দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভারতের অন্যতম একটি জনপ্রিয় উৎসব হল মকরসংক্রান্তি উৎসব। এই দিন ভগবানের উপাসনার সঙ্গে সঙ্গে ভক্তরা ঘুড়ি ওড়ায়, বোনফায়ার করে, বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে উদযাপন করেন। বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব পৌষ পার্বণ বা মকর সংক্রান্তি। পৌষ মাসের শেষ দিন পালন করা হয়। তবে মকরসংক্রান্তি সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার খিচুড়ি। কিন্তু কেন এই খিচুড়ি খাওয়া হয় তার পেছনে রয়েছে কতগুলো পৌরাণিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য। শুধু তাই নয়, এই খিচুড়ির মধ্যে রয়েছ প্রচুর পরিমাণে খাদ্যগুণ।
প্রচলিত আছে যে খিচুড়ি হল হিন্দু দেবতা গোরক্ষনাথের প্রিয় খাবার। এই গোরক্ষনাথ হলেন একজন যোগী মানুষ যিনি ভারতে নাথ হিন্দু সন্ন্যাস আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। উত্তরপ্রদেশে গোরক্ষনাথের মূর্তি রয়েছে, তাঁর সম্মানার্থে তৈরি হয়েছে মন্দিরও। মকরসংক্রান্তির দিন তাঁর জন্যই বিভিন্ন ফলের সঙ্গে প্রসাদ হিসেবে ডাল, চাল ও হলুদ দিয়ে বানানো হয় খিচুড়ি।
মকরসংক্রান্তির দিন সারা ভারতেই পালিত হয় উৎসব। প্রচুর শাকসবজি, নতুন ধানের চাল ও মুসুরডাল দিয়ে তৈরি হয় এই খিচুড়ি, যা আট থেকে আশি সকলের কাছেই খুবই জনপ্রিয়।
খিচুড়ি যে শুধু একই রকমভাবে খেতে হবে এরকম না, খিচুড়ি নিয়ে এক্সপেরিমেন্টও করতে পারেন। বিভিন্ন রকেমর ডাল দিয়ে বানাতে পারেন খিচুড়ি। একে আরও বেশি সুস্বাদু করে তুলতে চাইলে দিতে পারেন ঘি। সাজানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন বাদাম ভাজা, নারকেল ভাজাও।
একটা পরিপূর্ণ খাবার হল খিচুড়ি, যা খেলে অনেকক্ষণ পেট ভর্তি থাকে। সেই সঙ্গে এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিও। এটা যেমন হজম করা সহজ তেমন আমাদের বিপাকীয় ক্রিয়াকে ঠিক রাখে। অনেকেই এই কারণে একে সুপারফুড বলে। এটা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে সহায়তা করে। খিচুড়ি শরীরে শর্করা, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম সরবরাহ করে।
এই উৎসবকে ঘিরে লোককথা শোনা যায়। মকর সংক্রান্তিতে মহাভারতে পিতামহ ভীষ্ম শরশয্যা ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন।আবার শোনা যায় সূর্য এদিন নিজের ছেলে মকর রাশির অধিপতি এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন।
তাছাড়াও শোনা যায় এই বিশেষ দিনে দেবতাদের সঙ্গে অসুরের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। অসুরদের বধ করে তাদের কাটা মুন্ডু পুঁতে দেওয়া হয়েছিল মন্দিরা পর্বতে। সেই জন্যেই অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হয় এইদিনে, বলেই বিশ্বাস করেন সকলে।
সংক্রান্তি’ কথাটির অর্থ গমন করা। নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশ করাকে সংক্রান্তি বলা হয়। শুভ কাজগুলি এদিন থেকেই শুরু হয়।
