদ প্রবল যন্ত্রণায় হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। তরুণীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে এই তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল শুভম এবং শিভম দ্বিবেদী নামের দুই যুবকের বিরুদ্ধে। এলাকায় প্রভাবশালী দ্বিবেদী পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বারণ করেছিলেন সকলে। কিন্তু বছর তেইশের মেয়েটি নাছোড় ছিলেন। পুলিশে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নানা টালবাহানার পরে সে অভিযোগ দায়ের হতে গড়িয়ে গিয়েছিল ২০১৯ সালের মার্চ মাস। অভিযোগের পরে গ্রেফতারও হয়েছিল অভিযুক্তরা।
শেষমেশ শুনানির দিন নির্ধারিত হয়েছিল, গত পরশু। ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ। অর্থাৎ গণধর্ষিত হওয়ার ঠিক একটা বছর পর। কিন্তু তত দিনে জামিন হয়ে গিয়েছে অভিযুক্তদের। তরুণী ভেবেছিলেন, দেরিতে হলেও বিচার পাবেন তিনি। আস্থা রেখেছিলেন আদালতের উপর। তাই বৃহস্পতিবার ভোর চারটের সময়ে মা-বাবার সঙ্গে তিনি রায়বরেলি যাচ্ছিলেন, ধর্ষণ মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকতে।
কিন্তু লড়াকু তরুণী তখনও ভাবতে পারেননি, কী অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। জামিনে মুক্ত অভিযুক্তরা রেল স্টেশনে এসে নির্জন ধানখেতে টেনে নিয়ে যায় তরুণীকে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় শরীরে! অভিযুক্ত শুভম ও শিবমের সঙ্গে ছিল শুভমের বাবা রাম কিশোর ও তাদের দুই আত্মীয় হরিশঙ্কর এবং উমেশ বাজপেয়ী। এই পাঁচ জনের নামই পুলিশকে জানিয়েছেন তরুণী।
জলন্ত অবস্থায় এক কিলোমিটার ছুটে গিয়ে লোকালয়ে পৌঁছে স্থানীয় মানুষের সাহায্যে নিজেই পুলিশে খবর দেন তিনি। পুলিশ এসে উদ্ধার করে লখনউয়ের হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁকে। ততক্ষণে শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে তাঁর। শুক্রবার রাতে অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে, দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে উড়িয়ে আনা হয় তাঁকে। শনিবার রাতে খবর এল হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
এক জন ধর্ষিতা, বিচার প্রার্থী, পুলিশের কাছ থেকে যাঁর বহু আগে থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার কথা ছিল, তাঁর জীবন চলে গেল। যাদের সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ার কথা ছিল, তাদেরই হাতে তাঁকে খুন হয়ে যেত হল প্রকাশ্যে! গোটা দেশের এনকাউন্টার-পরবর্তী উল্লাস যেন থমকে গিয়েছে ঘটনার এই বীভৎসতায়। সকালে হায়দরাবাদ কাণ্ডের এনকাউন্টার যতটা স্বস্তি দিয়েছিল, এই মৃত্যু যেন ততটাই বাড়াল অস্বস্তি। আবারও প্রশ্ন উঠে গেল, এ কোন পুলিশি ব্যবস্থায় রয়েছে দেশবাসী! মেয়েদের নিরাপত্তা কতটা!
