দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ কৃষক আন্দোলনের শুরু থেকেই এই পাঞ্জাবি অভিনেতার মুখ বারে বারেই সামনে এসেছে। প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে কৃষকদের ট্র্যাক্টর র্যালি ঘিরে বেনজির হিংসা ও বিশৃঙ্খলায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। পাঞ্জাবি গায়ক-অভিনেতা এবং বর্তমানে কৃষক আন্দোলনের মুখ দীপ সিধুর বিরুদ্ধে এফআইআরও দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। কিন্তু কোথায় দীপ সিধু? মঙ্গলবার প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনে তাঁকে বিক্ষোভের পুরোভাগেই দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বুধবার থেকেই কার্যত বেপাত্তা দীপ সিধু।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এখনও অবধি বিক্ষোভের যে কটা ভিডিও সামনে এসছে, তার মধ্যে দুটিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশের তাড়া খেয়ে বাইকে চেপে পালাচ্ছেন এই অভিনেতা। কিন্তু কোথায় গেলেন তিনি তার হদিশ এখনও মেলেনি।
গত ছ’মাস ধরে দীপ সিধুর নামের চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কৃষি বিলের বিরোধিতায় নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বারে বারেই গলা চড়িয়েছেন এই পাঞ্জাবি গায়ক তথা অভিনেতা। বিজেপি হেভিওয়েট নেতামন্ত্রীদের সঙ্গে দীপ সিধুর যোগসাজশের খবরও সামনে এসেছে। প্রজাতন্ত্র দিবসের ঘটনার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দীপ সিধুর একের পর ছবি পোস্ট হতে থাকে। সেখানে দেখা গিয়েছে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীর প্রচার সঙ্গী হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন সিধু। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও ছবি সামনে এসেছে দীপ সিধুর। এরপরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
মঙ্গলবারের আন্দোলনকে হিংসাত্মক চেহারা দেওয়ার পিছনে যে দীপ সিন্ধুর ইন্ধন ছিল সে অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। কৃষক সংগঠনের অনেক নেতারই অভিযোগ, আন্দোলন যে পথে চালিত করার কথা ছিল তা হয়নি। বরং আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে হিংসার পথে আন্দোলনে মোড় ঘুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে কিছু লোকের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে।
দীপ সিধু শেষবার সামনে এসেছিলেন মঙ্গলবার তথা প্রজাতন্ত্র দিবসের সন্ধ্যায়।
নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে সিধু বলেছিলেন, হাজার হাজার কৃষককে উস্কানি দেওয়া কি একজনের পক্ষে সম্ভব? তাঁর বক্তব্য ছিল, তিনি শুধু কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। লালকেল্লা চত্বরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখানোর কোনও অভিপ্রায় নাকি ছিল না তাঁর। কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষেই সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর লালকেল্লার মাথায় পতাকা টাঙানোর প্রসঙ্গে দীব সিধু বলেন, জাতীয় পতাকার নীচেই কিষাণ সংগঠনের পতাকা ওড়ানো হয়। এতে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়নি।
কৃষি বিল প্রত্যাহারের দাবি শুরু থেকেই সরব ছিলেন দীপ সিধু। গত বছর ডিসেম্বরে ফেসবুক লাইভ করে সিধু বলেছিলেন, কৃষক আন্দোলনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন কিছু বামপন্থী সংগঠন। যদিও পরে নিজের এই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন সিধু। কৃষক নেতাদের একাংশ লালকেল্লার ঘটনার জন্য দীপ সিধুকে দায়ী করেছেন। এক কৃষক নেতা বলেন, “দীপ সিধু সরকারের লোক। এই ষড়যন্ত্রটা আমাদের বোঝা দরকার।” পরে তিনি বলেন, “দীপ সিধু সর্দার নয় গদ্দার।” দীপ নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)-এর সদস্য বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দিল্লি পুলিশের প্রধান এস এন শ্রীবাস্তব বলেছেন, দেশবিরোধী শক্তি কৃষকদের উস্কানি দিচ্ছে। তারা কৃষক মিছিলের সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠতে চায়। সংঘর্ষের ঘটনায় উস্কানি দেওয়া ও যুক্ত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যেই ২৫টি বেশি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০০ জনকে আটক ও অন্তত ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।