নতুন ফসল তোলার উৎসবই মকর সংক্রান্তি। এই দিনে দক্ষিণায়ন শেষে সূর্যের উত্তরায়ণ পালিত হয়।
সংক্রান্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালিদের বেশ কয়েকটি নিয়মাচার। এই দিন দূরে কোথাও যাত্রা করা ঠিক না এবং অন্য কোথাও গেলেও রাতে বাড়ি ফিরে আসা উচিত।
মকর সংক্রান্তি নতুন ফসলের মরসুমের প্রথম দিন ও শীতকালের শেষ দিন বলে মনে করা হয়। সংক্রান্তির আগে বাঙালিরা ঘরবাড়ি, রান্নার বাসন পরিষ্কার করেন এবং অশুভ শক্তিকে বিদিয় জানান।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরদ্বীপে প্রত্যেক বছর আয়োজন হয় গঙ্গাসাগর মেলার। কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে পুণ্যস্নান ও বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়। গঙ্গায় পবিত্র স্থান করতে সেখানে দূর দূর থেকে আসেন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী।
পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয়। বীরভূমের কেন্দুলি গ্রামে এ দিনটি জয়দেব মেলা হয়। বাউল গান এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ।
এছাড়াও এই দিনেই টুসু উৎসব বা মকর পরবে মেতে ওঠেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও সংলগ্ন এলাকার মানুষ। নাচে গানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন তাঁরা। টুসু বা মকর উপলক্ষ্যে এলাকায় একাধিক মেলাও বসে। যার অন্যতম পোরকুলের মেলা।
পশ্চিমবাংলায় এই বিশেষ দিনটিকে পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষ পার্বণ নামে পরিচিত। গ্ৰাম বাংলার বিভিন্ন বাড়িতে আলপনা দেওয়া হয়।
তাছাড়াও ঘরে ঘরে পিঠে- পুলি-পায়েস তৈরি করে নতুন মাসকে স্বাগত জানানো হয়। সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই চলে তার প্রস্তুতি।
এই পৌষ সংক্রান্তিতে মূলত চালের গুড়ো, ময়দা, নারকেল, দুধ, গুড় দিয়ে বিভিন্ন পিঠে তৈরি হয়। তার সঙ্গে তিল, কদমা এইসব খাওয়ার রীতিও রয়েছে।
গ্ৰেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হিন্দুদের প্রধান উৎসবগুলির মধ্যে মকর সংক্রান্তি বছরের সর্বপ্রথম উৎসব। এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হয়।
অঞ্চল ও জায়গা ভেদে মকর সংক্রান্তির নিয়মকানুন হয়তো আলাদা কিন্তু এর মাহাত্ম্য হিন্দুদের কাছে সব জায়গায় এক। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্যে মানুষ এক জায়গায় একত্রিত হয় এই সময়ে।
ধনু থেকে মকরে রবির অর্থাৎ সূর্যের প্রবেশ ঘিরে এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপিত হয় হিন্দু মতে। বেশিরভাগ বছর মকর সংক্রান্তির দিন অপরিবর্তিত থাকে। ২০২১ সালে মকর সংক্রান্তি পড়েছে ১৪ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার।
একেবারে দোড় গোড়ায় মকর সংক্রান্তি । গ্ৰেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হিন্দুদের প্রধান উৎসবগুলির মধ্যে মকর সংক্রান্তি বছরের সর্বপ্রথম উৎসব।
এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হয়। মকর সংক্রান্তি নতুন ফসলের মরসুমের প্রথম দিন ও শীতকালের শেষ দিন বলে মনে করা হয়। যদিও অঞ্চলভেদে একেক জায়গায় একেক রকম ভাবে এই বিশেষ দিনটি পালন করার রীতি আছে। যার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নাম।
পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবাংলায় এই বিশেষ দিনটি পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষ পার্বণ নামে পরিচিত। এই দিনে দক্ষিণায়ন শেষে সূর্যের উত্তরায়ণ পালিত হয়। গ্ৰাম বাংলার বিভিন্ন বাড়িতে আলপনা দেওয়া হয়।
তাছাড়াও ঘরে ঘরে পিঠে পুলি পায়েস তৈরি করে নতুন মাসকে স্বাগত জানানো হয়। এই পৌষ সংক্রান্তিতে মূলত চালের গুড়ো, ময়দা, নারকেল, দুধ, গুড় দিয়ে বিভিন্ন পিঠে তৈরি হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরে প্রত্যেক বছর আয়োজন হয় গঙ্গাসাগর মেলার। গঙ্গায় পবিত্র স্থান করতে সেখানে দূর দূর থেকে আসেন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী।
উত্তরপ্রদেশ
মকর সংক্রান্তিতে উত্তরপ্রদেশকে দান করার উৎসব বলা হয় এই বিশেষ দিনে। গঙ্গায় পুণ্যস্থান করেন পুণ্যার্থীরা। একমাসব্যাপী মাঘ মেলা শুরু হয় এদিন থেকে।
হরিয়ানা-পঞ্জাব
এ দিনটি লোহরি বলে পালিত হয়। আগুন জ্বালিয়ে পুজো করা হয় এবং সেই আগুন ঘিরে মহিলারা ঘুরে ঘুরে ধর্মীয় গান করেন। মুড়ি, চিড়া এবং মিষ্টি দেওয়া হয় সেই আগুনে।
গুজরাট
মকর সংক্রান্তিতে গুজরাটে ঘুড়ি ওড়ানোর রীতি রয়েছে। আহমেদাবাদে উত্তরায়ণ নামে পালিত হয় এই উৎসব। বাড়ির ছোটোদের উপহার দেওয়া শুভ বলে মানা হয় এই সময়।
মহারাষ্ট্র
এরাজ্যে তিনদিন ধরে পালিত হয় মকর সংক্রান্তি। একে অপরের বাড়িতে রঙ-বেরঙের হালুয়া, পুরান পোলি, তিল-গুল লাড্ডু নিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিবাহিত মহিলারা অতিথিদের নিমন্ত্রণ করে হলদি- কুঙ্কু উদযাপন করেন।
অসম
অসমের গুয়াহাটিতে মকর সংক্রান্তি পালিত হয় মাঘ বিহু কিংবা ভোগালী বিহু নামে। এই সময়কাল অর্থাৎ পরের মাস মাঘকে তাঁরা চাষাবাদের ঋতু বলে মনে করেন।
তামিলনাড়ু
প্রায় চারদিন ধরে পোঙ্গল পালিত হয় তামিলনাড়ুতে এই সময়। উৎসবের প্রথম দিনে দেবরাজ ইন্দ্রের পুজো করা হয়। ইন্দ্র, মেঘ ও বৃষ্টির প্রতীক। চাষের জমিতে যাতে ফসল ভাল ওঠে সেই প্রার্থণায় হয় এই পুজো।
অঞ্চল ও জায়গা ভেদে মকর সংক্রান্তির নিয়মকানুন হয়তো আলাদা কিন্তু এর মাহাত্ম্য হিন্দুদের কাছে সব জায়গায় এক। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্যে মানুষ এক জায়গায় একত্রিত হয় এই সময়ে। এটি মকর সংক্রান্তির গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব।
বেশিরভাগ বছর মকর সংক্রান্তির দিন অপরিবর্তিত থাকে। ২০২১ সালে মকর সংক্রান্তি পড়েছে ১৪ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার
ধনু থেকে মকরে রবির অর্থাৎ সূর্যের প্রবেশ ঘিরে এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপিত হয় হিন্দু মতে। সকাল ৮.৩০ থেকে বিকেল ৫.৪৬ মিনিট পর্যন্ত রয়েছে পুণ্য কাল। আর মহা পূণ্য কাল রয়েছে সকাল ৮.৩০ মিনিট থেকে ১০.১৫ মিনিট পর্যন্ত।