ধর্ষিতা তরুণীর নারকীয় মৃত্যু কিন্তু মনে করিয়ে দিচ্ছে এই উন্নাওয়েরই আর এক ধর্ষিতার কথা, যিনি ধর্ষণের বিচার চাওয়ার জন্য লড়াই করতে গিয়ে, ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে সদ্য পার করেছেন মৃত্যুভয়। যিনি ধর্ষিতা হওয়ার পরে আইনি লড়াইয়ে নামতে গিয়ে হারিয়েছেন নিজের বাবা, কাকিমা, বোনকে।
বছর দুয়েক আগে নাবালিকা মেয়েটিকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারিণীর দাবি, ২০১৭ সালের জুন মাসের চার তারিখে একটি চাকরির জন্য স্থানীয় এক মহিলার সঙ্গে উন্নাওয়ে ওই বিধায়কের বাড়িতে গেলে ধর্ষিত হন তিনি। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর।
তরুণীর পরিবার অভিযোগ করে, ১১ জুন ফের গ্রামের দুই যুবক ওই কিশোরীকে ফের অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে সেঙ্গারের ঘনিষ্ঠরা। ২০ জুন অভিযোগ দায়ের হলে, কিশোরীর বয়ানের ভিত্তিতে শুভম সিং, নরেশ তিওয়ারি এবং ব্রিজেশ যাদব নামে তিন জনকে গণধর্ষণ ও পকসো আইনে গ্রেফতার করা হয়। পরে জানা যায়, চার তারিখে অভিযুক্ত শুভম সিংয়ের মা শশী সিংই কিশোরীকে সেঙ্গারের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন সব জেনেশুনে।
তার পরে বহুবার সেঙ্গারের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ সে অভিযোগ নেয়নি বলে দাবি তাঁর পরিবারের। শেষমেশ অভিযোগ নিলেও, অগ্রগতি হয়নি তদন্তের।
পরিবারের দাবি, ফের অভিযোগ করতে গেলে, উল্টে কুলদীপ সেঙ্গারের দায়ের করা মিথ্যে এফআইআরের ভিত্তিতে তরুণীর বাবাকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির অস্ত্র আইনে ভুয়ো অভিযোগ আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ পরিবারের। ৩ এপ্রিল তাঁকে গ্রেফতার করে বন্দি করা হয় উন্নাও জেলে। অভিযোগ, সেখানে লাগাতার অত্যাচার চলতে থাকে তাঁর উপর! বিচার পাওয়া দূরের কথা, বিচার চাওয়ার অপরাধেই যেন মার খেতে হল ধর্ষিতার বাবাকে!
কোনও ভাবেই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পেরে, প্রায় এক বছর পরে, ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল নিগৃহীতা কিশোরী ও তার মা মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগীর বাড়িতে গিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তখনই জানাজানি হয় ঘটনাটি।
কাকতালীয় ভাবে পরের দিনেই খবর মেলে, উন্নাও জেলের মধ্যেই মারা গিয়েছেন ধর্ষিতা কিশোরীর বাবা! ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তাঁর শরীর জুড়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলেও, মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয় সেপ্টিসেমিয়া অথবা রক্তে বিষক্রিয়া।
বিনীত, বাউয়া, শৈলু এবং সোনু নামের চার জনের বিরুদ্ধে ধর্ষিতার বাবাকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করা হয়। চার জনই সেঙ্গারের ঘোষিত সমর্থক বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে এ মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেঙ্গারের বিরুদ্ধে পকসো আইনে ধর্ষণ, অপহরণ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অস্ত্র আইন লঙ্ঘন-সহ একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে চার্জ গঠন করা হয় দ্রুত।
শেষমেশ ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল গ্রেফতার হয় উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার। সঙ্গে গ্রেফতার হয় অভিযুক্ত আরও চার। তিহাড় জেলে ঠাঁই হয় তাদের।
এখানেই শেষ নয়। তরুণীর পরিবার অভিযোগ তোলে, জেলে থেকেও নানা ভাবে তাদের গতিবিধির খবর পাচ্ছে সেঙ্গার। ক্ষতি করারও চেষ্টা করছে, দিচ্ছে হুমকি। তাঁদের জন্য নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয় পুলিশের তরফে।
এই অবস্থায়, মাস চারেক পর, ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই রায়বরেলি যাওয়ার পথে, গুরুবক্সগঞ্জের সড়কের উপর মারাত্মক দুর্ঘটনার মুখে পড়েন ধর্ষিতা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর কাকিমা, বোন ও আইনজীবী। ধর্ষিতা এবং তাঁর আইনজীবী আশঙ্কাজনক অবস্থায় লখনউয়ের হাসপাতালে ভর্তি হলেও, ঘটনাস্থলেই মারা যান তাঁর কাকিমা এবং বোন।
