দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ড নিয়ে যখন জলঘোলা চলছে তখন আসানসোলের তৃণমূলনেত্রী তথা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তাবাসুম আরার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে শিল্পাঞ্চলে। সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ও সরব হয়েছে তাবাসুম আরার কাণ্ড নিয়ে।
তিনি আসানসোল পুরনিগমের বিদায়ী ডেপুটি মেয়র৷ বর্তমানে প্রশাসক বোর্ডের সদস্য৷ কখনও চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন, এমন ঘটনা কারও জানা নেই৷ কিন্তু তিনিই কি না সটান একজনকে করোনার টিকা দিয়ে দিলেন!
এমন কাণ্ড ঘটিয়েই বিতর্কে আসানসোলের পুরবোর্ডের সদস্য তবসুম আরা৷ প্রশিক্ষণ ছাড়াই কাউকে কীভাবে তিনি কাউকে করোনার টিকার ইঞ্জেকশন দিয়ে দিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকরাও৷ বিতর্কের মুখে তবসুম আরার অবশ্য দাবি, তিনি ইঞ্জেকশন দেননি৷ করোনার টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনামূলক প্রচারের জন্য শুধুমাত্র এক টিকা গ্রহিতার হাতে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ ধরেছিলেন৷ যদিও ঘটনার ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, এক মহিলাকে ইঞ্জেকশন দিচ্ছেন আসানসোলের ওই তৃণমূল নেত্রী৷
এ দিন আসানসোলের নিয়ামতপুরে একটি টিকাদান কর্মসূচির আয়োজন করে আসানসোল পুরনিগম৷ সেখানেই আমন্ত্রিত ছিলেন তবসুম আরা৷ ওই অনুষ্ঠানে গিয়েই অতি উৎসাহে সিরিঞ্জ হাতে নিয়ে একজনকে ভ্যাকসিনও দিয়ে দেন তিনি৷ সেই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় বিতর্ক৷
তবসুম আরা অবশ্য পরে বলেন, ‘আমি টিকা দিইনি৷ করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এত অপপ্রচার হচ্ছে তাই মানুষকে সচেতন করতেই সিরিঞ্জ হাতে ধরেছিলাম৷ আর স্কুলে পড়ার সময় আমি ইঞ্জেকশন দেওয়া প্রশিক্ষণও নিয়েছিলাম৷’ আসানসোল পুরনিগমের প্রশাসক বোর্ডের প্রধান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, এ ভাবে টিকা দিতে পারেন না তবসুম আরা৷ এই ঘটনা সামনে আসায় পুরনিগমের তীব্র সমালোচনা করেছেন কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার৷
আসানসোলের এই ঘটনা শুনে আঁতকে উঠছেন চিকিৎসকরাও৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, ‘এতদিন আমরা মানুষকে বলতাম ভ্যাকসিন নিয়ে ভয়, বিভ্রান্তি পরিহার করুন৷ এই ঘটনার পর এবার হয়তো বলতে হবে যে ভ্যাকসিন নিয়ে অতি উৎসাহ পরিহার করুন৷
সব জনপ্রতিনিধিদেরই বলব, দয়া করে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না৷’ একই সুরে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক জয়দীপ ঘোষও৷ তিনি বলেন, ‘সবকিছুর জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন৷ একজন স্বাস্থ্যকর্মী জানেন কীভাবে ইঞ্জেকশন দিতে হবে, কখন সূঁচ ফোটাতে হবে, কখন বের করে নিতে হবে৷ এ ভাবে ছেলেমানুষের মতো প্রশিক্ষণ ছাড়াই টিকা দিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে৷’
এর আগে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে দেখা গিয়েছিল কোভিড পরীক্ষার জন্য নিজেদের লালারসের নমুনা নিজেরাই নিচ্ছেন উপসর্গ থাকা রোগীরা। এদিনও এই ঘটনায় অন্য ঝুঁকির কথা বলছেন অনেকে। বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, ‘নিজেদের প্রশাসকের উপরে তৃণমূল সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।’ তিনি এও বলেছেন, ‘তাবাসুম আরার এই কাণ্ডে অনেকের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গিয়েছে।
তাঁর রাজনৈতিক রঙ কি তাঁকে শাস্তির সামনে বর্ম হয়ে দাঁড়াবে?’
তবে এই ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। মেলেনি পুর প্রশাসক এবং জেলা প্রশাসনের কারো বক্তব্য। যাকে তাবাসুম ইনজেকশন দিয়েছেন তাঁর কোনো সমস্যার কথাও জানা যায়নি।