পরে জানা যায়, এই দুর্ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক আগেই, ১২ জুলাই উন্নাওয়ের ধর্ষিতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে নিজের প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও সে চিঠি সে সময়ে পাননি বিচারপতি। দুর্ঘটনার পরে সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে চিঠির বিষয়ে জেনে পদক্ষেপ করেন তিনি। মামলাটি উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেন।
তবে ধর্ষিতার আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, তা প্রমাণ হয় এই পথ দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হতেই। জানা যায়, যে ট্রাকটি ধর্ষিতার গাড়িকে ধাক্কা মেরেছিল, সেটি রাস্তার উল্টো দিক থেকে আসছিল এবং ট্রাকের নম্বর প্লেটের ওপরে কালো রং লাগানো ছিল। ঘটনাচক্রে, ধর্ষিতার ও পরিবারের জন্য যে রক্ষীদের দেওয়া হয়েছিল, তাঁরাও এ দিন ছিলেন না। রহস্য বেড়ে ওঠে শিগ্গিরি।
এই অবস্থায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে, অগাস্ট মাসের ৯ তারিখে দিল্লির এইমসে উড়িয়ে আনা হয় ধর্ষিতা তরুণীকে। মারাত্মক রক্ত সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। জীবন সংশয়ের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় সেই দুর্ঘটনাতেই আহত ধর্ষিতার আইনজীবী মহেন্দ্র সিংহকেও। মেডিক্যাল টিম গড়া হয় তাঁদের জন্য।
১ সেপ্টেম্বর ধর্ষিতার বিপদ কেটেছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
কিন্তু বিচার এখনও সেই তিমিরেই। অভিযুক্ত কুলদীপ সিং বা তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের কোনও শাস্তির কথা এখনও শোনাতে পারেনি কেউ। বরং ধর্ষিতা হওয়ার অপরাধে বাবা, বোন, কাকিমাকে চিরতরে হারাতে হয়েছে তরুণীকে। ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে কোনও রকমে বেঁচে এতগুলো দিন কাটাতে হচ্ছে হাসপাতালে। এমন একটা পরিস্থিতিতে এই মামলা দাঁড়িয়ে, যেখানে অভিযোগের পরে অভিযোগ জমেছে, অপরাধের পরে অপরাধ ঘটেছে। যেখানে সর্বপ্রথম ধর্ষণের মতো একটা মারাত্মক অভিযোগ উঠেছিল, সেখানে বিচারের বদলে ঘটেছে একের পর এক মৃত্যু।
এই অবস্থাতেই সেই একই শহর উন্নাওয়ে ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে পুড়ে মরে যেতে হল আর এক তরুণীকে!
তবে পুলিশি রেকর্ড থেকে জানা যায়, লখনউ থেকে ৬৩ কিলোমিটার এবং কানপুর থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরের এই উন্নাও শহরে এই দু’টি ঘটনা নেহাৎ বিচ্ছিন্ন নয়। বরং এ শহরকে উত্তরপ্রদেশের ধর্ষণ-রাজধানী বলাই যায়। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসে শুধু এই একটি শহর থেকে মহিলাদের যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ১৮৫টি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা পলাতক, অথবা গ্রেফতার হওয়ার পরেও জামিনে মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নাও পুলিশ পুরোপুরি ভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা পরিচালিত। ফলে পুলিশের এই মনোভাব রাজনৈতিক দল ঘেঁষা অপরাধীদের উৎসাহ বাড়াচ্ছে অবাধে। একের পর এক অপরাধ করে রেহাই পেয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন হচ্ছে রোজ। ফলে জঘন্য থেকে জঘন্য অপরাধ করতে দু’বার ভাবছে না কেউ।
স্থানীয়দের অভিযোগ যে মিথ্যে নয়, তার সর্বোত্তম প্রমাণ প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের সাথে জড়িত উন্নাও ধর্ষণ মামলাটি। দুর্ঘটনার মুখ থেকে ফিরে হাসপাতালে শয্যাশায়ী ধর্ষিতা। আর এক ঘটনায় তো ধর্ষিতাকে পুড়ে মরতে হয়েছে।
হায়দরাবাদ-কাণ্ড তো এক ভাবে শেষ হল, কিন্তু উন্নাও-কাণ্ডে কি মিলবে বিচার? সাজা পাবে মৃত ও আহত দুই তরুণীর ধর্ষকেরা? ধর্ষণ-রাজধানী তকমা ঘুচিয়ে কি নতুন কোনও আশা দেখাতে পারবে উন্নাও? আপাতত সকলের প্রশ্ন এটাই।